ঘটছে সংঘর্ষ, মাদক সেবন, ইভটিজিং ও ছিনতাই এর ঘটনা ঘটছে সংঘর্ষ, মাদক সেবন, ইভটিজিং ও ছিনতাই এর ঘটনা - ajkerparibartan.com
ঘটছে সংঘর্ষ, মাদক সেবন, ইভটিজিং ও ছিনতাই এর ঘটনা

4:18 pm , April 13, 2025

বখাটেদের দখলে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গতকাল রোববার বেলা ১২ টায় নগরীর আমতলা মোড় সংলগ্ন স্বাধীনতা পার্কে বেশ কিছু কিশোর তরুনদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে রক্তাক্ত দুই কিশোরকে উদ্ধার করে শেরে বাংলা মেডিকেলে নেয় স্থানীয়রা। হট্রোগোলে উৎসুক জনতার ভীড় থেকে জানাযায় পার্শবর্তী একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা নিয়ে ঘটেছে সংঘর্ষ। এর কিছুদিন আগে একই স্থানে বখাটেদের আক্রমনের শিকার হয় শেরে বাংলা মেডিকেলে কর্মরত এক নারী। ঐ সময়নারী ও তার সাথে থাকা এক যুবকের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বখাটেরা। এমন ঘটনা হর হামেশাই ঘটছে নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র স্বাধীনতা পার্কটিতে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। আগের মত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত আনাগোনা না থাকায় পরিস্থিতি বিগত কয়েক মাস ধরে নিয়ন্ত্রনের বাইরে বলে জানায় তারা। এমন অবস্থা নগরীর প্রায় প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রের। হঠাৎ করেই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সি কিশোর তরুনরা। প্রতিনিয়তই দলগত সংঘর্ষে জড়ানো, প্রকাশ্যে মাদক সেবন, ইভটিজিং এমনকি কোন কোন স্থানে ছিনতাই এর মত অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষনিক অভিযোগ না মেলায় নিয়ন্ত্রনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। সীমিত সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের একই সময়ে খবর না পেলে সব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেকটাই কস্টসাধ্য বিষয় বলে তাদের বক্তব্য।
নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলস্ পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, ৩০ গোডাউন, স্বাধীনতা পার্ক, কাঞ্চন পার্ক, সুকান্ত শিশু পার্ক, বেলতলা ভেরিবাধ এলাকা। নগরীর সাধারন বাসিন্দারা ছুটির দিন সহ প্রায় প্রতিদিন এসকল স্থানে পরিবার নিয়ে অবসর যাপনে যাচ্ছেন। বিগত ২/৩ মাস থেকে এই স্থানগুলোতে কিশোর বখাটেদের উৎপাতে নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পূর্বে কিছুটা নিয়ন্ত্রনে থাকলেও এখন প্রতিনিয়ত তাদের করা নানা ধরনের অপকর্মে স্থানগুলোতে পরিবার নিয়ে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে সাধারন বাসিন্দারা।
এমাসের শুরুতে বেলস পার্কে পরিবার নিয়ে এসে তুচ্ছ কারনে বখাটেদের হামলার শিকার হন কালাম শেখ নামের ব্যাক্তি। তিনি জানান, মাঠের মধ্যে পরিবার নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমন সময় দৌড়ে এসে তাদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পরে দুই কিশোর। প্রতিবাদ করলে হাতাহাতি শুরু হয়। পাশের লোকজন এসে প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এই ঘটনার পর থেকে লজ্জায় আর বেলস পার্ক যাননি বলে জানান। এ ছাড়াও বেলস পার্কে কেডিসি বস্তি এলাকার বখাটেরা এসে মাদক সেবন সহ বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা পার্কে এখন আর ভদ্র সমাজের লোকজন আসেনা বলে অভিযোগ করেছে একাধিক ব্যাক্তি। ভাটারখাল বস্তি এবং কেডিসি বস্তির কিছু বখাটেদের দখলে এখানে চলে সব ধরনের অপকর্ম। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি বেশ ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তবে দিনের বেলাতেও এই পার্কে আসা দর্শনার্থীরা নিরাপদ নয় বলে জানাগেছে। দুই বস্তি থেকে মাদক কিনে প্রসাশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই পার্কটি ব্যাবহার করেই আসা যাওয়া করে অপরাধীরা। রাতের বেলা ছোট বড় ছিনতাই এর ঘটনাও ঘটে বলে জানা গেছে।
৩০ গোডাউনে নিয়মিত আসা দর্শনার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, অফিসের শেষে প্রতিদিন আড্ডা দিতে বন্ধুরা মিলে ৩০ গোডাউন আসা হয়। নগরীর ছেলে তাই ছোট বেলা থেকেই এই স্থানটি পছন্দের। কিন্তু কিছুদির আগেও যে নিরাপত্তা ছিল তা এখন নেই ৩০ গোডাউন এলাকায়। কিশোর বয়সিদের উৎপাত বেড়েছে ভয়ংকর আকারে। তারা প্রকাশ্যে মাদক সেবন সহ সব ধরনের অপকর্ম করছে সকলের সামনেই। ১০/১৫ জনের দলে আসে তারা। বাধা দিলে তাদের হামলার শিকার হতে হয় তাই কেউ প্রতিবাদও করেনা। বর্তমানে গোডাউনের নদীর পার এলাকার সাইলো জেটির পার্শবর্তী স্থানটিতে সন্ধ্যা হলেই গাজার আসর হয় বলে জানান তিনি। পুলিশের উপস্থিতি একেবারেই নেই বললেই চলে তাই এমন অবস্থা বলে অভিযোগ করেন এই ব্যক্তি। এমন অবস্থা নিয়ন্ত্রনে না আনলে এসকল স্থানে ভদ্রলোকের আনাগোনা কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যক্তি।
ভয়ংকর অবস্থা বিএম স্কুল সংলগ্ন কাঞ্চন পার্কটির। এখানে প্রতিদিন হাটতে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা তন্নী আক্তার নামের নারী। তিনি জানান, সন্ধ্যার পর পার্কে মাদকের আড্ডা হয় প্রকাশ্যে। বেশ বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যেই তাদের এখানে আসতে হয়। একেবারেই অল্প বয়সিরা এ ধরনের অপরাধ করলেও কেউ কিছু বলতে পারেনা তাদের। এই এলাকায় তার পরিচিত এক ব্যাক্তি কিছুদির পূর্বে ছিনতাই এর শিকার হয়েছে বলেও জানায় এই নারী। এদের নিয়ন্ত্রনে আইনশৃংখলা বাহিনীর আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাগুলো ঘটছে ঠিকই, তবে তারা তাৎক্ষনিক খবর না পেলে কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এছাড়া থানায় যে সংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছে তাতে সর্বদা সব স্থানের নিরাপত্তা দেয়া কিছুটা কঠিন। তবে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন স্থানীয়রা এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করছেন তাই তাদের উচিৎ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে পুলিশকে অবহিত করা। এছাড়া বিগড়ে যাওয়া কিশোর তরুনদের অভিভাবকদেরও উচিৎ তাদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রন করা। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে এ বিষয়ে তাদের সজাগ ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আজ পহেলা বৈশাখে বিনোদন কেন্দ্রগুলো যেন সাধারন বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ থাকে সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ বলে জানান মিজানুর রহমান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT