4:23 pm , May 8, 2025

আরিফুর রহমান, ববি প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন এর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করেছে শিক্ষকদের একটি অংশ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন -১ এর নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। প্রায় দুইঘন্টা অবস্থান করে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন জানান, স্বৈরাচার উপাচার্যের পদত্যাগ চাই। আমাদের আগামি কর্মসূচি থাকবে উপাচার্য বাদে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা ও শনিবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করা । তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র পরীক্ষা কার্যক্রম ব্যতিত পাঠদান,মিডটার্ম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইংরেজিতে বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়, কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের সাথে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে তারা বলেন, আমরা বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন এর নানা অনিয়ম ও অদক্ষতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি। আমরা একাধিক সময়ে তাঁর নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন কল্পে অনেকগুলো দাবিনামা পেশ করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি কোনো দাবিকেই গুরুত্ব না দিয়ে বিগত সময়ের মতো স্বৈরাচারী আচরণ অব্যাহত রেখেছেন।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, উপাচার্য একজন অসুস্থ শিক্ষার্থীর সহযোগিতার ফাইল মাসের পর মাস অবহেলা করে ফেলে রেখেছেন। ফলে আমরা আমাদের অসুস্থ বোনকে সহযোগিতা করতে পারিনি। এরপরও আমরা তাঁর কাছে দাবি তুলে ধরেছিলাম কিন্তু তিনি বা তাঁর প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কোনোরুপ আলাপ-আলোচনার আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি পূর্বের ন্যায় তিনি বিতর্কিত সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে বিতর্কিত ব্যক্তিকে কমিটির সদস্য করে পুরো সিন্ডিকেটকেই হাস্যকর করে তুলেছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্বৈরাচারী শাসকের মতো তিনিও শিক্ষার্থীদের মামলা ও জিডি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হেনস্থা করে যাচ্ছেন। অতএব আন্দোলনের এক পর্যায়ের আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করতে বাধ্য হয়েছি। শেষ মুহূর্তে উনি ওনার ক্ষমতা বাঁচাতে মরিয়া হয়ে দূরভিসন্ধিমূলক একাডেমিক কাউন্সিল আহ্বান করেছেন। আমরা শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন করছি আর উপাচার্য ঢাকায় বসে অনলাইনে একাডেমিক কাউন্সিল আহ্বান করেছেন।
সংহতি সমাবেশে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন, সহযোগী অধ্যাপক খাদিজা আক্তার, কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল হক, সহকারী অধ্যাপক ইরতেজা হাসান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার, সহযোগী অধ্যাপক মহসিনা হুসাইন, সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জাহাঙ্গীর কবির,ফেরদৌসী জামান তনু, সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়া, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বরও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। তারআগে ২২ দফা আন্দোলন নিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরবর্তীতে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে একমাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন থেকে সাময়িক বিরত হন একদল শিক্ষার্থী। এছাড়া উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশ করে গেট ভাঙচুরের অভিযোগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৪২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বরিশাল বন্দর থানায় মামলা করা হয়। মামলায় প্রধান সাক্ষী হিসাবে উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ঘটনার পর অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ হিসেবে উল্লেখ করে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে ১৩ এপ্রিল অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।