4:10 pm , April 17, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কম্যুনিটি সার্ভিসে ‘কংগ্রেসনাল প্রক্লেমেশন’ এবং স্টেট অ্যাসেম্বলীর সাইটেশন পেলেন গোলাম ফারুক শাহীন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।
কম্যুনিটি সার্ভিসে নিরন্তরভাবে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘কংগ্রেসনাল প্রক্লেমেশন’ ও ‘স্টেট অ্যাসেম্বলীর সাইটেশন’ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘অ্যাসাল’র লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের সভাপতি হলেন গোলাম ফারুক শাহীন। ১৩ এপ্রিল বর্ণাঢ্য এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে শাহীন এবং গোটা কমিটির নেতৃবৃন্দ অভিষিক্ত হন। আমেরিকায় দক্ষিণ এশিয়ান শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে কর্মরত ‘এলায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান-আমেরিকান লেবার’ তথা অ্যাসাল’র জাতীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ নেতৃত্ব দেন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের।
এটি হচ্ছে ২১তম চ্যাপ্টার। নিউইয়র্ক হতে শুরু অ্যাসালের কার্যক্রম এ যাবত ১০টি স্টেটে বিস্তৃত হয়েছে ২১টি চ্যাপ্টারের মাধ্যমে। মাফ মিসবাহ এ সময় বলেন, ১০ হাজারের অধিক সদস্য মূলধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে কম্যুনিটির অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে আপোসহীনভাবে সরব রয়েছেন। ইতিমধ্যেই অনেক নির্বাচনে অ্যাসালের সমর্থিতরা বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ের এই ধারায় লং আইল্যান্ডের এই চ্যাপ্টার অপরিসীম অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করছি।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু এ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানের সময় গোলাম ফারুক শাহীনের বিগত বছরগুলোর কল্যাণ ও সেবামূলক কর্মকান্ডের প্রশংসা করার পরই মার্কিন কংগ্রেসের প্রক্লেমেশন শাহীনের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয় কংগ্রেসম্যান টম সউজির প্রতিনিধি হিসেবে মেঘান বেল। একইভাবে প্রশংসার বাক্য উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলীর সাইটেশন শাহীনকে প্রদান করেন অ্যাসেম্বলীম্যান কাওয়ানি বি ও’ফ্যারো। এ সময় সকলে দাঁড়িয়ে গোলাম ফারুক শাহীনকে বিশেষভাবে অভিনন্দিত করেন।
লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাগণের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অ্যাসালের জাতীয় কমিটির সভাপতি মাফ মিসবাহ।
ফার্মিংডেল সিটির নির্মল আনন্দদায়ক পরিবেশে অবস্থিত কোর্টইয়ার্ড ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে অভিষেক উৎসবে সকলকে অভিভ’ত করে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের জন্যে ‘অ্যাসাল’র মত সংগঠনের অপরিহার্যতার আলোকে চমৎকার বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্থানীয় ডিয়ারপার্ক হাই স্কুলের দ্বাদশ গ্রেডের ছাত্রী তনিকা শিকদার। তিনি বলেছেন, বহুদিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ানরা কঠোর শ্রম দিচ্ছেন। ভোরে ঘুম থেকেই কাজ শুরু করেন এবং মধ্যরাতে ঘুমুতে যাচ্ছেন। স্বপ্নবাজদের অনেকেই ব্যবসা চালু করেছেন। ট্যাক্সি চালাচ্ছেন। শিক্ষকতা করছেন। চিকিৎসা-সেবায়ও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তবুও দক্ষিণ এশিয়ানদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় মার্কিন প্রশাসন ততটা আন্তরিকতা প্রদর্শন করছে না। এহেন অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। এখন সময় হচ্ছে আমাদের। সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হবার এবং সে কারণেই আমি অ্যাসালের প্রয়োজনীয়তা আরো বিস্তারিতভাবে অবহিত করতে এসেছি। হাই স্কুলের ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট তনিকা শিকদার বলেন, অ্যাসাল কেবলমাত্র সংগঠন নয়, এটি হচ্ছে একটি আন্দোলন। একটি পরিবার। অ্যাসাল হচ্ছে নতুন একটি কম্যুনিটি জেগে উঠার অন্যতম অবলম্বন, যাকে হৃৎপিন্ডও বলা যেতে পারে। আমরা যারা ন্যায় বিচার, মর্যাদাসম্পন্ন জীবন ব্যবস্থা এবং সমঅধিকারে বিশ্বাসী-সকলের জন্যেই অ্যাসাল অন্যতম অবলম্বন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অ্যাসাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে: সকলকে সংগঠিত করা, কর্মক্ষম করা, শিক্ষার মাধ্যমে সচেতন করা, সারা আমেরিকার দক্ষিণ এশিয়ানদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতার দিগন্ত প্রসারিত করা। আর এর অর্থ হচ্ছে-আপনারা, আমাদের অভিভাবকরা, আমাদের শিশুরা, প্রতিবেশীরা, সহকর্মীরা। কারণ এই যুদ্ধে কাউকে দূরে রাখা চলবে না। ছাত্র-সমাজের নেতৃত্ব প্রদানের অভিজ্ঞতার আলোকে তনিকা আরো বলেন, আমরা এখানে এসেছি শুধু গলাবাজির জন্যে নয়, কাজ করতে, প্রত্যাশার পরিপূরক সুফল আনতে। আমাদের লড়তে হবে ন্যায্য পারিশ্রমিকের জন্যে, কর্মস্থলে সম্মান পাবার পথ সুগম করতে এবং অভিবাসনের ভঙ্গুর অবস্থার অবসান ঘটাতে।
তনিকার বক্তব্যকে অ্যাসালের প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকারের পরিপূরক হিসেবে অভিহিত করে অ্যাসালের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিনের আহবানে সকলে দাঁড়িয়ে তনিকাকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান। আর এভাবেই নয়া কম্যুনিটি হিসেবে বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশী তথা দক্ষিণ এশিয়ানদের অবস্থানকে আরো মজবুত করার ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবার একটি চিত্র দৃশ্যমান হলো বলে অনেকে মন্তব্য করেন। এরপরই লং আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাগণকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তারা হলেন : গোলাম ফারুক শাহীন-সভাপতি, সেলিম আদমজী-সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ জিল্লুর রহমান- করেসপন্ডিং সেক্রেটারি, রফিক খান-এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর, মিয়া আলিম পাখি-পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর, সিকদার টাভরেজ-ইমিগ্রেশন ডাইরেক্টর, মোহাম্মদ শওকত আলী-ট্রেজারার, ডা: শাহনাজ আলম-উইমেন্স কমিটি চেয়ার, বাবর ভূঁইয়া-ডাইরেক্ট অব অর্গানাইজেশন, আবুল মেজবাহ উদ্দিন (হেলাল)-ভাইস প্রেসিডেন্ট , শাজাহান সিরাজ-ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইঞ্জিনিয়ার কাওছার আহম্মেদ- ভাইস প্রেসিডেন্ট, কাজী ইসলাম জুয়েল-ভাইস প্রেসিডেন্ট, আবু তৈয়ব-ভাইস প্রেসিডেন্ট, এক্সিকিউটিভ মেম্বার মোহাম্মদ আজম মানিক, সুলতানা খানম এবং ওমর ফারুকী।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে এই চ্যাপ্টার গঠিত হলেও কেউই এলাকাবাসীকে তেমনভাবে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির সদস্য ও কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট গোলাম ফারুক শাহীন তার কানেকশনকে ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ানদের অ্যাসালের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন বলে বক্তারা উল্লেখ করেছেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন লং আইল্যান্ডের মসজিদ দারুল কোরআনের সভাপতি ফুয়াদ খান, স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান কাউয়ানি চীফ অব স্টাফ বায়রন ম্যাকক্রে এবং অ্যাসালের জাতীয় কমিটির মহাসচিব করিম চৌধুরী।