পান্তা ইলিশের ধাক্কায় বরিশালে বিধি ভঙ্গের প্রতিযোগীতা ! পান্তা ইলিশের ধাক্কায় বরিশালে বিধি ভঙ্গের প্রতিযোগীতা ! - ajkerparibartan.com
পান্তা ইলিশের ধাক্কায় বরিশালে বিধি ভঙ্গের প্রতিযোগীতা !

3:27 pm , April 13, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বর্ষবরণের পান্তা-ইলিশের ধাক্কায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের প্রবণতায় উদ্বিগ্ন মৎস্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি বরিশালের প্রশাসনও। দেশব্যাপী জাটকা আহরণে ৩০ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার সাথে বরিশাল সহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় মার্চ-এপ্রিল মাসে অভয়াশ্রম সমূহে সব ধরনের মৎস্য অহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ এর নামে এবারো পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশের আয়োজন হচ্ছে। তবে এবার বাংলা বর্ষবরণে বরিশালের বিএম স্কুলমাঠে বৈশাখী মেলার অনুমোদন দেয়নি মহানগর পুলিশ।
বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলে শোভাযাত্রা ছাড়াও নানা ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বরিশাল চারুকলা ইনস্টিটিউট নগরীতে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। জেলা প্রশাসনও নগরীর বেলস পার্কে বৈশাখী মেলার আয়োজন সহ সার্কিট হাউজ থেকে আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছে।
তবে এবার মহানগর পুলিশের অনুমোদন না মেলায় বিএম স্কুল মাঠে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর দুদিনের বৈশাখী মেলা সংক্ষিপ্ত করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই সীমিত রাখা হয়েছে।
এবার অতীতের মত এবার প্রকাশ্যে পান্তা ইলিশের আয়োজন না থাকলেও গত সপ্তহ খানেক ধরেই মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তের মাঝে জাটকা ইলিশ কেনার প্রবনতা লক্ষ্য করা গেছে। ফলে বাজারে দাম চড়া । এক কেজি ও তার ওপরের সাইজের ইলিশ বিক্রী হচ্ছে দুই হাজার থেকে ২২শ টাকা কেজি দরে। ৮শ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের ইলিশ ১৪-১৫শ টাকা কেজি। ১০ ইঞ্চির নীচের জাটকাও বিক্রী হচ্ছে (প্রকাশ্যে ও গোপনে) ৫শ থেকে ৭শ টাকা কেজি দরে।
নগরীর বিভিন্ন নামিদামী রোস্তোরাঁগুলোতেও এবার কিছুটা আড়াল রেখেই নির্ধারিত ও নিয়মিত মেহমানদের জন্য পান্তা ইলিশের আগাম বার্তা দেয়া হয়েছে।
বাংলা বর্ষবরণে ইলিশ অন্যতম অনুসঙ্গ হওয়ার কারণেই গত কয়েকদিনে বাজারে দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই জাটকার আহরণও বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মধ্যেই গত দিন পনের যাবত দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে ও গোপনে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণ, পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।
ইতোপূর্বে এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩০ নভেম্বর থেকে ৩০ মে হলেও ২০১৭ সাল থেকে তা আরো দুমাস বৃদ্ধি করে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন করা হয়। জাটকার সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন এনে ৯ ইঞ্চির পরিবর্তে এখন ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত ইলিশ পোনাকে জাটকা হিসেবে আখ্যায়িত করে তার আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পাশাপাশি মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে নিম্ন মেঘনা, শাহবাজপুর চ্যানেল ও তেতুলিয়া নদীতে এবং নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহ মতলব ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষনা করে সব ধরনের মৎস্য আহরণ, বিপণন ও পরিবহন নিষিদ্ধ রয়েছে। একইভাবে আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বর-জানুয়ারি মাসের সময়কালেও অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিবছর দেশে অবৈধভাবে যে পরিমান জাটকা আহরন হচ্ছে, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও ইলিশের উৎপাদন আরো ১ লাখ টন বাড়বে। গত অর্থবছরে দেশে ইলিশের সহনীয় আহরণ ছিল প্রায় ৫.২৯ লাখ টন।
দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এখনো প্রায় ১%। পাশাপাশি মৎস্য সম্পদে ইলিশের একক অবদান প্রায় ১১%। প্রায় ৬লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণে জড়িত। উপরন্তু আরো প্রায় ২০-২৫ লাখ মানুষ ইলিশ পরিবহন, বিপণন সহ জাল ও নৌকা তৈরীর কাজে জড়িত বলে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। এবারো নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে ৪ মাসের জন্য প্রায় ২৯ হাজার টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর মতে বিগত মূল প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনে উপকূলের ৭ হাজার ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটারের প্রজনন ক্ষেত্রে প্রায় ৫২ ভাগ মা ইলিশ মুক্তভাবে ভাসমান ডিম ছেড়েছে। ফলে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে বলে মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে।

 

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT