2:49 pm , April 10, 2025

শব্দদূষনে প্রতিনিয়তই
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারা দেশের ইলিশ আহরনের জন্য গুরুত্বপূর্ন নদ-নদীগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বরিশাল বিভাগ কেন্দ্রীক। দেশে আহরিত ইলিশের একটি বড় অংশের যোগান হয় এখানকার বিভিন্ন নদনদী থেকে। তবে দিন দিন বানিজ্যিক ব্যবহার বেড়ে চলায় ইলিশের জন্য অনুপযোগী হয়ে পরছে বরিশালের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলো। মুলত শব্দদূষণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ নদনদীতে কমতে শুরু করেছে ইলিশ মাছের আনাগোনা। দ্রুতগতি ও উচ্চ শব্দের নৌযান চলাচল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। এর সাথে বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য ব্যাবস্থাপনায় ব্যাবহার হওয়া নদীতে থাকছেনা ইলিশের জন্য প্রয়োজনীয় আরামদায়ক পরিবেশ। সূত্র মতে, বরিশাল জেলায় মোট ১২ টি নদী রয়েছে। এর মধ্যে কীর্তনখোলা নদী (দৈর্ঘ্য-৭০ কি:মি:), খয়রাবাদ নদী (দৈর্ঘ্য-৪১ কি:মি:), শায়েস্তাবাদ নদী (দৈর্ঘ্য-১৫ কি:মি:), তেতুলিয়া নদী (দৈর্ঘ্য-৫৫ কি:মি:), সাতলা নদী (দৈর্ঘ্য-২৪ কি:মি:), নয়াভাংগানী নদী (দৈর্ঘ্য-৩০ কি:মি:), উজিরপুর নদী (দৈর্ঘ্য-২৫ কি:মি:), সন্ধ্যা নদী (দৈর্ঘ্য-৬১ কি:মি:), জয়ান্ত নদী (দৈর্ঘ্য-৪০ কি:মি:), আড়িয়াল খাঁ নদী (দৈর্ঘ্য-৫৫ কি:মি:) এবং রাঙ্গামাটিয়া নদী (দৈর্ঘ্য-৪০ কি:মি:)। বরিশালের এসকল নদী থেকে প্রচুর পরিমানে ইলিশ আহরিত হয়ে এসেছে বছরের পর বছর ধরে। এসকল নদীর ইলিশ স্বাদে ও মানেও বেশ ভাল হিসেবে সুনাম রয়েছে। কিন্তু ধিরে ধিরে নাম উল্লেখিত প্রতিটি নদীর ইলিশের পরিমান কমে আসছে বলে জানিয়েছে জেলেরা। নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ শিকার, প্রচুর পরিমানে জাটকা নিধনের সাথে সাথে এখন শব্দদূষনের কারনে মাছের আনাগোনা কমে গেছে বলে তথ্য মিলেছে।
শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করা বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, নদীতে শব্দদূষণের কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ইলিশ মাছের প্রজনন ও মাইগ্রেশনে সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে নদীতে কী পরিমাণ শব্দদূষণ হচ্ছে, সেটা এখনো জরিপ করা হয়নি। তবে পরিকল্পনা রয়েছে নিরুপনের।
বর্তমানে বরিশালের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নদীতে দ্রুতগতির স্প্রিড বোট, ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, লঞ্চ, পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করে। পূর্বে এই চলাচলের পরিমান কম থাকলেও বানিজ্যিক উন্নয়নের সাথে সাথে এই ব্যাবহার বেড়েছে কয়েকগুন। এসব নৌযান থেকে অধিক শব্দ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া প্রায় সব নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। বালু উত্তোলনের সময় নদীর গভীরে শব্দদূষণ হচ্ছে। বালু পরিবহনের বাল্কহেড অনেক গভীরে গিয়ে চলাচল করে। এসব নৌযান থেকেও স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি শব্দ হয়। চলাচলের সময় নদীর পানিতে একটি কম্পন সৃষ্টি হয়। এতে ইলিশ মাছ ভয় পায়। সাগর থেকে নদীতে এসে ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। তখন দ্বিতীয়বার আর নদীতে ফিরতে চায় না। অন্যদিকে স্বাদের ইলিশের জন্য জেলার অন্যতম নদী কীর্তনখোলা। এই নদীর পাশে থাকা তিন কলকারখানার বর্জ্য নদীর একটি বড় অংশে দূষন ছড়াচ্ছে। অলিম্পিক সিমেন্ট লিমিটেড, অপসোনিন ঔষধ লিমিটেড এবং সামিট পাওয়ারের মত বড় শিল্প কলকারখানার কারনে কীর্তনখোলার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য কিছুটা হলেও বিঘিœত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নগরীর সচেতন বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছ বেশি আসে। বর্তমানে মেঘনা নদী রাতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দখলে থাকে। কয়েক শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে। এই সমস্যা রয়েছে বরিশালে আভ্যন্তরিন প্রতিটি নদীতে। এ ছাড়া বালু উত্তোলনের যন্ত্রের তেল ছড়িয়ে পড়ে নদীতে দূষণ বাড়াচ্ছে। যার কারণে ইলিশ মাছ অনিরাপদ মনে করে নদীতে আসা কমিয়ে দিচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ে এখনো অত গভীরভাবে কাজ করা হয়নি। তবে ইলিশ কমে যাওয়ার পেছনে এটিও অন্যতম কারণ। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন প্রল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, বড় বড় আধুনিক ইঞ্জিনচালিত নৌযানের কারণে নদীতে শব্দদূষণ হচ্ছে। এতে ইলিশ মাছ ভয় পাচ্ছে। এটি নিয়ে এখনো বিস্তারিত গবেষণা নেই।