জুমাতুল বিদায় মসজিদে উপচেপড়া ভীড় জুমাতুল বিদায় মসজিদে উপচেপড়া ভীড় - ajkerparibartan.com
জুমাতুল বিদায় মসজিদে উপচেপড়া ভীড়

4:46 pm , March 28, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসের শেষ জুম্মাকে জুম্মাতুল বিদা বা আখেরি জুম্মা বলা হয়। গতকাল শুক্রবার ছিলো এবছরের রমজানের শেষ জুম্মা। অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত ছিলো কদর বা সম্মানিত রজনী। যে কারণে সারাদেশের তথা বরিশালের সব মসজিদে মুসল্লীদের উপচেপড়া ভীড় ছিলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে। সারারাত জেগে ইবাদত বন্দেগি করার পরও এতটুকু ক্লান্তি নেই কারো চোখেমুখে। শুক্রবার জুম্মাতুল বিদায় তাই মসজিদগুলোতে ছিলো উপচেপড়া ভীড়। নারীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিলো মডেল মসজিদ ও জামে কসাই মসজিদে। প্রতিটি মসজিদেই জুম্মার নামাজ আদায় শেষে বিশেষ মোনাজাতে ছিলো ক্ষমা আর আল্লাহর গায়েবী সাহায্য প্রার্থনা। রমজান উপলক্ষে নিজের ভুল ও অপরাধের ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য আল্লাহর গায়েবী সাহায্য কামনা করেন মুসুল্লীরা।
বরিশালের মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এর ঈমাম মাওলানা মুনীর হোসেন, জামে কসাই মসজিদের ঈমাম মাওলানা আব্দুল মান্নান, সড়ক ও জনপথ মসজিদের ঈমাম মাওলানা গাজী আবুল বাশার এবং দক্ষিণ আলেকান্দার খান বাড়ি জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা  আবুল কাসেম বিন নূর বলেন, চমৎকার পরিবর্তন এসেছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার। গতরাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে কিশোর-তরুণদের বোমা-পটকা খুব একটা দেখা বা শোনা যায়নি। মসজিদে তাদের উপস্থিতি প্রশংসনীয়।
ব্রাউন কম্পাউন্ড জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা সোহরাব হোসেন জুম্মার খুতবায় বলেন, আজ জুম্মাতুল বিদা। রমজান মাসের আখেরী এ জুম্মার মাধ্যমে অনেকটাই বিদায় জানানো হবে পবিত্র এ মাসকে। আজ সন্ধ্যায় যদি শাওয়ালের চাঁদ ওঠে, তাহলে হতে পারে আজই রোজার শেষ দিন। বিচ্ছেদের রক্তক্ষরণ চলছে তাই মুমিন হৃদয়ে।
তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা প্রিয় বান্দাদের ভালবেসে বিশেষ এ মাসটি উপহার দিয়েছিলেন। মহান রবের উপহার থেকে আমরা কতটুকু উপকৃত হতে পেরেছি, সে হিসাব মেলানোর আজই শেষ সুযোগ। দুই নয়নে অশ্রু ঝরিয়ে ক্ষমা ও রহমত অর্জনের বড় সুযোগ এই জুম্মাতুল বিদা।
খান বাড়ি জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা আবুল কাসেম বিন নূর বলেন, আরবি মাসের শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে মাহে রমজান এবং শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে আখেরি জুম্মা বা রমজানের শেষ জুম্মার নামাজের দিন। এই দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রতি ঘন্টায় দশ হাজার জাহান্নামীকে ক্ষমা করে দেন।
মডেল মসজিদের ঈমাম মাওলানা মুনীর হোসেন পবিত্র  কোরআন ও  হাদিস থেকে বর্ননা তুলে ধরেন –  হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সূরা আল জুমুআহ, আয়াত : ৯)
এক হাদিস থেকে মাওলানা মুনীর বলেন, এ দিনের তাৎপর্য বর্ণনা করে রাসূল (সা.) বলেছেন, সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুম্মাবার সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃস্থানীয় দিন। এই পুণ্য দিনে আদি পিতা হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়। একই দিনে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। আবার পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করেন। এ দিনেই তার ইন্তেকাল হয়। এ শুক্রবারেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এ পুণ্য দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়। (মিশকাত)।
