4:45 pm , March 28, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশ থেকে বরিশালের ঘরমুখি জন¯্রােত শুরু হয়ে গেছে। স্বাধিনতা দিবসের ছুটির আগের দিন অনেকেই একদিনের ছুটি নিয়ে ঘরমুখি হতে শুরু করলেও মূল ¯্রােতটি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে।
এবারো ঈদকে সামনে রেখে কয়েক লাখ মানুষ বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকায় আপনজনের সাথে মিলিত হতে আসছেন। কিন্তু এ অবস্থাতেও রাষ্ট্রীয় সড়ক, নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো নীরব ভূমিকাতেই আছেন বলে মনে করছেন ঈদে ঘরেফেরা মানুষজন। বেসরকারী পরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে যথেচ্ছ ভাড়া আদায় সহ টিকেট কালোবাজারীর অভিযোগ উঠলেও সাধারন মানুষের ঘরে ফেরাকে সাচ্ছন্দ্যময় করতে ন্যূনতম কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি ও সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় বিমান বৃহস্পতিবার সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে যাত্রীপূর্ণ করে বরিশাল পৌঁছে দেয়ার পরেই দায়িত্ব শেষ করেছে। ঈদের আগে-পরে আর কোন বিশেষ ফ্লাইট নেই সংস্থাটির। এমনকি সংস্থাটি বরিশালবাসীকে সপ্তাহে তিনদিনের ফ্লাইটেই সন্তুষ্ট রাখছে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন সময়সূচীতেও।
এদিকে ঈদের ঘরেফেরা মানুষের বাড়তি চাপে বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী বরিশাল-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কের ফরিদপুর-বরিশাল অংশে প্রতিনিয়ত যানযটে নাকাল হচ্ছেন ঘরে ফেরা মানুষ। বিশেষ করে এ মহাসড়কের ভাঙ্গা-বরিশাল অংশের ৯১ কিলোমিটার পথে গত চারদিন ধরেই যানজট ঘরেফেরা মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি করে চলেছে। ১৮-২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটির পাশে অবৈধ দখলদারী পুরো মহাসড়কটিকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। মহাবিড়ম্বনা মাথায় করেই মাত্র ৯১ কিলোমিটার মহাসড়ক অতিক্রম করতে এখন সাড়ে ৩ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টাও সময় লাগছে। বরিশাল থেকে দক্ষিণে সাগর পাড়ের পথ আরো অপ্রশস্ত। বিড়ম্বনাও অনেক বেশী। তবে দক্ষিণের মানুষের দুর্ভোগের কথা বলা অবশ্য নিষেধ আছে।
এদিকে এক সময়ের রমরমা বরিশালে নদীবন্দর পদ্মা সেতু চালু হবার পরে তার জৌলুস হারালেও ঈদকে কেন্দ্র করে আবার সরব হয়ে উঠেছে। শুক্রবারেই বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চালু হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহী নৌযান এমভি এম খান-৭। নৌযানটি শনিবার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে বিশেষ ট্রিপে যাত্রী নিয়ে বরিশালে ফিরবে। অপরদিকে ২৬ মার্চ থেকে শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথেই প্রতিদিন বেসরকারী ৬টি করে নৌযান যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। এ বিশেষ ব্যবস্থা চালু থাকছে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে কর্মজীবী মানুষের পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষও এবার কিছুটা স্বস্তিতে নদীপথে বরিশাল থেকে ঢাকা ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে বিঅইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল।
তবে শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথেই অন্তত ২৮টি নৌযানের রুট পারমিট থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে চলাচল করছে ১২টি বেসরকারী নৌযান। আর রাষ্ট্র্রীয় বিআইডব্লিউটিসি’র ৪টি প্যাডেল হুইল জাহাজের সাথে ২টি স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান থাকলেও লোকসানের কথিত অজুহাতে এবারো সংস্থাটি দক্ষিণের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
ফলে ঈদ কেন্দ্রীক ঘরে ফেরা এবং উৎসব পরবর্তি সময়ে কর্মস্থলে যোগ দেয়াকে কেন্দ্র করে দুর্ভোগ থাকছেই। বিষয়টি নিয়ে সড়ক পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিকদের তরফ থেকে সব ধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলা মানার কথা বলা হয়েছে। বিআরটিসি যথারীতি তাদের ‘হাতে বাড়তি কোন বাস নেই’ বলে অতিরিক্ত কিছু করতে অপারগতার কথা জানিয়ে দু:খ প্রকাশ করেছে। অপরদিকে বেসরকারী নৌযান মালিকদের তরফ থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে সর্বাধিক প্রচেষ্টায় যাত্রী পরিবহনের কথা বলেছে। আর রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন সংস্থাটি তাদের প্যাডেল হুইল জাহাজগুলো প্রস্তুত নয় বলে জানিয়ে স্ক্র-হুইল দুটি নৌযানে বাড়তি জ¦ালানী ব্যায়ের কারণে বিপুল অংকের লোকসানের ভয়ে ঈদেও যাত্রী পরিবহন থেকে বিরত থাকার কথা বলেছে।