4:03 pm , April 20, 2025

তরিকুল ইসলাম, পিরোজপুর প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় তিল চাষে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। এবার তিল ক্ষেত থেকে শুধু তিলই নয়, মৌমাছির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রাকৃতিক মধুও। এই অভিনব উদ্যোগে চাষিরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
এ বছর ভান্ডারিয়ার গৌরীপুর ইউনিয়নের ঘোষের হাওলায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। তিল ফুলে মৌমাছির আকর্ষণ তৈরি হওয়ায়, স্থানীয় কিছু উদ্যোক্তা ও চাষি মিলে ক্ষেতের পাশে মৌচাষের বাক্স স্থাপন করেছেন। এতে মৌমাছিরা ফুল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পরাগায়ন করছে এবং একইসঙ্গে উৎপাদিত হচ্ছে বিশুদ্ধ মধু।
সরেজমিনে গিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দেখা গেল এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। যতদূর চোখ যায়, ততদূরই শুধু তিল ক্ষেতের সবুজ গালিচা। তিল গাছের ওপর সাদা ও হালকা গোলাপি রঙের ফুলে ভরে আছে পুরো মাঠ, আর তার মাঝে মৌমাছির গুনগুন শব্দ এক অনন্য প্রাকৃতিক সুর তৈরি করছে। প্রকৃতি ও কৃষির এই মিলন যেন নতুন করে ছুঁয়ে যাচ্ছে মানুষের হৃদয়।
কৃষক আবুল হাওলাদার তাদের জানান, বেশ কয়েক বছর তারা পৃথকভাবে কিছু জমিতে তিল চাষ করে আসছেন। এ বছর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরে পরামর্শ ও সহযোগীতায় স্থানীয় প্রায় ৫০-৬০ জন কৃষক একত্রিত হয়ে একটি প্রদর্শণী ব্লকের মাধ্যমে প্রায় ১’শ বিঘা জমিতে বারি-৪ জাতের তিল চাষ করেন। আর এতে প্রতি বিঘায় চাষ, সার, বীজ সব মিলিয়ে ২৩শ থেকে ২৪শ টাকা খরচ হয়েছে। সঠিকভাবে তিল ঘরে তুলতে পারলে খরচ বাদে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় লাভ থাকবে।
স্থানীয় তরুণ কৃষক শাহিন বলেন, এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি। মনে হয় যেন প্রকৃতিই সাজিয়েছে তিল ক্ষেতকে। প্রতিদিন বহু মানুষ এই দৃশ্য দেখতে আসছে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে।
শাহজাহান জানান, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে ক্ষেতগুলোতে গাছের গঠন ও ফুলের পরিমাণ তেমন ভাল হয়নি। তার পরেও মাঠজুড়ে ফুলের সৌন্দর্য আর মৌমাছির কর্মচাঞ্চল্য পুরো পরিবেশকে যেন উৎসবমুখর করে তুলেছে।
এদিকে তিল ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহের জন্য বরগুনা জেলা থেক কিছু পেশাদার মৌচাষী কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াছিন আরাফাত রানা নিজ উদ্যোগে নিয়ে এসছেন। ৫ জনের একটি দল সুইডেন প্রবাসী আরিফুল ইসলামের বাড়ির পাশের বাগানে ১৩০টি মৌ মাছির বাক্স স্থাপন করেছেন।
মৌ চাষী রানা বলেন, এখান থেকে দুইমাসে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার মধু উৎপাদন করতে পারবো।
ইউপি সদস্য জিয়া উদ্দিন বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াছিন আরাফাত রানার প্রচেষ্টায় এই প্রদর্শনীটি করা হয়েছে। তিল গাছের ফুলে মৌমাছির আনাগোনা প্রাকৃতিক মধু উৎপাদনের পাশাপাশি ফসলের ফলন বাড়াতেও সহায়ক হচ্ছে। আগামী বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আরো বৃদ্ধি করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগ ভান্ডারিয়ার কৃষি খাতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিল চাষ যেমন লাভজনক, তেমনি মৌচাষও পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর। আমরা কৃষকদের এই পদ্ধতি আরও ছড়িয়ে দিতে চাই। এটি এখন একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ হয়ে উঠেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা একদিকে তিল চাষ করছি, আর সেই একই ক্ষেতের পাশে বসানো মৌচাক থেকে সংগ্রহ করছি মধু। এটা আমাদের জন্য দ্বিগুণ লাভের সুযোগ এনে দিয়েছে। মৌচাষের মাধ্যমে প্রাকৃতিক মধু উৎপাদন এখন ভান্ডারিয়ার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এখন এই পদ্ধতিতে যুক্ত হতে চাইছেন। উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ সরবরাহ করছি।