বরিশালে শিশু হাসপাতালের ৩০ মাসের অবকাঠামো নির্মান কাজ ৯৮ মাসেও শেষ হয়নি বরিশালে শিশু হাসপাতালের ৩০ মাসের অবকাঠামো নির্মান কাজ ৯৮ মাসেও শেষ হয়নি - ajkerparibartan.com
বরিশালে শিশু হাসপাতালের ৩০ মাসের অবকাঠামো নির্মান কাজ ৯৮ মাসেও শেষ হয়নি

2:46 pm , April 27, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল মহানগরীতে বিগত ৮ বছরের প্রচেষ্টায় ২শ শয্যার শিশু হাসপাতালটির মূল ভবনের নির্মান কাজ সম্প্রতি শেষে হলেও এখনো বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মান ও ট্রান্সফর্মার স্থাপনের পাশপাশি জনবল মঞ্জুরি ও চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জামের অভাবে কবে চিকিৎসা সেবা মিলবে তা বলতে পারছেন না কেউ। গত অর্থবছরে হাসপাতালের মূল ভবন নির্মান কাজ সম্পন্ন হলেও এখনো বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মিত না হওয়ায় গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হস্তান্তর হয়নি হাসপাতালটি। এমনকি জনবল মঞ্জুরীর পাশপাশি ইলেক্ট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ ও তা স্থাপনের বিষয়টিও অনিশ্চিত। উপরন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ হাসপাতালটির বিপরীতে কোন অর্থ বরাদ্দ দিতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ  শিশু হাসপাতালটি থেকে অদূর ভবিষ্যতেও চিকিৎসা সহায়তা মিলবে কিনা তা এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহলের কাছেও অজ্ঞাত।
বরিশাল গণপূর্ত বিভাগ ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় ১০ তলা ভীতের ওপর চারতলা শিশু হাসপাতাল ভবন নির্মান কাজ শুরু করে। নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ৩০ মাসের মধ্যে মূল হাসপাতাল ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা এবং বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন সহ পুরো হাসপাতালের অবকাঠামোসহ নির্মান কাজ শেষ করার কথা।
কিন্তু নির্মান প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় গত ৮ বছরেও তা সম্পন্ন হয়নি। নির্মান প্রতিষ্ঠান কেএসবিএল-এসআরআর জেভি’র অভিযোগ ‘হাসপাতলটির জমি নিয়ে জটিলতা সহ নিচু জলাশয় হওয়ায় তা ভরাট করে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে’। তবে নির্মান বিশেষজ্ঞ সহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে ৩০ মাসের কাজ ৯৮ মাসেও শেষ করতে না পারার বিষয়টি কোন যুক্তিতে টেকে না। শুধুমাত্র নির্মান প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও উদাসীনতায় বছরের পর বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির নির্মান কাজ শেষ হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে আইনে এসব অবহেলার সুযোগ না থাকলেও কেন নির্মান প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকৃত বিলম্বকে মেনে নেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি। এমনকি বিগত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব সহ অধিদপ্তরের একাধিক মহাপরিচালক নির্মানাধীণ এ হাসপাতাল ভবন পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু কেউই নির্ধারিত সময়ের কয়েকগুন বিলম্বেও হাসপাতাল ভবন নির্মান কাজ সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়ে কোন পদক্ষেপের কথা বলেননি। তবে ইতোপূর্বে শহীদ সুুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতাল নামে এর নামকরণ করা হয়েছে।
গত ৮ বছরেরও বেশী সময় ধরে চলমান বরিশাল শিশু হাসপাতাল ভবনের নির্মান কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হলেও বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনটির নির্মান কাজ গত অর্থ বছরের মার্চ মাসে শুরুর পর এখন তাও প্রায় বন্ধ। ইতোমধ্যে সাব-স্টেশনটির অবকাঠামো নির্মানকাজ শেষ হলেও ট্রান্সফর্মার ও জেনারেটর সহ অন্যান্য ইলেকট্রিক সরঞ্জাম সমূহ সংগ্রহ ও স্থাপন হয়নি। নির্মান প্রতিষ্ঠানকে চলমাল মূল্য পরিশোধ করতে না পারার কারণেই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব সরঞ্জাম সংযোজন সহ ভবনটিতে হাসপাতাল চালু করতে নির্মান প্রতিষ্ঠানকে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু তহবিল সংকটে তা সম্ভব না হওয়ায় নির্মান প্রতিষ্ঠানও অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে আছে।
গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যেহেতু বরিশাল শিশু হাসপাতালের প্রকল্প মেয়াদ অনেক অঅগে শেষ হয়েছে। তাই এর বকেয়া পরিশোধের কোন সুযোগ এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। দেশে এ ধরনের আরো কিছু তামাদী প্রকল্পের বকেয়া পরিশোধ সহ এর কাজ সম্পন্ন করার লক্ষে একটি আলাদা ‘উন্নয়ন প্রকল্প সার-পত্র-ডিপিপি’ তৈরী করে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে বরিশাল শিশু হাসপাতালটিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ডিপিপি’টি অনুমোদন হলে অর্থের সংস্থান করে হাসপাতাল ভবনের অবকাঠামো সহ সার্বিক কাজ আগামী অর্থ বছরে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে ২শ শয্যার এ হাসপাতালটির জনবল মঞ্জুরী সহ তার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। পাশাপাশি বিশেষায়িত এ শিশু হাসপাতালটির ওয়ার্ড, অস্ত্রপচার কক্ষ, পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট সহ অন্যান্য আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সমূহ স্থাপনের সরঞ্জামাদি সংগ্রহেরও কোন উদ্যোগ নেই ।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল হিসেবে নির্মিত এটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড হিসেবে চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে।
নির্মানাধীন এ শিশু হাসপাতালটির প্রথম তলায় জরুরি বিভাগ ছাড়াও রেডিওলজি, ডায়াগনস্টিক ল্যাব ও ডিসপেন্সারি থাকার কথা। আউটডোর থাকবে দ্বিতীয় তলায়। সাথে রেডিও থেরাপি, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি বিভাগ, তৃতীয় তলায় জেনারেল বেড, নিউনেটাল আইসিউ, অপারেশন ব্লক, কনফারেন্স রুম, পোষ্ট অপারেটিভ ব্লক এবং চতুর্থ তলায় প্রশাসনিক ব্লক, সাধারণ শিশু ওয়ার্ড, নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট, ক্যান্টিন, অপারেশন থিয়েটার ও কনফারেন্স রুম স্থাপনের কথা রয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার  শয্যার বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬ শয্যার ওপর এ অঞ্চলের শিশু চিকিৎসা সেবা নির্ভরশীল। ফলে প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার ৮ থেকে ১০গুন পর্যন্ত শিশু রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে পুরো চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমই ভেঙে পড়ছে। শীত মৌসুমে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপে হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতেও পা রাখা দায় হয়ে ওঠে। এরসাথে গত কয়েক বছর ধরেই শিশুদের ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ার রোগীদের মিছিল সামাল দিতে এ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অবস্থা বর্ণনার বাইরে। ফলে একই শয্যায় দুজন ছাড়াও বিপুল সংখ্যক অসুস্থ শিশুকে মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা দিতে গিয়ে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনকি হাসপাতলটির শিশু বহির্বিভাগেও সারা বছরই রোগীর লম্বা লাইন লেগে আছে। কবে সরকারি এ হাসপাতাল থেকে শিশুরা চিকিৎসা সেবা পাবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT