এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে মানুষ!!! এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে মানুষ!!! - ajkerparibartan.com
এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে মানুষ!!!

4:53 pm , March 23, 2025

জুবায়ের হোসেন ॥ তখন রাত আনুমানিক ১২ টা। নগরীর ৩০ গোডাউন নদী পাড়ের বরফ কল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা পারভিন বেগম তার বস্তির ঝুপরি ঘরের পেছনে একটি শিশুর কান্নার শব্দে আতংকিত হয়ে পড়েন। স্বামী ও প্রতিবেশিদের ডেকে শব্দ অনুসরন করে দেখতে পান ফুটফুটে এক নবজাতক শিশু কন্যাকে। তারা যখন শিশুটিকে উদ্ধার করেন তখন আবর্জনার মধ্যে ফেলে যাওয়া শিশুটির শরীরে কয়েক শত মশার কামড়ে আধমরা অবস্থা। সকলের সহায়তায় তাৎক্ষনিক কন্যা শিশুটিকে উদ্ধারের পর ভর্তি করা হয় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারী ওয়ার্ডে। বর্তমানে শিশুটির অবস্থা স্বাভাবিক থাকলেও তার মেরুদন্ডে একটি টিউমার রয়েছে। এছাড়া শিশুটির একটি পায়ের নড়াচড়া স্বাভাবিক না। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে দ্রুত ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার রাত ১২ টার দিকে ফেলে যাওয়া শিশুটিকে নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃস্টি হয়েছে ৩০ গোডাউন এলাকায়। এলাকাবাসি জানায়, শিশুটির বয়স সর্বোচ্চ ১০ দিন হতে পারে। এই এলাকায় বেশিরভাগই কর্মজীবিদের বসবাস। তাই হয়ত সন্ধ্যার পরের কোন এক সময় সুযোগ বুঝে শিশুটিকে কেউ ফেলে রেখে চলে যায়। এত সুন্দর এক শিশুকে কিভাবে কেউ মৃত্যুর জন্য ফেলে যেতে পারে তা তাদের বোধগোম্য নয়। এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে মানুষ এমন প্রশ্ন তাদের চোখে মুখে। তবে শিশুর পিতা মাতা ও স্বজনরা চরম নিষ্ঠুরতার প্রমান দিলেও মানবতার খাতিরে শিশুটির জন্য সাধ্য অনুযায়ী যা করার প্রয়োজন তা সবাই মিলে হলেও করার কথা জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
অন্যদিকে বরিশাল সমাজ সেবা অফিসের একটি প্রতিনিধি দল শিশুটির প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনিয় সেবা সংক্রান্ত ব্যবস্থা করে এসেছে গতকাল।
রোববার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু শিশুটি।
তাকে কুড়িয়ে পাওয়া নারী পারভিন বেগম আজকের পরিবর্তনকে বলেন, ৩০ গোডাউন নদীর পারে ব্যাটেলিয়ন ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় ঝাল মুড়ি ও ফুচকা বিক্রি করেন তিনি। রাতে বাসায় ফিরে ব্যবসার সরঞ্জাম প্রস্তুত করছিলেন। এসময় শিশুটির কান্নার শব্দ পান। ভয়ে স্বামী ও প্রতিবেশিদের নিয়ে বাসার পেছনে গিয়ে দেখতে পান একটি শিশু ফেলে রেখে গেছে কেউ। শিশুটির সারা শরীরে এমন কোন স্থান নেই যেখানে মশার কামড় নেই। আধমরা অবস্থায় সকলের সহায়তায় শিশুটিকে নিয়ে রাতেই মেডিকেলে ভর্তি করান। শিশুটির পিঠে একটি টিউমার রয়েছে যার চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকরা। পারভীন বেগম বলেন, তার নিজের দুই ছেলে, ১ মেয়ে রয়েছে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার তার। তার পরেও শিশুটির মুখ দেখে মায়ায় পড়েছেন। সহায়তা পেলে তিনি শিশুটির দায়িত্ব নিতে রাজি রয়েছেন।
ওয়ার্ডে এক নারী আজকের পবিরর্তনকে জানান, এই শিশুটি সম্ভবত কিছুদিন পূর্বে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিল। তার পিঠে টিউমারটি একটি জটিল সমস্যা। এছাড়া শিশুটির একটি পা সম্ভবত অসার। তাই হয়ত শিশুটিকে ফেলে রেখে গেছে তার নিষ্ঠুর পরিবার।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারী ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির মেরুদন্ডে একটি টিউমার রয়েছে। বেশ বড় আকারের টিউমারটির জন্য উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এই টিউমারের কারনেই শিশুটির একটি পা অসার হতে পারে। দ্রুত শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বরিশাল সমাজসেবা অফিসের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ আজকের পবিরর্তনকে বলেন, তারা খবর পেয়ে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে শিশুটির তাৎক্ষনিক প্রয়োজনের সকল ব্যবস্থা করেছেন। শের-ই-বাংলা সমাজ সেবা কার্যক্রমের সভাপতি বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর। তাই তিনি চাইলে শিশুটির উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবেন। এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিস সার্বিক সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT