4:10 pm , May 12, 2025

আরিফুর রহমান, ববি প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ করা না হলে দক্ষিণবঙ্গ অচল করে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংহতি সমাবেশে এ হুশিয়ারি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রায় দুইঘন্টা অবস্থান করে দুপুর দেড়টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে টানা ৮ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অবস্থা নেন শিক্ষক ও কর্মচারীদের একটি অংশ । অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসেন ফয়সাল প্রমুখ।
কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল বলেন, আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত অন্ধকার। ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আসলে কারো নেই। তিনি কলিমুল্লাহ সিন্ডিকেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। আমরা তাকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি কিন্তু যখন দেখতে পারলাম ৮ মাস ধরে উনি সংশোধন হচ্ছেন না, একের পর এক বিতর্কিত কর্মকা- করে চলছেন, তখন আসলে আমরা আর বসে থাকতে পারিনি। আমরা অবিলম্বে এই ভিসির অপসারণ চাই।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের যে যৌক্তিক আন্দোলন চলছে এরই প্রেক্ষিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জানাতে চাই যতদ্রুত সম্ভব আমাদের এই দাবিটা মেনে নেওয়া হোক। আমরা বলতে চাই, আগামী ২৪ ঘন্টা তথা আগামীকাল ২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছি, এই ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে। যদি দাবি মেনে না নেওয়া হয় তাহলে দক্ষিণবঙ্গকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং দক্ষিণবঙ্গকে অচল করে দেওয়া হবে। আমরা বলতে চাই আমরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না, কোনো ভোগান্তি সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু সমাধান, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হোক।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ভূমিকা সরকার বলেন, আজকে আমাদের কর্মসূচী ছিলো উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংহতি সমাবেশ। খুব দ্রুত যদি আমাদের এ দাবি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচীতে যেতে বাধ্য হবো। বিগত দিনগুলোতে আমরা ২২ দফা, ৪ দফা কর্মসূচি পালন করেছি। একটি সিগনেচারের অভাবে আমাদের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে সাহায্য পায়নি এবং নানা অসঙ্গতির প্রেক্ষিতে আসলে আমাদের একদফা দাবি।
সংহতি সমাবেশে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন, কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফেরদৌসী জামান তনু, সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়া, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাদিকুর রহমান, অসিম কুমার নন্দী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম, সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসেন ফয়সাল, গনিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিউল আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর এবং তারও আগে ২২ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার পর একমাসের সময়সীমা বেঁধে আন্দোলন থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বর্তমানে চলছে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ১৩ এপ্রিল সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়, যা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে আরও ক্ষোভ দানা বাঁধে।