রমজান মাসের শেষ শুক্রবার হযরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদুল আল-আকসা’ প্রতিষ্ঠা করেন বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। এ জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্বের মুসলমানরা রমজান মাসের শেষ শুক্রবার ‘আল কুদস’ দিবস হিসেবে উদযাপন করেন। এসময় বিশ্বের সব মুসলমানও বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদিদের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করার দাবি জানান।
জামে কসাই মসজিদের ঈমাম মাওলানা আবুল মান্নান বলেন, দুটি কারণে জুম্মাতুল বিদা অত্যন্ত মহিমাময়। (১) মাহে রমজানের কারণে : রমজান মাস সিমাহীন ফজিলতের মাস এবং এটি উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ উপহার স্বরূপ। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি নেক-আমলের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত দেওয়া হয় শুধু রোজা ছাড়া। কেন না রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।
আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশ্ক আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারও রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ৫৯২৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৮৮৯৪, মুসনাদে আহমাদ: ৯৭১৪)।
আর জুম্মার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুম্মার দিন।
কদর রজনী থেকে পবিত্র ঈদ উল ফিতর পর্যন্ত মোমিন বান্দার জন্য গুনাহ মাপ করানোর সময় উল্লেখ করে সড়ক ও জনপথ মসজিদের ঈমাম মাওলানা গাজী আবুল বাশার বলেন, রমজান মাস পেয়েছে অথচ গুনাহ মাপ করাতে পারেনি, তাকে স্বয়ং নবী করিম (সা.) বড় হতভাগা বলেছেন। তিন শ্রেণির মানুষকে নবী করিম (সা.) হতভাগা বলেছেন দাবী করে ঈমাম বলেন, একদিন জুম্মার খুতবার আগে মিম্বারে আরোহনকালে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার আমিন আমিন ও আমিন বলেছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম খুতবার পর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলেন। প্রিয়নবি (সা.) আপনিতো ইতিপূর্বে খুতবার আগে কখনো এরকমটি করেননি। বর্ণনায় এসেছে- হযরত কায়াব বিন ওজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমিন বলার কারণ বর্ণনা করে) বলেন, ‘এই মাত্র হযরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন- প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই জিবরিল বলল) ধ্বংসহোক সে ব্যক্তি, যে রমজান মাস পেল অথচ তার গোনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম, আমিন
দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিবরিল বলল) ধ্বংসহোক সে ব্যক্তি, যার সামনে আপনার নাম উচ্ছারিত হওয়া সত্ত্বেও সে আপনার ওপর দরূদ পড়েনি। আমি বললাম, আমিন।
(তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিবরিল বলল) ধ্বংসহোক সে ব্যক্তি, যে তার পিতামাতা উভয়কে অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। আল্লাহ কবুল করুন। (মিশকাত)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন কদরের রাত হয়, তখন জিবরিল (আ.) ফেরাশতাদের দলসহ অবতীর্ণ হন এবং আল্লাহর প্রত্যেক এমন বান্দার জন্য দোয়া করেন, যারা দাঁড়িয়ে বা বসে আল্লাহর জিকির-বন্দেগি করতে থাকেন। যখন ঈদ উল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের কাছে তাদের ব্যাপারে গর্ব করে বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! যে শ্রমিক তার কার্য সম্পন্ন করেছে, তার প্রতিদান কী হতে পারে? ফেরেশতারা জবাবে বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! তার পারিশ্রমিক পুরোপুরি দেয়া হচ্ছে। তখন আল্লাহ বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! আমার যে বান্দা তাদের ওপর অর্পিত আমার ফরজ যথাযথভাবে পালন করেছে, অতঃপর তারা (নিজের ঘর থেকে ঈদগাহের দিকে) উচ্চঃস্বরে দোয়া করতে করতে বের হয়েছে- আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম, আমি নিশ্চয় তাদের দোয়া কবুল করব। তারপর তিনি বলেন, (হে বান্দাগণ!) তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপগুলোকে পূণ্য দিয়ে পরিবর্তিত করে দিলাম। রাসুল (সা.) বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT