বৃষ্টিতে জনমনে স্বস্তি তবে ফসলের মাঠে অস্বস্তি ! বৃষ্টিতে জনমনে স্বস্তি তবে ফসলের মাঠে অস্বস্তি ! - ajkerparibartan.com
বৃষ্টিতে জনমনে স্বস্তি তবে ফসলের মাঠে অস্বস্তি !

4:04 pm , April 20, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥  অনাবৃষ্টির পরে গ্রীষ্মের প্রথমদিন থেকে বরিশালে আষাঢ়-শ্রাবন ধারার বর্ষণে মাঠে থাকা তরমুজ, মরিচ ও চীনা বাদাম নিয়ে শংকিত কৃষিযোদ্ধারা। গত পহেলা বৈশাখ, গ্রীষ্ম মৌসুম শুরুর দিন দুপুর থেকে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত বৃষ্টিপাত বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকার জনজীবনকে সিক্ত করে। কিন্তু এরপর থেকে গত এক সপ্তাহে বরিশালে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে কৃষকের কপালের বাজ গভীর হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণে কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তবে বরিশাল অঞ্চলে এখনো কালবৈশাখীর আঘাত আসেনি। যদিও দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে চলতি এপ্রিলেও বরিশালে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত নভেম্বরে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ে ভর করে অকাল অতিবর্ষনে উঠতি আউশ ও রোপা আমন সহ বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর  ডিসেম্বরে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৭০% কম। জানুয়ারীতেও পরিস্থিতি প্রায় একই থাকার পরে ফেব্রুয়ারীতে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৯৫% কম। মার্চেও পরিস্থিতি ছিল প্রায় একই। গত নভেম্বর থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৮৫-৯৫ ভাগ কম। ফলে এবার শীতকালীন সবজি ও গম সহ অনেক রবি ফসলের গুনগত মান বিনষ্টের পাশাপাশি মাঠে থাকা প্রায় ৪ লাখ হেক্টরের বোরো ধান নিয়ে কঠিন শংকার মুখে ছিলেন কৃষকরা। এমনকি বৃষ্টির অভাবে সেচ দিতে গিয়ে বোরো উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধির শংকাও ক্রমশ বাড়ছিল। চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ১৮ লাখটন বোরোধান ঘরে তোলার লক্ষ্যে এখনো মাঠে কৃষকরা। কিন্তু বিগত খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরে ২৩ লক্ষাধিক টন আমন চাল উৎপাদনের পরে আরো ৪ লাখ হেক্টরে ১৮ লাখ টন বোরা চাল পাবার লক্ষ্যে এখন দিনরাত মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে মাঠে থাকা বোরো ধানের জমিতে বাড়তি সেচের প্রয়োজন না হলেও অতি বর্ষণ নিয়েও শংকিত কৃষকরা। পাশপাশি এখনো মাঠে থাকা প্রায় ৫ হাজার হেক্টরের তরমুজ সর্বাধিক ঝুঁকিতে। সদ্যসমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশালে প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টরে তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা সারা দেশের আবাদকৃত তরমুজের প্রায় ৬৫%। অপরদিকে বর্তমান বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের বাইরে চলে গেলে মাঠ থাকা মরিচ ও চিনা বাদাম উৎপাদনেও ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক। এখন বরিশালের ফসলী মাঠে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরে মরিচ ও ১৯ হাজার ৩শ হেক্টরে চিনাবাদাম রয়েছে। ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড়ের অকাল অতি বর্ষনে বরিশালে কয়েক লাখ টন তরমুজ বিনষ্ট হয়। এমনকি মাঠে থাকা তরমুজের ক্ষতি সহ্য করতে না পেরে এক কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানের কথা জানিয়ে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ বরিশাল উপকূলের অদূরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। আগামী ৩দিন বরিশাল সহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অস্থায়ীভাবে বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। পাশপাশি বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা হ্রাস পাবার সাথে তাপমাত্রার পারদ আরো বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। এদিকে রোববার দুপুর পর্যন্ত বরিশালে রোদ আর মেঘের পালাবদল চলছিল। রোববার সকাল ৯টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও খেপুপাড়াতে ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সকালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পারদ প্রায় স্বাভাবিক ২৩.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকলেও দুপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ওপরে উঠে যায়।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT