রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে অনাকাঙ্খিত বিদায় উপাচার্যদের রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে অনাকাঙ্খিত বিদায় উপাচার্যদের - ajkerparibartan.com
রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে অনাকাঙ্খিত বিদায় উপাচার্যদের

4:26 pm , May 17, 2025

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আরিফুর রহমান, ববি প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক রাজনীতি একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কিত বিষয়। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সুবিধা অর্জনের জন্য রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বজায় রাখেন। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যরা প্রায়ই রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েন, যা তাদের স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। ২০১১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ২০১২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) এ সমস্যার তীব্র উদাহরণ। ১৫ বছরে পদার্পণ করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৫ জন উপাচার্যের মধ্যে ৩ জনই মেয়াদ পূরণের আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
২০১২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবছর ১৫ তম বছরে পদার্পণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ হয় চারবছর মেয়াদের জন্য। সে হিসাবে ১৪ বছর বয়সী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) এ পর্যন্ত ৪জন উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু গত মঙ্গলবার ( ১৩ মে) রাতে ষষ্ঠ ভিসি নিযুক্ত হয়েছেন। এর আগের পাঁচজন উপাচার্যের মধ্যে  তিনজনকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিদায় নিতে হয়েছে।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরুটা হয় ২০১৯ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক এর দায়িত্বকালীন সময়ে। এরপরে, গত বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া  এবং পরবর্তীতে নিয়োগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন না করে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছেন।
এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র ৮ মাস। এই ৮ মাস দায়িত্বকালীন সময়ে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পড়েন। উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পক্ষপাতমূলকভাবে কিছু শিক্ষককে পুনর্বাসন, ফ্যাসিবাদী আচরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২২দফা দাবির বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া, গত জুলাই মাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার না হওয়া,শিক্ষার্থী জেবুন্নেসা হক জিমির মৃত্যু ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়েরসহ বেশকিছু  অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগের  দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একটি অংশ এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। পরে ১৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অপসারণ করা হয়।
আরেক উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র ৮ মাস। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফ্যাসিস্টের দোষর উল্লেখ করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনের দুদিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
আরেক উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক। জানা যায়, তিনি সবচেয়ে বেশি আন্দোলনের মুখে পড়েন এবং শিক্ষকদের একাংশ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। দুইদফায় তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে  হয়। একবার ১৫ দিন ও আরেকবার টানা ৪৪ দিনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় অচল করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্বেচ্ছায় ছুটির আবেদন করেন। একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে বাধ্যতামূলক তিনমাসের ছুটিতে পাঠায়। ছুটিতে থাকাকালীন তার মেয়াদ পূর্ণ হয়।
চার বছরের পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র দু’জন।  তারা হলেন-প্রথম ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ এবং চতুর্থ ভিসি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন। এদের মধ্যে ড. ছাদেকুল আরেফিন ৪ বছর দায়িত্ব পালন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়ন কাজ না করে বরং সভা সমাবেশ আর সেমিনারেই সীমাবদ্ধ ছিলেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, আওয়ামী শাসনামলে প্রতিষ্ঠা হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নীল দল কিংবা সাদা দল না থাকলেও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে দুইটি গ্রুপ সক্রিয় আছে। এদের মাধ্যমেই মূলত উপাচার্যদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা অংশ এসব শিক্ষকের ইন্ধনে আন্দোলনে নামেন বলে জানা যায়। এছাড়াও স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব পড়ে উপাচার্যদের উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.  ইমামুল হকের বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলন বরিশালের স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবশালী মুখ সাদিক আব্দুল্লাহর ইন্ধনে হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।
অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় আসার পর প্রথমবার আন্দোলন দেখেছি। তখন আসলে বুঝতাম না কি কারনে এ আন্দোলন হচ্ছে । সবাই আন্দোলনে যেত, দেখাদেখি আমরাও আন্দোলনে যেতাম। কিন্তু আন্দোলনের শেষের দিকে এসে জানতে পারি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাদিক আব্দুল্লাহর ইন্ধনে এ আন্দোলন হচ্ছে।  পরবর্তীতে যখন ছাদেকুল আরেফিন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, তখন দেখতে পারলাম সাদিক আব্দুল্লাহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো। আর ক্যাম্পাস হয়ে গেলো রাজনৈতিক আস্তানা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান, মর্যাদা ও র‌্যাংকিং আরও এগিয়ে নিতে আমি আমার সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT