সাইলোর হস্তান্তর না হওয়ায় ৪ মাসেও কার্যক্রম শুরু হয়নি সাইলোর হস্তান্তর না হওয়ায় ৪ মাসেও কার্যক্রম শুরু হয়নি - ajkerparibartan.com
সাইলোর হস্তান্তর না হওয়ায় ৪ মাসেও কার্যক্রম শুরু হয়নি

2:52 pm , May 16, 2025

৪৮ হাজার মেট্রিক টন চাল সংরক্ষনের জন্য

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণের জনপদে উৎপাদিত চালের মান অক্ষুন্ন রেখে সর্বাধুনিক উপায়ে সংরক্ষনের জন্য বরিশালে নির্মানাধীন সাইলো নির্মানকাজ সম্পন্ন হলেও এর হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। অজ্ঞাত কারনে গত চারমাসেও সাইলোর কার্যক্রম শুরু হতে পারেনি। কবে শুরু হবে তাও কেউ বলতে পারছে না। নগরির ৩০ গোডাউন এলাকায় ৩৩২ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এ সাইলোতে একসাথে তিন বছরের জন্য ৫ হাজার কেজি চাল সংরক্ষন করার কথা রয়েছে।  যে কোন দুর্যোগে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় এটি হতে পারতো বড় সহায়। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাসহ দক্ষিণ উপকূলের মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার দীর্ঘদিন মজুদ রাখার উপযোগী আধুনিক ও উন্নত মানের খাদ্য সংরক্ষনাগার এই সাইলো। ২০২১ সালের ২২ জুন এর কাজ শুরু হয় যা শেষ শেষ হয় গতবছর ডিসেম্বরে। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের ওয়ারেন্টি সময়ও শেষ হবার পথে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া নিরাপত্তা ব্যাবস্থাও এ মাস থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পুরো সাইলোর কার্যক্রম নিয়ে অনিশ্চেয়তা দেখা দিয়েছে।
সাইলোর ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইয়েন বলেন, গত ডিসেম্বরে আমরা সরকারকে প্রকল্প  হস্তান্তরের চিঠি দেয়ার পর থেকেই পুরো প্রকল্পের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শুরু হয়ে গেছে। এটি এখনো চলছে এবং শেষ হবার পথে। সকার এটি চালু করলে ওয়ারেন্টির সুবিধাটি পেতো। তাছাড়া আমাদের প্রকল্প থেকে দেয়া নিরাপত্তা কর্মিদের মেয়াদও এ মাসেই শেষ হয়ে যাবে। এখনো সরকার থেকে কোন নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা হয়নি। এ অবস্থায় এতো দামি একটি প্রকল্পের নিরাপত্তা পড়ে যাচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় স্থানীয় পদ্ধতিতে  প্রায় ৯০ হাজার টন খাদ্য মজুদের ব্যবস্থা রয়েছে। অত্যাধুনিক খাদ্য মজুদের ক্ষেত্রে এটা হবে বাড়তি শক্তি। খরা, ঝড়, বন্যা জলোচ্ছাসের পর ক্ষেতে ফসল ওঠা পর্যন্ত এই সাইলোর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এটি হলো সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। সর্বোচ্চ ৫০ জন জনবলে চলবে এটি।  এতো বড় প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবার পরেও তার হস্তান্তর না হওয়ায় থমকে গেছে কার্যক্রম। ধারনা করা হচ্ছে সরকারের সাইলো বিষয়ক দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত চালের ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খাদ্য বিভাগের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। চালের জোগার এখনো নিশ্চিত নয়।
সাইলোর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই প্রকল্পের কোন কাজ বাকি নেই। গত ডিসেম্বর থেকে আমরা সাইলো হস্তান্তরের জন্য চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছি না। হয়তো দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত চালের মজুদ না থাকায় এমন বিলম্ব তারা করছে। সরকারের কিছু লোককে আমরা প্রশিক্ষন দিচ্ছি, আরো লোক পাঠাতে বলেছি। সরকার হস্তান্তরে বিলম্ব করায় গত চারমাস থেকে প্রতিমাসে আমাদের বিদ্যুত বিলসহ প্রায় ১০ লাখ  লোকসান দিতে হচ্ছে। কবে এটা হস্তান্তর হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না।
এই সংরক্ষনাগারে একসাথে ৪৮ হাজার মেট্রিকটন চাল মজুদ রাখা সম্ভব। চাল সংরক্ষনের পর জরুরি চাহিদার সময় ১১টি মেশিনের মাধ্যমে ঘন্টায় ১৭৬ টন চাল প্যাকেটজার করে সরবরাহ করা যাবে। প্রতিটি প্যাকেটে থাকবে  ৫ ও ৫০ কেজি চাল। দুর্যোগকালে বরিশালের ৬ জেলায় দ্রুত তা সরবরাহ করা যাবে নৌ ও সড়ক পথে।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংক এর যৌথ অর্থায়নে নির্মিত এই আধুনিক খাদ্য সংরক্ষনাগার (সাইলো) নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করছে জয়েন্ট ভেঞ্চার অব কনফিডেন্স ইনফ্রকচার লিমিটেড বাংলাদেশ এবং দি জিএসআই গ্রুপ এলএলসি, ইউএসএ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প শেষ হবার পরেও এদের পুরো জনবল এখন অযথা সময় পার করছে।
এ ব্যাপারে সাইলোর এডমিন মেহেদি হাসান বলেন, সাইলোর প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও যতদিন পর্যন্ত আমরা এটি হস্তান্তুর করতে না পারছি ততদিন আমাদের এখানে থাকতে হচ্ছে। মেশিনগুলো ঠিক রাখতে প্রতিনিয়ত চালানো হচ্ছে ট্রায়াল কাজ। আমরা জনবলকেও প্রশিক্ষন দিচ্ছি। যাতে সরকার চাইলেই আমরা দ্রুত হস্তান্তর হকরে পারি। কিন্তু কোন সাড়া আসছে না।
এদিকে বরিশাল খাদ্য বিভাগ থেকে ১৫ জন কর্মিকে সাইলোর কাজে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে প্রশিক্ষনও দেয়া হচ্ছে। তবে এরাও হস্তান্তর প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। ন্যূনতম নিরাপত্তার জন্য আনসার চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোন সাড়া মেলেনি।
এখানে সংযুক্ত খাদ্য বিভাগের এক কর্মি বলেন, খাদ্য বিভাগ থেকে আমাদের এখানে সংযুক্তি দিয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা এর অপারেশনাল কাজ শিখছি। মন্ত্রণালয় থেকে দির্দেশ এলে আমরা সব কিছু বুঝে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারি।
অপরজন বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি থেকে খাদ্য বিভাগের ১৫ জন  কর্মি আমরা এখানে সংযুক্তিতে কর্মরত আছি। আমরা নিরাপত্তার জন্য এক প্লাটুন আনসার চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আনসারের নিয়োগ না দেয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই স্থানটি খুবই স্পর্শকাতর বলে দ্রুত এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।
কীর্তনখোলা নদীতে বিশালাকায় গেটিসহ ৫ একর ৪৪ শতাংশ জমির উপর নির্মিত এই সাইলোর কার্যক্রম শুরুর কথা ছিলো গতবছর ডিসেম্বর মাসে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT