3:05 pm , April 12, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কৃষি অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে গোল আলুর অবাদ হলেও পুরো রবি মৌসুমজুড়ে বৃষ্টির অভাবে গড় ফলন কিছুটা হ্রাস পাবার সাথে দরপতনে মারাত্মক ক্ষতির কবলে কৃষিযোদ্ধারা। ফলে লোকসানের কবলে পরে হতাশ কৃষক। বৃষ্টির অভাবে ফলন হ্রাস পেলেও গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশী উৎপাদনের পরেও কৃষকের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটছে দর পতনে। এবার মাঠ পর্যায়ে মৌসুুমজুড়েই ৭-১০ টাকার বেশী গোল আলু বিক্রী করতে পারছেন না কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে এবার বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে গোল আলুর আবাদ হলেও গড় ফলন গত বছরের ২৪.৭৮ টনের স্থলে ২৪.৭৬ টনে হ্রাস পেয়েছে। ফলে গত বছর ১১ হাজার ২৭৭ হেক্টরের স্থলে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে গোল আলুর আবাদ হলেও উৎপাদন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫শ টন থেকে ২ লাখ ৮১ হাজার ১৫৭.৫৬টনেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
গত বছর স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের পরে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে অকাল অতি বর্ষণের ক্ষতি কাটিয়ে ফলন ছিল ২৪.৭৮ টন। কিন্তু এবার পুরো রবি মৌসুমজুড়েই বরিশাল অঞ্চলে কোন বৃষ্টির দেখা মেলেনি। গত অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এর ভর করে অকাল বর্ষণের পরে গত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমান প্রতিমাসেই ৮০-৯০% পর্যন্ত কম। ফলে পুরো রবি মৌসুমের কোন ফসলই বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ফলন ঘাটতি দেখা দেয়। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা বিধায় দক্ষিণাঞ্চলে কিছুটা বিলম্বেই রবি মৌসুম শুরু হওয়ায় আবাদ ও উৎপাদন বিলম্বিত হয়ে থাকে। তার পরেও সমাপ্তপ্রায় রবি মৌসুমে বরিশালে প্রায় ১৭ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। সবজির বন্যায় এবার সাধারন মানুষ অনেক সস্তায়ই সব ধরনের সবজি কিনতে পেরে স্বস্তিতে আছেন। তবে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিউট-বারি’ উদ্ভাবিত উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ ও এর আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করলে দক্ষিণাঞ্চলেই গোল আলুর আবাদ ও উৎপাদন অন্তত দেড়গুন বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবীদরা। ‘বারি’ ইতোমধ্যে ‘বারি আলুÑ১ (হিরা), বারি আলুÑ৪ (আইলসা), বারি আলুÑ৭ (ডায়মন্ট), বারি আলুÑ৮ (কার্ডিনাল), বারি আলুÑ১১ (চমক), বারি আলুÑ১২ (ধীরা), বারি আলুÑ১৩ (গ্রানোলা), বারি আলুÑ১৫ (বিনেলা), বারি টিপিএসÑ১ ও বারি টিপিএস-২’ নামের একাধীক উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ উদ্ভাবন করেছে। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এসব উন্নতমানের বীজ থেকে হেক্টর প্রতি ৩০টন পর্যন্ত গোলআলু উৎপাদন সম্ভব। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, গোলআলুর ভাল ফলন পেতে উন্নতমানের উচ্চফলনশীল বীজের সাথে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। ডিএই’র মতে ২০১০-১১ কৃষিবর্ষে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ১০ হাজার ৯৫২ হেক্টর জমিতে গোলআলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাস্তব আবাদ ছিল ১০ হাজার ৬০৫ হেক্টরে। যা ঐ বছরের লক্ষ্যমাত্রা এবং আগের বছরের প্রকৃত আবাদের চেয়েও কম ছিল। তবে ২০১১-১২ কৃষিবর্ষে বরিশালে ১.৯১ লাখ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ অঞ্চলের চাষীদের নিরলস পরিশ্রমে ২.৩৬ লাখ টন গোল আলু উৎপাদন সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তি বছরগুলোতে তা প্রায় একই পর্যায়ে থেকে চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ১১ হাজার ৩৫৭ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে আবাদ করে গোল আলুর উৎপাদনও প্রায় ৩ লাখ লাখ টনে উন্নীত হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। তবে বরিশাল অঞ্চলে অনেক সম্ভাবনার গোলআলুর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী বছরগুলোতে উচ্চফলশীল উন্নত আলুবীজ সরবরাহ সহ মাঠ পর্যায়ে কৃষিযোদ্ধাদের কাছে আবাদ প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়ারও তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবীদরা।