3:01 pm , April 22, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ লক্ষ্য অর্জন করে আবাদ এবং উৎপাদনের পরেও এবার বরিশালের কৃষকের কাছে পেয়াজ ও গোলআলু ইতোমধ্যে গলার কাটা হয়ে উঠেছে। ১২-১৫ টাকা দরে পেয়াজ কিনে গুদামবন্দী করে আড়তদার ও মজুদদাররা গত সপ্তাহেই দাম দ্বিগুন বৃদ্ধি করায় খোলা বাজারে ৩০ টাকার পেয়াজ এখন ৬০ টাকা কেজি। গোলআলুর মাঠে এ কৃষিপণ্য এখনো ৫-৭ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে। খোলা বাজারে ১৪-১৫ টাকা কেজি। উপরন্তু গত সপ্তা খানেকের বর্ষণে মাঠে থাকা গোলআলু নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা আরো বাড়ছে। ফলে ফড়িয়াদের বেঁধে দেয়া দামেই মাঠ পর্যায়ে বিক্রী করতে বাধ্য হওয়ায় আলু উত্তোলনে কৃষি শ্রমিকের মজুরীও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে ইতোমধ্যে বরিশালের ৯০ভাগ গোলআলু উত্তোলন সম্ভব হয়েছে। পেয়াজ বেশরিভাগ কৃষক মাঠে বিক্রী করে ফেলেছেন।
সদ্যসমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৯৩ হাজার হেক্টরে প্রায় ১৪ লাখ টন পেয়াজ ও ১২ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৩লাখ টন গোলআলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু এ দুটি কৃষিপণ্য বিক্রী করে এবার কৃষকরা লাভের মুখ দেখা দূরের কথা বিনিয়োগকৃত অর্থই তুলে আনতে পারছেন না। গতবছর যেখানে মাঠ পর্যায়ে পেয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রী হয়েছে, সেখানে এবার তা বিক্রী হয়েছে ১৫-২০টাকায়। গতবছর মাঠ পর্যায়ে গোলআলু ২০ টাকায় বিক্রী হলেও এবার তা ১০টাকায়ও বিক্রী করতে পারছেনা কৃষকরা। নিকট অতীতেও বরিশাল সহ সারাদেশে পেয়াজ আবাদ ছিল সীমিত। ফলে বিপুল পরিমান পেয়াজ আমাদানী ছাড়া কোন বিকল্প ছিলনা। তবে সাম্প্রতিককালে সারা দেশের মত বরিশাল অঞ্চলেও পেয়াজ আবাদ বেড়েছে বহুগুন। সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে প্রায় ২.৬০ লাখ হেক্টরে পেয়াজ আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরেরও বেশী। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৪ ভাগ পেয়াজ কৃষকরা ঘরে তুলেছেন। গড় ফলন পাওয়া যাচ্ছে ১৪.৯৬ টন। ফলে এবার ৩৮ লাখ ২১ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দেশে প্রায় ৪২ লাখ টন পেয়াজ উৎপাদনে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
এমনকি সাম্প্রতিককালে দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ আবাদও ধীরে বাড়ছে। তবে রবি ও গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ আবাদের ক্ষেত্রে এখনো কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ও উচ্চ ফলনশীল বীজ সহ আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর না হওয়ায় উৎপাদন কাঙ্খিত মাত্রায় পৌছছে না। এমনকি আমাদের কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-‘বারি’ ইতোমধ্যে উন্নতমান ও উচ্চ ফলনশীল পেয়াজ-এর একাধিক জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষক পর্যায়ে তার বীজ এবং আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর না করায় এতদিন ঘাটতি মোকাবেলাও সম্ভব হয়নি। সম্প্রতিক বছরগুলোতে পেয়াজের আবাদ ও উৎপাদন কয়েকগুন বাড়লেও এখন উৎপাদিত পেয়াজ ক্রমশ কৃষকের গলার কাটা হয়ে উঠতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন কৃষিবীদরা। অথচ গোলআলুর উদ্বৃত্ত উৎপাদনের সাথে পেয়াজ আবাদে যথাযথ প্রনোদনা প্রদান সহ সঠিক দাম নিশ্চিত করতে পারলে পেয়াজ উৎপাদনে খুব শিঘ্রই দেশ স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে সক্ষম হবে বলেও মনে করছেন কৃষিবীদরা।
কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত “বারিÑ১” নামের বীজ থেকে হেক্টর প্রতি ১৬ টন পর্যন্ত উন্নতমানের পেয়াজ উৎপাদন সম্ভব বলে জানাগেছে। এ জাতের পেয়াজ ‘পারপেল ও স্টেম ফাইলাম’ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বলে জানা গেছে।
অপরদিকে এবার রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে ৩ লাখ টন গোলআলু উৎপাদন হলেও অব্যাহত দরপতনে কৃষকের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছে। ফলে আগামীতে এ কৃষিপণ্য আবাদেও কৃষকদের আগ্রহ ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে আছেন কৃষিবীদরা। ‘বারি’ ইতোমধ্যে ‘বারি আলুÑ১ (হিরা), বারি আলুÑ৪ (আইলসা), বারি আলুÑ৭ (ডায়মন্ড), বারি আলুÑ৮ (কার্ডিনাল), বারি আলুÑ১১ (চমক), বারি আলুÑ১২ (ধীরা), বারি আলুÑ১৩ (গ্রানোলা), বারি আলুÑ১৫ (বিনেলা), বারি টিপিএসÑ১ ও বারি টিপিএস-২’ নামের একাধীক উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ উদ্ভাবন করেছে।
এসব উন্নতমানের বীজ থেকে হেক্টর প্রতি ৩০টন পর্যন্ত গোলআলু উৎপাদন সম্ভব। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, গোলআলুর ভাল ফলন পেতে উন্নতমানের ও উচ্চফলনশীল বীজের সাথে সার সহ বালাই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে অধিক আলু উৎপাদনের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যায় হ্রাস করাও সম্ভব। ফলে কৃষকের লোকসানের বোঝা যেমনি কমবে,তেমনি সাধারন মানুষও অপেক্ষাকৃত কম দামে এ কৃষিপণ্য ভোগ করতে পারবেন।