3:01 pm , May 4, 2025

রাত্রিকালীন নৌ চলাচল ঝুঁকির মুখে ! নালিশ হয় !! ব্যবস্থা হয়না !!!
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পথ নির্দেশনা বাতি না থাকায় বরিশালের নৌপথে রাত্রিকালীন নৌযান চলাচল রয়েছে ঝুঁকির মুখে। এ পথে চলাচলকারী নৌযানগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলেও পথ নির্দেশনার অভাবে তা কাজে আসছে না। এ নিয়ে পুলিশকে এ পর্যন্ত ৪৯ বার জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোন কাজে আসেনি। অভিযোগ রয়েছে এক শ্রেণির জেলেরা এমন অপকর্ম দিনের পর দিন করে আসছে।
বরিশালের ৬টি বড় নৌ-রুটের ১২ কিলোমিটার নৌপথের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকে অসংখ্য চর। এই বিশাল নৌপথে রাত্রিকালে চলাচলে যাত্রি ও পণ্যবাহী নৌযানগুলো যাতে চরে আটকে দুর্ঘটনায় না পড়ে সেজন্য বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে ১৩৬টি নৌপথ নির্দেশনা বাতি। এরমধ্যে ৪০টি বয়া এবং ৯৮টি বিকন বাতি। কিন্তু বর্তমানে এসব নির্দেশনা বাতির অধিকাংশই হয় চুরি হয়েছে নয় বিকল করে ফেলে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার যাত্রি নিয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় নৌযান চালাতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা।
তারা বলেন, নদী পথের অনেক স্থানেই নাব্য নেই, চর পড়ে আছে। ড্রেজিং হয়না ঠিক মতো। এ অবস্থায় বয়া বিকন কিছুই নেই। নদীতে চলাচল করার মতো কিছুই নেই। বয়া বিকন থাকলেও তাতে বাতি নেই। এগুলো থাকলে সতর্ক হয়ে নৌযান চালানো যায়। ভাটার সময় বয়া বিকনের অভাবে প্রতিটি লঞ্চ বিপদের মধ্যে চালাতে হয়।
এক পাইলট বলেন, বয়া বিকন সচল থাকলে ঝুঁকি এড়িয়ে লঞ্চ চালানো যায়, দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে কম। বর্তমানে এগুলো অচল থাকায় অত্যন্ত বিপদের মধ্যে আছি আমরা। চরে লঞ্চ আটকালেই দুর্ঘটনা নিশ্চিত। কর্তৃপক্ষের এ ক্ষেত্রে কোন মনিটরিংও নেই।
এক সুকানি বলেন, বয়া বিকন ছাড়া নৌযান চালানো অসম্ভব অথচ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেই এগুলো নেই। আমাদের নৌযানগুলো অত্যাধুনিক হয়েছে সত্য কিন্তু নৌপথ এখনো উন্নত হয়নি।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন তাদের যাত্রাপথ সম্পূর্ণ অরক্ষিত। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের উচিত ছিলো এ দিকটায় লক্ষ্য রাখা, কিন্তু তারা তা করছেন না।
সুন্দরবন লঞ্চের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, আমরা যাত্রি পরিবহন করে থাকি। কন্তু এই নৌপথ নির্বিঘœ নয়। বিআইডব্লিউটিএ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। নৌপথ নির্দেশনা বাতি নিশ্চিতের জন্য বারবার বলার পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সার্ভিস এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষন ও পরিচালন বিভাগ বরিশাল শাখা থেকে জানানো হয়েছে গত ১০ বছরে ১৯২টি বয়া বিকন ও এর বাতি চুরি হয়েছে। বিনষ্ট করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে গত দু বছরে এমন অবস্থায় পড়েছে ২২ টি বয়া বিকন। এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বয়া বিকন এলাকার থানাগুলোতে ৪৯টি সাধারন ডায়েরি করে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও কোন সুরাহা হয়নি। এক শ্রেণির জেলেরা এসব অপকর্ম করে থাকে।
নৌ পথ নির্দেশক বাতি ও মার্কার পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন বলেন, বরিশাল অঞ্চলে এ পর্যন্ত ১৯২টি বয়া ও বিকন বাতি চুরি হয়েছে। একটি বয়ার দাম ২৬ থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং একটি বিকনের দাম ৩ লাখ টাকা। আমরা বিভিন্ন থানায় ৪৯টি অভিযোগ করেছি। পুলিশ আমাদের বলে চোর ধরিয়ে দিতে। এটাতো আমাদের পক্ষে সম্ভব না। বাধ্য হয়ে আমরা রিপ্লেসমেন্টের চেষ্টা করি।
একই সংস্থার পাইলট ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের ১২শ কিলোমিটার নৌপথে ১৩৮টি বয়া বিকন আছে। এগুলো না থাকলে রাত্রিকালীন নেভিগেশনে বিঘœ ঘটে। ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। মাছ ধরার সুবিধার্থে এক শ্রেণির জেলেরা এগুলো বেশি করে থাকে। এদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ওরা রীতিমত উৎসাহ পাচ্ছে।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজওয়ান আহমেদ বলেন,
নদীর এই বয়া বিকন এভাবে চুরি হওয়াটা খুবই দুঃখজনক, এটা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি। আমরা এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ এর সাথে যোগাযোগ করবো এবং বিষয়গুলো দেখার জন্য নৌ পুলিশকে অবহিত করা হবে। অবশ্যই এ ঘটনায় মামলা হওয়া উচিত ছিলো। কেন তা হয়নি খতিয়ে দেখবো।
নৌপথের এমন বেহাল চিত্রের কথা বরিশাল নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষও অবহিত আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এরাও বিষয়টি নিয়ে সামনে এগুয়নি।
বরিশালের নৌ বন্দর কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, জেলেদের কারনে নৌ পথের বয়া বিকনের যে পরিমান ক্ষতি হচ্ছে তা অপূরণীয়। আমরা নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড পুলিশসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিচ্ছি। প্রতিনিয়তই আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ আসছে। ভাগ্যক্রমে আমাদের লঞ্চ চালকরা অভিজ্ঞ হওয়ায় দুর্ঘটনা থেকে আমরা বেঁচে যাচ্ছি। আসন্ন কুরবানী ও বর্ষাকে সামনে রেখে এ ব্যাপারে ভালো ফলাফলের জন্য আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাবো।