দাদন থেকে রক্ষা করতে জেলেদের জন্য পৃথক ব্যাংক তৈরির ঘোষণা মৎস্য উপদেষ্টার দাদন থেকে রক্ষা করতে জেলেদের জন্য পৃথক ব্যাংক তৈরির ঘোষণা মৎস্য উপদেষ্টার - ajkerparibartan.com
দাদন থেকে রক্ষা করতে জেলেদের জন্য পৃথক ব্যাংক তৈরির ঘোষণা মৎস্য উপদেষ্টার

2:47 pm , April 8, 2025

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ইলিশ মাছের বাড়ি ভোলা এবং বিভাগ হচ্ছে বরিশাল এই দাবী করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আমরা ইতিমধ্যেই জেলেদের ভাগ্যের উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছি। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে দাদন থেকে রক্ষা করতে জেলেদের জন্য পৃথক ব্যাংক তৈরির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। যেজন্য ডিও লেটারও জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জাটকা ধরার জাল বন্ধ করতে শুধু জেলেদের জালই জব্দ করা হচ্ছে না, একইসাথে কারেন্ট জাল তৈরির কারখানাও বন্ধ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই খাদ্য বরাদ্দ পূর্বের তুলনায় হাফ মেট্রিকটন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী সব জেলেদের কাছে উন্নত ইলিশ ধরার জাল প্রদানের পাশাপাশি যৌক্তিক দাবীসমূহ বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন ফরিদা আখতার।
“জাটকা ধরা বন্ধ হলে ইলিশ উঠবে জাল ভরে” এই  শ্লোগান নিয়ে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ  উদ্বোধন ও নৌ-র‌্যালির আয়োজন মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে  মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আরো বলেন, জাটকা সংরক্ষণ অভিযান যথেষ্ট ফলপ্রসু হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি মা ইলিশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। আগে নিষেধাজ্ঞা ৬৬ দিন ছিলো, আমরা সেটা কমিয়ে ৫৮ দিন করেছি। তিনি এসময় মঞ্চের সামনে উপস্থিত  প্রায় ১০ হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীদের জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বরিশালের বেলস পার্ক ময়দানে বিশাল তাবু টাঙিয়ে ছয়টি টেলিভিশন স্ক্রিনে এই আয়োজনে অংশ নেন বরিশালের ছয় জেলার ৪২ উপজেলা থেকে আগত জেলে ও মৎস্যজীবীরা।  বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি এবং জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ব্যানারে জড়ো হওয়া জেলে সম্প্রদায় উপদেষ্টা ও অতিথিবৃন্দের কাছে তাদের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবী তুলে ধরেন।
দাবীসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- বিজিএফ ৪০ কেজি এর পরিবর্তে ৬০ কেজি চাল এবং নগদ ২০০০ টাকা বরাদ্দ করা, বৈধকালীন সময়ে মাছ ধরা অবস্থায় কোন জেলে মারা গেলে তাহলে তাঁর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য এককালীন ৫ লাখ টাকা সমিতির সুপারিশের মাধ্যমে প্রদান করার, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের পরিচালিত অভিযানে মৎস্যজীবী সমিতির মনোনীত মাঝি নিয়োগ, মৎস্যজীবীদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মৎস্যজীবীদের নামে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করা,  ২০১৩ সালের পরিপত্র পরিবর্তন পূর্বক ২০০৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখা এবং খাদ্য বা অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ ব্যবস্থার তালিকা ও মাস্টার রোলে মৎস্যজীবী প্রতিনিধির স্বাক্ষর অবশ্যই থাকতে হবে।
বেলস পার্কের এই আনুষ্ঠানিকতা শেষে বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী ডিসিঘাট থেকে সরকারি বড় নৌযানে উপদেষ্টা সহ অতিথিবৃন্দকে বহন করে। একইসাথে  প্রায় শতাধিক ট্রলার, স্প্রীডবোট নিয়ে নৌ-র‌্যালি শুরু হয় দুপুর দেড়টায়। নদীপথে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে এই নৌ-র‌্যালি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুর রউফ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আয়োজনে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার, ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন সহ নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ এর কর্মকর্তারা। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি সেলিম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল পন্ডিত, বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস র‌্যালি পূর্ব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
এর আগে মৎস্যজীবীদের সমস্যা চিহ্নিত করে বরিশালের ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম এবং বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার মৎস্যজীবী নেতা ইসরাইল পন্ডিত এর দাবীর সাথে ব্যাংক, বীমা, ভাসমান হাসপাতাল ও ভাসমান এ্যাম্বুলেন্স এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। এসময় ডিআইজি মঞ্জুর মোর্শেদ আলম জেলেদের তালিকা সঠিকভাবে তুলে ধরা এবং তাদের খাদ্য ও আপদকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। একই সময় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার তালিকা পুন:মুদ্রন এবং সঠিকভাবে তুলে ধরতে গঠিত কমিটিতে স্থানীয়  মসজিদের ঈমাম এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজ বা সৈনিকদের যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। যা সমস্বরে সমর্থন করেন উপস্থিত জেলে ও মৎস্যজীবীরা।
হিজলা, মুলাদি, বানারিপাড়া, মেহেন্দিগঞ্জের কয়েকজন জেলে বলেন, জাটকাতো মানুষ কিনতে চায়না। আমাদের কেউ কেউ জাটকা ধরলেও তা প্রশাসন আটকে নিয়ে যায়। তারা ওগুলো বিক্রি বা বন্টন করে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রায় ২ মাস আমাদের জীবন জীবীকার প্রয়োজনীয় উপকরণ পেলে কখনোই জাটকা সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হবে না বলে জানান জেলেরা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT