4:25 pm , May 17, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ গোশত, দুধ ও ডিমে উদ্বৃত্ত বরিশালে স্থানীয় গবাদী পশুর মাধ্যমে চাহিদা মিটলেও কুরবানির সংখ্যা কমছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। এবার প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার পশু কুরবানির পরেও ৬১ হাজারের মত পশু উদ্বৃত্ত থাকতে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে স্থানীয়ভাবে পশুর মাধ্যমে চাহিদা মিটিয়ে বিপুল সংখ্যক গরু, ছাগল, খাশি, ভেড়া ও মহিষ উদ্বৃত্ত থাকলেও গবাদি পশুর দাম নিয়ে উদ্বেগ আছে ক্রেতাদের মাঝে। গেলোবার দাম অন্তত ১৫-২০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার পেলেও এবার পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা বুঝতে আরো অন্তত দশদিন অপেক্ষা করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবেই বরিশাল অঞ্চলে গবাদি পশুর প্রবৃদ্ধি খুব সন্তোষজনক নয়। অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে গত বছর বরিশাল অঞ্চলে ‘নিরাপদ গবাদিপশুর মাংস উৎপাদনে কুরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রাপ্যতা ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪টি। সেখানে চলতি বছর তা মাত্র সাড়ে ৫ হাজারের মত বৃদ্ধি পেয়ে সংখ্যাটা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩’তে উন্নীত হয়েছে।
২০২০ সালে বরিশালে ৪ লাখ ৯৫ হাজার পশু কুরবানি হলেও ২০২১ সালে তা ৪ লাখ ৬১ হাজারে হ্রাস পায়। ২০২২ সালে পশু কুরবানির সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৯৯ হাজারে উন্নীত হলেও ২০২৩ সালে সম্ভাব্য পশু কুরবানির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ হ্রাস পায়। ২০২৩ সালে প্রায় ৫০ হাজার পশু উদ্বৃত্তের পরেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে বরিশাল অঞ্চলে ওই বছর কুরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪ টি।
তবে আসন্ন ঈদ উল আজহায় বরিশালে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কম পশু কুরবানির সম্ভাব্য প্রাক্কলন করে মোট চাহিদা নিরূপন করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫২২টি। যা ২০২১ সাালের পরে সর্বনি¤œ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার গত বছরের তুলনায় বরিশালে পেশুর সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজারের মত বাড়লেও ২০২১,২২ ও ২৩ সালের তুলনায় হ্রাস পেতে পারে। এমনকি প্রাক্কলন অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে উদ্বৃত্তের সংখ্যা প্রায় ৩ গুন বেড়ে প্রায় ৬১ হাজারে উন্নীত হলেও দাম কমবে কিনা তা বলা যাচ্ছেনা। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানের বাইরেও বরিশাল অঞ্চলে গৃহস্থ পর্যায়ে কুরবানির জন্য আরো লক্ষাধিক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল অঞ্চলে খামার পর্যায়ে ৩ লাখ ১৬ হাজারেরও বেশী গাভী, ষাড় ও বলদ সহ ২৬ লাখ ২০ হাজার গবাদি পশু এবং ২ লাখ ৮৬ হাজার মহিষ ও পৌনে ১১ লাখ ছাগল ছাড়াও ৭৭ হাজারের মত ভেড়া রয়েছে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে।
তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্কলন অনুযায়ী বরিশালে কুরবানির সংখ্যা গত বছরের হ্রাস সহ উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা বাড়লেও দাম কমার সম্ভবনা দেখছেন না বাজার পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি সহ পরিবহন ব্যায় এবং শ্রমিকদের লাগামহীন মজুরী বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়ছে পশুর দামের ক্ষেত্রে। বরিশালের চরাঞ্চল সহ মূল ভূ-খন্ড থেকে বছর জুড়েই বিপুল সংখ্যক বকনা বাছুর কুষ্টিয়া, মেহরপুর সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহে যায় মোটাতাজাকরণের জন্য। সেসব গরুর একটি অংশই আবার এ অঞ্চলের পশুর হাটে ফিরে আসছে বিক্রীর জন্য।
সবাই আশা করছেন ১ জুন থেকে গরু সহ অন্যান্য পশু হাটে আসতে শুরু করবে। জমে উঠবে হাটগুলো। তবে মূল বেঁচাকেনা শুরু হবে ৩ জুন থেকে। ৫ জুন রাত পর্যন্ত এ অঞ্চলের প্রায় পৌনে ৩শ পশুর হাটেই পশু বিক্রী জমজমাট থাকবে বলে আশা করছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর এর কর্মকর্তারা।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বরিশালের উপজেলা পর্যায়ে ‘পশু বেঁচা কেনা সহ জবাই করার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়’ নিয়ে সচেতনতামূলক সভা শুরু করেছে। এছাড়া এবারো পশুরহাটে মেডিকেল টিম নিয়োজিত থাকছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক জানিয়েছেন।
বরিশালে বেশ কিছু আধা নিবিড় ও আধুনিক খামারি পশু বিক্রীর লক্ষ্যে প্রচারনা শুরু করেছে আরো সপ্তহখানেক আগেই। তবে প্রায় সব কুরবানিদাতাই হাটে ও মাঠ থেকে পশু কিনতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। বরিশালের চরমোনাই, কসবা, বোয়ালিয়া বাজার, সুগন্ধিয়ার বাজার, গুয়াচিত্রা এবং মহানগরীর কাউনিয়া, রূপাতলি সহ বেশ কয়েকটি স্থানে এবারো অস্থায়ী পশুর হাট বসছে।