4:07 pm , May 18, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সড়ক বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের রাস্তার পাশের প্রায় ৬শ কোটি টাকা মূল্যের কয়েক জমি বছরের পর বছর অবৈধ দখলদারদের হাতেই রয়ে যাচ্ছে। একের পর এক উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও এগুলো দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। পুলিশ এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ি করছে। আর কর্তৃপক্ষ স্থায়ি উচ্ছেদের কৌশল নিয়ে ভাবছে। গত ১১ জানুয়ারি বরিশাল নগরির সাগরদি থেকে রুপাতলী পর্যন্ত রাস্তার পাশের তিন হাজার শতাংশ জমি উদ্ধারে চালানো হয় অভিযান। এখন সব জমি আবার দখল হয়ে গেছে। সড়ক বিভাগের এই জমির মূল্য অনুমানিক ৪শ কোটি টাকা যা দখল করে থাকে ৭শ দখলদার। দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যাবার জন্য এটি একমাত্র সড়ক। বার বার দখল হওয়ায় সাধারন মানুষ ও ট্রাফিকদের প্রতিনিয়ত নাকাল হতে হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিদিন সারা দেশের অন্তত ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
নগরবাসি একজন বলেন, উচ্ছেদ দেখে ভালো লাগছে, কিন্তু কাজ হবে কি। আজ প্রশাসন উচ্ছেদ করছে আর আগামিতে এই জমিই উচ্চ দামে কেনাবেচা হবে। দিনে উচ্ছেদ হলে রাতেই আবার কেনাবেচা হয়ে যায়। যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের ম্যানেজ করে দখলদাররা আবার খুঁটি দেয়। সাময়িক এই উচ্ছেদে কি লাভ। উচ্ছেদ হলে তা হতে হবে শিক্ষনীয়।
অন্যজন বলেন, কিছুদিন আগেও দেখেছি সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযান হয়েছে। এখন আবার কিছু কিছু দখল হয়ে গেছে। অবশ্য এরা স্থায়ি না, আবার অভিযান হলে থাকবে না। সরকারি জমি সরকারের থাকলে আমাদের চলাফেরা করতে সুবিধা হয়।
ট্রাফিক পুলিশের একজন বলেন, রাস্তা যদি উম্মুক্ত থাকে তাহলে যান চলাচল ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে সুবিধা হয়। সাধারন পথচারিদেরও সুবিধা হয়। রাস্তা দখল হয়ে গেলে আমাদের সবারই সমস্যা হয়। আমরা তাই দখলদারমুক্ত রাস্তা চাই।
বার বার উচ্ছেদ করেও সমাধান না মেলাটা দু:খজনক বলছে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। তবে এদের আশাবাদ ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যন্ত ৬ লেনের কাজ শুরু হলে এ সমস্যা থাকবেনা বলে তারা আশাবাদী। তাদের মতে উচ্ছেদের পর খালি জমিতে হয় ড্রেন নতুবা দেয়াল তুলে তা স্থায়িভাবে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।
সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেন, আসলে দখল বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সচেতনতা। আমরা ১১ জানুয়ারি উচ্ছেদ করেছিলাম যা আবার দখল হয়ে গেছে। জনগন সচেতন না হলে সরকারি এসব সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এর পরেও যারা উচ্ছেদ অমান্য করে দখল করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। দখল রোধে আমরা উচ্ছেদ স্থানে ড্রেন, দেয়াল দেয়ার চিন্তা করছি। এখান থেকেই যেহেতু ৬ লেনের রাস্তা যাবে সুতরাং দখলদারদের অবশ্যই হটাতে হবে।
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের খাল, রাস্তা ও বস্তি এলাকায় প্রায় ১৯০ কোটি টাকা মূল্যের ৮০০ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন থেকে প্রায় সাড়ে ৯শ দখলদারের দখলে রয়েছে। এগুলো উদ্ধারে হাতে নকশা নিয়ে জমি মাপ দেয়ার কাজ শুরু করেছে বিসিসি।
বিসিসি’র স্টেট অফিসার মাহবুবুর রহমান শাকিল বলেন, আমাদের ৮ একর জমি সাড়ে ৯শ দখলদারের দখলে রয়েছে। আগে কি হয়েছে জানিনা, এখন থেকে উচ্ছেদের পর আর কাউকে দখলে যেতে দেয়া হবে না।
মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে বলা হয়েছে উচ্ছেদ সমস্যার স্থায়ি সমাধান না হবার জন্য দায়ি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের জমি দখলদারের কবল থেকে মুক্ত করে দেয়ার পরেও তারা তা রক্ষা করতে পারছেন না।
বিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, যারাই আমাদেরকে তাদের জমি উদ্ধারে সহযোগিতা চায় আমরা তা দেই। কিন্তু দখলমুক্ত করার পর যাদের জমি তারাই সেটা রক্ষা করবে, এটা পুলিশের কাজ না। কিন্তু যাদের জমি তারা যদি পুনরায় দখল করতে দেয় সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে নতুন করে যারা পুনরায় দখল করে তাদের নাম যদি কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায় বা একটা সাধারন ডায়েরি করে সেটা আমরা দেখতে পারি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এমনটা কেউ করেনি।
এ ব্যাপারে বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের অনুসন্ধানে দখলদার বের হচ্ছে এবং আমরা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমরা উচ্ছেদ করি স্থায়ী ভাবেই, কিন্তু পরে আবার দখলে চলে যায়। পরে আবার উচ্ছেদ করতে গেলে দখলদাররা নানা প্রচেষ্টা চালায় উচ্ছেদ বন্ধ করতে। এখন আমরা উচ্ছেদ স্থায়ি করতে উচ্ছেদের পরেই সেখানে আমাদের স্থায়ী স্থাপনা গড়ার চেষ্টা করবো।