বারবার কেন অশান্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় !  বারবার কেন অশান্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় !  - ajkerparibartan.com
বারবার কেন অশান্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ! 

3:51 pm , May 5, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) এই মুহূর্তেও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে একদফা দাবী নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী ও আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারাও।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বারবার অশান্ত হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় । কখনো সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে, কখনো রেজিস্ট্রার, প্রক্টর বা ভিসির পদত্যাগ দাবী করে। তাদের এই অশান্ত হয়ে ওঠার ফলে মহাসড়কে শৃঙ্খলা বিঘিœত হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার লাখো মানুষকে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ২৮ জুলাই বিপ্লবের প্রথম জয় কিন্তু এই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয় এবং তখন আশেপাশের বাসিন্দারা এই শিক্ষার্থীদেরই খাবার পানি সরবরাহ করেছেন। এখানেই সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বাহিনী। এরপর ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন শুচিতা শরমিন। ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে ববি। এখানে ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে তাকেও সড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এরপরই শুরু হয় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন এর অভিযোগ। তিনিই সম্ভবত ববির প্রথম উপাচার্য যিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে দু’বার থানায় মামলা করেছেন।
যার ফলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ববি শিক্ষার্থীরা সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণসহ ৪দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলন দমাতে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ লিটন ১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০-১২ জন অজ্ঞাত পরিচয়ধারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন। এর আগে উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভাঙচুরের অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার কেএম সানোয়ার পারভেজ লিটন বাদী হয়ে এ মামলা করেছিলেন।
এরপর হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র  অধ্যাপক এবং ইংরেজি বিভাগের প্রধান মুহসিন উদ্দিনকে বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন উপাচার্য  শুচিতা শরমিন। যে কারণে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের একদফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত রোববার দুপুরে উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি জানান। পরে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
৪ মে দুপুরে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপাচার্য ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহারের কথা জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। শিক্ষার্থীদের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শাহেদ বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, ছয়মাস আগে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা নিয়ে ২২ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ছয়মাসেও সেসব দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগের কর্মী শাহরিয়ারকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আটক করেন। তবে ছাত্রলীগের কর্মীরা ফটকের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষের দরজা ভেঙে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও তাঁদের নামে কোনো মামলা হয়নি বা শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করলেও তা দমনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলের কায়দায় মামলা দেওয়া হয়েছে, যা উপাচার্যের নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চান না। আবার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কোনো ভোগান্তি হোক, সেটাও চান না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি না মানা হলে পরে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁর বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চারদফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো ছিলো অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
শিক্ষার্থীদের এই দাবীকে যৌক্তিক বলে মনে করেন বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, তাদের যৌক্তিক দাবীর এ আন্দোলন তাদের ক্যাম্পাসের ভিতরে রাখা উচিত। মহাসড়কে অবরোধ করে লাখ মানুষের ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের কাছে কাম্য নয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে বিষয়টি জরুরী সমাধানেরও অনুরোধ জানান কাজী মিজান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT