4:39 pm , May 20, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকী এবং একের পর এক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন এক নারী। ওই নেতার হাত থেকে রক্ষা পেতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জীবনের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের দাবি করেছেন তিনি। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ফারজানা ইয়াসমীন অনিমা নামের ওই নারী। তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ৩৭ নম্বর বকশীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগমের মেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারজানা ইয়াসমিন অনিমা বলেন, তার মা বকশীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২৪ সালের ২০ মার্চ তার মায়ের স্কুলে গিয়ে লাকুটিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আক্তার হোসেন বাবু এবং তৎকালীন বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য জসিম খান তাদের পছন্দমত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি করতে বলে।
কিন্তু বিষয়টি আইনসিদ্ধ না হওয়ায় তার মা প্রতিবাদ জানান। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতা আক্তার হোসেন বাবুসহ ৮-১০ জন ব্যক্তি আমার মায়ের ওপর হামলা করে। এসময় আমার ছোট বোন মাকে বাচাতে গেলে তার ওপরও হামলা করা হয়। খবর পেয়ে আমার ভাই অনিক স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে লাকুটিয়া বাজারে বসে বিএনপি নেতা জসিম খানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ তার পথরোধ করে। তাকে পার্শ্ববর্তী একটি গোডাউনে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে জসিম ও তার সহযোগিরা।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় একইদিন অর্থাৎ ২০ মার্চ বিমানবন্দর থানায় আমার মা ফেরদৌসী বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর ১৭/৫৭। এতে আসামি করা হয় কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আখতার হোসেন বাবু, যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম এবং বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন খানকে।
অপরদিকে সন্ত্রাসী হামলায় আমার মা, ছোট বোন এবং ভাই তিনদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর প্রায় তিন মাস অসুস্থ অবস্থায় বাসায় চিকিৎসা নেন তারা।
ফারজানা ইয়াসমিন অনিমা অভিযোগ করে বলেন, মামলা করার পর থেকে বাবু ও তার অনুসারীরা একাধিকবার আমার এবং আমাকে হুমকি ধামকি দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলতে পারিনি। ২০২৪ এর পাঁচ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও আমরা শান্তিতে নেই।
মামলার তিন নম্বর অভিযুক্ত, বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম খান আমাকে এবং আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, মামলা করায় আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারের দায়ের করা হত্যা চেষ্টা মামলায় আমার ভাই অনিক এবং ভগ্নিপতি মেহেদীকে আসামি করেছেন জসিম উদ্দিন।
সাংসদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম খানের শেল্টারে লাকুটিয়া এলাকার সকল আওয়ামী লীগের লোকেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি করে। তারা বিভিন্নভাবে তার মাকেসহ পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে নিজের এবং পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের দাবি জানান অনিমা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন খান। তিনি দাবি করেন, ঘটনার সময় বকশীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি’র সভাপতি ছিলেন। ওইসময় প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাত করেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে কমিটির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এজন্য প্রধান শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ঘটনা অনেক আগের। তখন এ নিয়ে কথা না বলে এখন কেন বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হলো। বোঝাই যায় বর্তমানে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমাকে ফাঁসাতে তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
তাছাড়া রাজনৈতিক মামলায় শিক্ষকের ছেলে এবং মেয়ে জামাইকে ফাঁসানো প্রসঙ্গে জসিম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মামলার আসামি অনিক চাঁদপাশা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং তার ভগ্নিপতি মেহেদী বাবুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য। এজন্য তাদের আসামি করা হতে পারে।