বজ্রপাত থেকে বাঁচতে রোপনকৃত তালগাছের অপমৃত্যু !! বজ্রপাত থেকে বাঁচতে রোপনকৃত তালগাছের অপমৃত্যু !! - ajkerparibartan.com
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে রোপনকৃত তালগাছের অপমৃত্যু !!

4:05 pm , May 19, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালে বজ্রপাত প্রতিরোধক তালগাছে বীজ ও চারা রোপন করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রক্ষা করা যাচ্ছে না। কৃষকরা বলছেন- এ গাছ রক্ষায় কোন তদারকি নেই। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে তদারকির জন্য কোন বরাদ্দ নেই। এমন দোটানায় রোপন করা তালবীজ ও চারা সবগুলোরই অপমৃত্যু ঘটেছে। কৃষি বিভাগ শতকরা ২ ভাগ তালগাছও রক্ষা করতে পারছে না। ঠেকানো যাচ্ছে না বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা। বছর কয়েক আগে বরিশালের চৌহতপুর, দিয়াপাড়া বারইজ্জার হাট পর্যন্ত গ্রামে ৪শ তালবিজ বপন করা হয়। সাথে ছিলো প্রায় ৭৫টি তাল চারা। সেখানে গিয়ে দেখা যায় গুল্ম বেষ্টিত মৃতপ্রায় ৬টি গাছ কোন রকমে টিকে আছে। বাকি সবই মরে গেছে। কৃষি বিভাগ বলছে এখন এসব স্থানে কিছু চারাগাছের অস্তিত্ব মিলেছে। পরিনত বীজ ও পরিচর্চার অভাবেই রোপন করা তাল বিজ ও চারার ৯৮ ভাগেরই মৃত্যু ঘটে পরক্ষনেই। আদর্শ কৃষক মো: জিয়াউদ্দীন বলেন, তিনবছর আগে আমার গ্রামের এক কিলোমিটার রাস্তায় ৪০০ তালবীজ লাগিয়েছিলাম। প্রথম অবস্থায় আমি নিজেই পরিচর্চা করায় কিছু গাছ টিকে ছিলো। পরে পরিচর্চা বন্ধ হওয়ায় লতা পাতায় গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। গাছ স্বাস করতেই পারেনা লতা পাতা গুল্মের জন্য। সরকার তালগাছ লাগাতে বলে কিন্তু কোন বরাদ্দ দেয়না পরিচর্চার জন্য। নিজের কাজ রেখে কেন আমরা তাল গাছের পরিচর্চা করবো।
একই অবস্থা চর আইচা গ্রামের। ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট এখানে ৩৭৫টি চারা ও বীজ লাগানো হলেও এখন এর একটিরও খবর নেই। চর করমজি, শোলনা ও মঙ্গলহাটা গ্রামের চিত্রও অনুরুপ। গ্রামবাসিদের দাবি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আর কেউ চারা বা বীজের খবর নেয়নি। করা হয়নি পরিচর্চা। ফলে কার্যত ভেস্তে গেছে বজ্রপাত ও মাটিক্ষয় বিরোধী কর্মসূচীর।
একাধিক গ্রামবাসী বলেন, এবারে তাল চারার যে ছবি আপনারা তুলেছেন তা সংরক্ষন করবেন, আগামীতে এসে এটুকুও পাবেন না। তালবীজ রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধনের সময় বেশ ঢাকঢোল পেটানো হয়। পরে তা রক্ষার কোন আয়োজন থাকে না। কৃষি বিভাগের কর্তারা তাদের চাকরি বাঁচাতে যা করার তা করে, আমাদের কোন উপকার হয় না। তাল গাছের জন্য যে বীজ দেয়া হয় তা অনেকটাই মানহীন। বেশিরভাগ বীজ চারা পর্যন্ত গড়াচ্ছে না। এর পরেও গজানো চারাগুলো জঙ্গলের চাপে মরে যায়। ভালো বীজ ও পরিচর্চা ছাড়া তালগাছ রক্ষা করা যাবে না।তালগাছ সংক্রান্ত দ্রুত নির্দেশনা পেয়ে গৃহস্থ থেকে তড়িঘড়ি বীজ সংগ্রহ করে তা রোপন করা হয়। এজন্য স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে। কিন্তু তাল গাছের ফল বিলম্বিত হওয়ায় কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ কারণেই টিকছেনা তালগাছ প্রচেষ্টা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, আমরা কৃষক পর্যায় ও নার্সারি থেকে তালবীজ সংগ্রহ করি। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি কিন্তু তালগাছে ফল আসতে প্রায় ১৫ বছরের মতো সময় লেগে যায়। এতো দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় কৃষকদের বুঝিয়েও কাজ হয় না। তারা তালচারা উপড়ে ফেলে অন্য গাছ লাগিয়ে দেয়।এর আগে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার তালবীজ রোপনের মাধ্যমে বজ্রপাত নিরোধক কার্যক্রম শুরু হয়। এবছরও রয়েছে অনুরুপ কর্মসূচী। বরিশাল জেলা প্রশাসনের আহবানে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও কিছু এনজিও এসব চারা ও বীজ রোপন করেছিলো। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মতে এ পর্যন্ত বরিশাল জেলায় প্রায় ২৫ হাজার তালবীজ ও চারা রোপন করা হলেও ফলাফল এসেছে হতাশাজনক। তাদের মতে সংগ্রহ করা বীজ রোপন করে কাজ হচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে হর্টিকালচারের মাধ্যমে তালগাছের চারা করে তা রোপনের ব্যবস্থা করা হলে ভালো ফলাফল মিলবে। তবে এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের কোন বিকল্প নেই।বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোসাম্মৎ মরিয়ম বলেন, গত ১০ বছরে এই জেলায় ২৪ হাজার ৯৬৭টি তালবীজ ও চারা রোপন করা হয়েছে। বজ্রপাত ঠেকাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে তালগাছ লাগানোর নির্দেশ ছিলো আমাদের উপর। আসলে যে প্রক্রিয়ায় আমরা বীজ তৈরী করি সেটা দিয়ে ফলাফল দৃশ্যমান অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে হর্টিকালচারের মাধ্যমে তালচারা উৎপাদন করে রোপন করা হলে এটা খুব বেশি কার্যকর হতো। বজ্রপাতে বেশি মারা যাচ্ছে কৃষক, তাই আমরাও চাই মাঠে ময়দানে তালগাছ থাকুক।
উল্লেখ্য গত তিনবছরে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১১ জন বজ্রপাতে মারা গেছে এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। হতাহতদের সবাই কৃষক বলে জানানো হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT