কাজে ফিরছেন মানুষ: সড়ক ও নৌপথে উৎসব শেষে বিষন্নতা কাজে ফিরছেন মানুষ: সড়ক ও নৌপথে উৎসব শেষে বিষন্নতা - ajkerparibartan.com
কাজে ফিরছেন মানুষ: সড়ক ও নৌপথে উৎসব শেষে বিষন্নতা

2:54 pm , April 5, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বাসের হর্ণ কিম্বা লঞ্চের হুইসেল। দুটোতেই এখন ক্রন্দনরোল ভাসছে বাতাসে। সড়ক ও নৌপথে আনন্দ শেষে বিদায়ের বিষন্নতা এখন। তার সাথে যোগ হয়েছে বাস ও লঞ্চের টিকিট ও কেবিন সংকট। লঞ্চের কেবিন অবশ্য ১৫ দিন আগে থেকেই সব অগ্রীম বিক্রি হয়ে গেছে। আর বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে টিকিট। সরজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে ৪ ও ৫ মার্চ শুক্র ও শনিবার বরিশালের লঞ্চঘাট ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঘরে ফিরে আসা সন্তান, স্বামী, স্বজন আর পরিজন ৩ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকেই আবার ছুটে যেতে শুরু করেছেন যার যার কর্মস্থলে। তাদের কেউ রেখে যাচ্ছেন বাবা-মা ভাই-বোন, আবার কেউ কেউ স্ত্রী সন্তান রেখে ফিরে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলা শহরের বন্দর, নগর বা মহানগরে। বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা এবং চট্টগ্রামমুখী। কেউ কেউ রয়েছেন খুলনা, যশোর, রাজশাহী ও সিলেট অঞ্চলের যাত্রী। তবে এ সংখ্যা খুবই সীমিত। যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগ অংশই ঢাকার সাভার, মীরপুর এবং গাজীপুর, টুঙ্গি অঞ্চলের গার্মেন্টস শ্রমিক। এনজিও ও কয়েকটি প্লাস্টিক বা সিমেন্ট কারখানার শ্রমিকও পাওয়া গেছে। আবার ব্যাংক, বীমা কোম্পানির লোকও রয়েছেন বাস যাত্রীদের ভিড়ে। সবমিলিয়ে গত ৪ মার্চ শুক্রবার থেকে এই যাত্রা অনেকটা জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে বলে জানালেন বরিশাল নৌ বন্দরের কর্মকর্তারা। তারা নিয়মিত মাইকিং করে লঞ্চগুলোকে এবং যাত্রীদের অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা হওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? মানুষের ভিড়ের কাছে বাণিজ্য খুঁজছে লঞ্চ মালিকরা। ঈদের এই কয়দিনে বিগত দিনের ক্ষতি পুঁছিয়ে নেয়ার চেষ্টা তাদের।
অন্যদিকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালেও দেখা গেছে একই চিত্র। মুড়ির টিন, জোড়াটিন, ভাঙাটিনসহ যতরকম নষ্ট বাস ছিলো সবই প্রায় মেরামত করে রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে। যে, যেভাবে পারছে যাত্রী ধরার চেষ্টা দেখা গেল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে। আর এজন্য টিকিট কাউন্টারের তোয়াক্কাও করা হচ্ছে না, আবার কাউন্টার গুলোতেও দীর্ঘ লাইনে মানুষের অপেক্ষা। শ্যামলী, গ্রীনলাইন, হানিফ শাকুরা পরিবহনের কাউন্টারে কয়েকজন অপেক্ষমাণ যাত্রী জানালেন, দ্বিগুণ ভাড়া পরিশোধ করার শর্তে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে একটা ব্যবস্থা করবেন টিকেট বিক্রেতারা। তবে টিকিট দেওয়া হবে না। সিটে বসিয়ে দিয়ে তারপর টাকা নেওয়া হবে। কাউন্টারগুলোতে এ নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা থাকলেও মহাসড়কে কিন্তু চমৎকার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে প্রশাসন। ঈদের আগের দিন থেকেই মহাসড়কে কোনো বিশৃঙ্খলা বা যানজট নেই বললেই চলে। সেনাবাহিনী, রেব জঅই ও ট্রাফিক পুলিশের যৌথ চেষ্টায় কোনোরকম যানজট তৈরি হতে দেয়া হয়নি বরিশালের নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায়। সব গণপরিবহন টার্মিনালের ভিতর থেকে যাত্রী পরিপূর্ণ হয়ে তবেই সড়কে উঠতে দেয়া হচ্ছে। এ সুযোগে অভ্যন্তরীণ ১৩ টি রুটের গণপরিবহনগুলো যাত্রী বোঝাই হয়ে কেউ ভুরঘাটা, কেউ ভাঙ্গা বা পদ্মা সেতু পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। যা রীতিমতো ঝুকিপূর্ণ হলেও কাজে ফেরা মানুষের অতিরিক্ত চাপ দেখে নিরবে সম্মতি দিচ্ছে প্রশাসনও। এরফলে অভ্যন্তরীণ সড়কে বানারিপাড়া, স্বরূপকাঠি, বাবুগঞ্জ, হিজলা মুলাদি বা মেহেন্দিগঞ্জের পথে বাস চলাচল নেই বললেই চলে। আবার গৌরনদী আগৈলঝারার যাত্রীদের ভুরঘাটা গামী বাসে বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয় বাস চালকদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা বলেন, মালিক সমিতির সভাপতি মনোয়ার সাহেব এর সাথে কথা বলুন। তিনি সব বলবেন। যদিও মালিক সমিতির অফিসে তখন তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। সড়ক পথে বরিশালের ছয় জেলা থেকে আগত প্রায় লক্ষাধিক যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল। যে কারণে মহেন্দ্র সিএনজি গুলোও এই মুহূর্তে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে মাথাপিছু ১০০০ ঠাকা করে। আর ঢাকাগামী ৫০০ টাকার বাস ভাড়া এখন ১২০০ টাকা।
এদিকে নদী পথে ৪ মার্চ শুক্রবার বরিশাল নৌ বন্দর থেকে মোট ১১ টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে ঢাকার পথে। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতি যাত্রায় এদিন বরিশাল নদীবন্দর থেকে একেকটি লঞ্চ ধারণক্ষমতার কমপক্ষে পাঁচগুণ যাত্রী নিয়ে বন্দর ছাড়ে। অর্থাৎ বন্দর ত্যাগ করা ১১ লঞ্চে যাত্রীসংখ্যা কম হলেও প্রায় ৫৫ হাজার হবে। ওই যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। আরও কয়েকদিন লঞ্চে এরকম যাত্রীচাপ থাকবে। তাই অবিলম্বে লঞ্চসংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন বেশিরভাগ যাত্রীরা। যদিও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অভিযোগ অস্বীকার করেন বরিশাল নৌ বন্দরের কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা। তিনি বললেন, শুক্রবার ১১ টি লঞ্চ পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে সন্তোষজনক যাত্রা করেছে। এটাকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন বলা যাবেনা কারণ এ চিত্র পদ্মা সেতু নির্মাণের আগের প্রতিদিনের চিত্র। শনিবার এখন পর্যন্ত আটটি লঞ্চ ঘাটে প্রস্তুত রয়েছে। যাত্রীদের চাপ তেমন নেই। তবে প্রয়োজনে আরো লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনী, কোষ্টগার্ড, পুলিশসহ ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষনিক নৌ বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। এখানে অতিরিক্ত হওয়ার সুযোগ আসলে নেই।
তিনি আরো বলেন, শনিবার দুপুর দুটোর পরও ঢাকা থেকে সব লঞ্চ এখনো বরিশাল ঘাটে এসে পৌঁছেনি। তাই সন্ধ্যার পর বলা যাবে কতগুলো লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকা যাবে। তবে যাত্রী চাপ কম মনে হচ্ছে তাই এ সংখ্যা গতকালের চেয়ে বেশি হবার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।
এদিক থেকে সড়ক পথের পরিস্থিতি অনেকটা উদ্বেগজনক বলে স্বীকার করেন হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে প্রশাসনের আসলে করনীয় কিছু নেই। শত বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে মানুষ অতিরিক্ত যাত্রী হচ্ছেন। তার কাজে ফেরা জীবনের চেয়ে জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
আর যাত্রীরা বলছেন, সড়কের যানবাহন ভালো না খারাপ তা দেখার দায়িত্ব বিআরটিএ প্রশাসনের। বরিশালের বিআরটিএ তাহলে কি করছে।
বিষয়টি জানতে বরিশাল বিআরটিএ পরিচালক জিয়াউর রহমানকে ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেন নাই।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT