অনিশ্চয়তার মুখে বরিশাল-ফরিদপুর এবং বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা ৬ লেন প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে বরিশাল-ফরিদপুর এবং বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা ৬ লেন প্রকল্প - ajkerparibartan.com
অনিশ্চয়তার মুখে বরিশাল-ফরিদপুর এবং বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা ৬ লেন প্রকল্প

2:43 pm , April 26, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘ কালক্ষেপনে ব্যায় প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি সহ দাতা সংগ্রহে নানামুখি জটিলতায় রাজধানী সহ সারা দেশের সাথে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের মূল সেতুবন্ধন ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি এখনো সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মুখে। বিষয়টি নিয়ে বরিশাল  মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে প্রতিদিনই মানববন্ধন সহ নানা ধরনের আন্দোলন চলছে। সাধারন মানুষের মাঝে এ জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পটি নিয়ে হতাশার সাথে ক্ষোভও বাড়ছে।
অর্থ বরাদ্দ থাকার পরেও নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৪ বছর পরেও ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব না  হওয়ায় ৩গুন ব্যায় বৃদ্ধির প্রস্তাব গত ৬ মাসেরও বেশী সময় ধরে পরিকল্পনা কমিশনে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কয়েক দফা বৈঠকের পরে আগামী মাসে ভূমি অধিগ্রহণের সময়সীমা ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাবটি একনেক-এর সভায় উপস্থাপনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
তবে ইতোপূর্বে কয়েকদফা বৈঠকে মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রস্তাবনা বরিশাল-পটুয়াখালীর সীমান্তবর্তী লেবুখালী পর্যন্ত সীমিতকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও পরে তা পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত বর্ধিত করার বিষয়টি বিবেচনায় এসেছে। তবে সবকিছুর আগে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদনের পরেই কোন পর্যন্ত মহাসড়কটির উন্নয়ন হবে এবং অধিগ্রহণে কত অর্থ ব্যায় হবে তা নির্ধারিত হবে বলে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণে ব্যায় বরাদ্দ বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবনা ইতোপূর্বে একনেক-এর সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা ফেরত পাঠানোর পরে বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন।
বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পটুয়াখালী-পায়রা-কুয়াকাটা মহাসড়কটির ওপরই সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার সড়ক পরিবহন নির্ভরশীল। এমনকি প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ‘পদ্মা সেতু ও  সংযুক্ত এক্সপ্রেসওয়ে’র সুফলও নির্ভর করছে ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি উন্নয়নের ওপর। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু হলেও এখনো তার যথাযথ সুফল মিলছে না বরিশাল অঞ্চলে। এমনকি জাতীয় এ মহাসড়কটি ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ।  বাড়তি যানবাহনের কারণে এ মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত  ৯১ কিলোমিটার মহাসড়কে যানবাহনের গতি যথেষ্ট ধীর। ফলে মহাসড়কটির ক্ষমতার তুলনায় বাড়তি যানবহনের সাথে ৯১ কিলোমিটার মহাসড়কটির অনেকস্থানেই ক্যারেজওয়ে পর্যন্ত অবৈধ দখলদারীর কারণেও এপথ অতিক্রমে প্রায় ৪ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ পথনকশা তৈরী হয়েছিল। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ ও সমীক্ষার পথনকশা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ১৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে একটি আলাদা প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেও চাহিদার অর্ধেকও অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। ইতোমধ্যে জমির দামও প্রায় ৩গুন বেড়েছে। ফলে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য পরিশোধে এখন অন্তত সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে প্রাথমিক প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অপরদিকে বাস্তবতার আলোকে বরিশাল মহানগরীর পরিবর্তে প্রায় ১৬ কিলোমিটার বাইপাস নির্মানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় বড়তি ভূমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। পটুয়াখালীতেও পথনকশায় কিছু পরিবর্তনের পাশপাশি বরিশাল বিমানবন্দর ডাইভার্শন ও ফরিদপুরে একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের পুনর্বাসনেও অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় হবে। সব মিলিয়ে আরো অন্তত ২শ হেক্টর বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ইতোমধ্যে ১৮৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পব্যায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটিতে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ‘সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ সড়ক অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপনের পরে তা অনুমোদন না দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন।
জমির বাজার মূল্য বৃদ্ধি সহ নতুন পথনকশা অনুযায়ী বাড়তি প্রায় ২শ হেক্টর সহ ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমির মূল্য পরিশোধে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে বলে সড়ক অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে এপর্যন্ত বরিশাল সড়ক বিভাগের ৩৩ কিলোমিটার ও মাদারীপুর অংশে ১০ কিলোমিটার অংশে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। অধিগ্রহণকৃত ভূমির অর্থ পরিশোধ হলেও গত অর্থবছরে অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দকৃত ৮৯০ কোটি টাকার প্রায় পুরোটাই ফেরত গেছে। ফলে গত প্র্রায় ৮ বছরে বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটির ভূমি অধিগ্রহণের অগ্রগতি তলানীতেই রয়েছে।
সড়ক অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ভূমি অধিগ্রহণ একটি জটিল বিষয় হলেও এত দীর্ঘ সময় ব্যায় হওয়া করা ঠিক হয়নি। এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে ৬টি জেলা প্রশাসন এবং একাধিক উপজেলা ভূমি অফিসও জড়িত। বিষয়টির সাথে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের ল্যান্ড এক্যুইজিশন দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতার অভিযোগও রয়েছে।
অপরদিকে এডিবি’র অর্থায়নে ২০১৫ থেকে ’১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও পথনকশা অনুযায়ী ২১১ কিলোমিটার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণে ২১ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যায় ধরা হলেও দাতা সংস্থাটি সে সমীক্ষা ও পথনকশা অনুযায়ী এখন কোন অর্থায়নে রাজি না। দাতা সংস্থাটি আগের সবকিছু সংশোধন করে নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ পথনকশা প্রনয়ন করতে বলেছে।  তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার সাথে সড়ক অধিদপ্তরের তরফ থেকে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি যথেষ্ট পিছিয়ে। বছরখানেক আগে এডিবি নতুন করে সবকিছু করতে বললেও অতি জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি নিয়ে সড়ক অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তেমন কোন অগ্রগতি নেই।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহণ, প্রকল্পটির পরিপূর্ণ ডিপিপি প্রনয়ন সহ তা চূড়ান্ত অনুমোদন না করায় এডিবির পক্ষ থেকেও এখন আর কোন আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। নতুন পথনকশা ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার বিষয়টি গত এক বছরেরও বেশী সময় ধরে থেমে আছে। এমনকি কবে নাগাদ এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে তাও বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কিছুটা অনিশ্চয়তাও কাজ করছে।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতোপূর্বে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী-এডিপির সবুজ পাতায় ‘ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প’টি অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সড়ক অধিদপ্তর সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মহল আশাবাদী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT