মিষ্টি ‘মরিচ-ক্যাপসিকাম’ বিদেশে রপ্তানী হলেও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ মিষ্টি ‘মরিচ-ক্যাপসিকাম’ বিদেশে রপ্তানী হলেও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ - ajkerparibartan.com
মিষ্টি ‘মরিচ-ক্যাপসিকাম’ বিদেশে রপ্তানী হলেও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ

3:04 pm , April 18, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের ‘মিষ্টি মরিচ-ক্যাপসিকাম’ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানী হলেও দাম না পেয়ে কৃষকদের হতাশার সাথে আবাদ আগ্রহে ভাটা পড়ছে। এমনকি বিপুল সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য ক্যাপসিকাম বিক্রী করে এবার বরিশালের কৃষকরা উৎপাদান ব্যায়ও তুলতে পারছেন না বলে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সমাপ্তপ্রায় রবি মৌসুমে বরিশালে প্রায় ৩শ একর জমিতে ‘ক্যলিফর্নিয়া ওয়ান্ডার’ জাতের ক্যাপসিকামের আবাদ হলেও মাঠ পর্যায়ে চাষিরা সম্ভাবনাময় এ রপ্তানী কৃষিপণ্য বিক্রী করছেন মাত্র ১৫-২০ টাকা কেজি দরে। যা বরিশালের খোলা বাজারে ৪০-৫০ টাকা এবং সুপার শপে দেড়শ থেকে ২শ টাকায় বিক্রী হচ্ছে।
মাস দুয়েক পরেই এসব মিষ্টি মরিচ খোলা বাজারে না মিললেও সুপার শপে তা ৪শ টাকা কেজি দরেও বিক্রী হবে বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা। অথচ চাষিরা এবার উৎপাদন ব্যায়ও তুলতে পারছেন না। এ কৃষিপণ্যের বীজ উত্তোলন থেকে মূল গাছের আবাদ ও উৎপাদন যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। নিবিড় নজরদারীর মধ্যেই এ কৃষিপণ্যের বীজ উত্তোলন ও বপন থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত পরিচর্যা করতে হয়।
ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্যাপসিকামে ফাইবার, আয়রন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকায় তা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এটি আমাদের দেশের প্রচলিত সবজি না হলেও সারাবিশে^ ইতোমধ্যে টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হিসেবে অবস্থান তৈরী করেছে।
আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত বছর দশেক ধরে ‘ক্যালিফর্নিয়া’, ‘টেন্ডারবেল’ ও ‘ইয়েলো ওয়ান্ডার’ জাতের ক্যাপসিকাম-এর আবাদ শুরু হলেও গত ৫ বছর ধরে বরিশালের বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকরা ক্যালিফর্নিয়া জাতের এ মিষ্টি মরিচের আবাদ করছেন। নদ-নদী বেষ্টিত বরিশালের দুই সহ¯্রাধিক চরে রপ্তানীযোগ্য এ কৃষিপণ্য আবাদে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও ডিএই থেকে সরেজমিনে কৃষক পর্যায়ে যথাযথ কারিগরি জ্ঞান হস্তান্তর সহ উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল বীজ সরবরাহ সংকটের কারণে এর আবাদ সম্প্রসারণ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছেনি।
এ মরিচের গাছ খরা এবং জলাবদ্ধতা কোনটিই সহ্য করতে পারে না। এ ফসল আবাদ ও উৎপাদনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় বিধায় কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষন ও কারিগরি জ্ঞান হস্তান্তরের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই ও কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট-বারি বিষয়টি নিয়ে এখনো তেমন মনযোগী নয় বলে কৃষকদের তরফ থেকে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী ও অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, খুব শিঘ্রই মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষন ও অবহিতকরণের ব্যবস্থা করছি। বারী ইতোমধ্যে ক্যাপসিকাম-এর একটি উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। ডিএই এবং বারী’র  তরফ থেকে যথাযথ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে উন্নতমানের এ মিষ্টি মরিচ বীজ আবাদ বৃদ্ধি করে উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ জোরদারের কথাও জানান অতিরিক্ত পরিচালক।
একাধিক কৃষিবীদ বলেন, আমাদের দেশের সাধারন মানুষের মাঝে ক্যাপসিকামের ব্যবহার এখনো খুব জনপ্রিয়তা অর্জন না করলেও এর বিশাল রপ্তানী বাজার রয়েছে বিশে^র বিভিন্ন দেশে। আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্যাপসিকাম রপ্তানী বাজারে প্রবেশ করলে তা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম কৃষিপণ্যে পরিনত হতে পারে।
বর্তমানে বিশে^র শতাধিক দেশে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানী হচ্ছে। যেখানে ক্যাপসিকামের অবস্থান তৈরী করা কোন কষ্টসাধ্য বিষয় না। এমনকি বিশে^র অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও সারা বছরই ক্যাপসিকামের আবাদ ও উৎপাদন সম্ভব।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT