পরিকল্পিতভাবে সুজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পরিকল্পিতভাবে সুজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ - ajkerparibartan.com
পরিকল্পিতভাবে সুজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

4:43 pm , March 16, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে শিশু ধর্ষনের অভিযোগ এনে পরিকল্পিতভাবে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নগরীর ধান গবেষনা রোড এলাকায় মাদক বিক্রয়ে সহায়তা না করা এবং বোনকে উত্ত্যক্তকারীদের বাধা দেয়ায় এমনটা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহত সুজন হাওলাদার এর পরিবার। শনিবার রাতে শেরে-বাংলা মেডিকেলে নেয়ার পর মারা যায় সুজন। ময়না তদন্ত শেষে রোববার বিকেলে বাউফলে গ্রামের বাড়িতে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় তার। ইতিমধ্যেই ধর্ষনের অভিযোগে সুজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে গাছের সাথে বেধে পেটাতে দেখা গেছে কয়েক যুবককে। এমন নির্মম হত্যার সাথে জড়িতদের নামেও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায় সুজনের পিতা। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নিহতের পরিবার মামলা দায়ের করলে পুলিশ তা গ্রহন করবে এবং হত্যাকারিদের আইনের আওতায় আনবে। পুলিশ ইতিমধ্যেই নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যাকারিদের চিহ্নিত করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই পালিয়ে গেছে বলে ধান গবেষনা রোড এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে। শুধু হত্যাকারিরাই নয় সুজনকে পিটিয়ে হত্যার পর থেকে ধর্ষনের অভিযোগ আনা মিমুর পরিবারটিও আত্বগোপনে রয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসি।
এ বিষয়ে ধান গবেষনা রোড এলাকার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, নিহত সুজন হাওলাদার তার পরিবার নিয়ে পূর্বে ধান গবেষনা রোডে বসবাস করতো। বর্তমানে তারা জিয়া নগর এলাকায় স্টাফ নার্স হাসিনা বেগমের বাসায় ভাড়া থাকতো। সুজন ইয়াবা সহ বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত ছিল। অনিয়মিতভাবে হলেও মাদক বিক্রয়ের সাথেও জড়িত ছিল সে। এই মাদক বিক্রয় নিয়ে জিয়া নগর এলাকার একাধিক মাদক বিক্রেতার সাথে তার শত্রুতা শুরু হয়। জিয়া নগর এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা স্বর্না এবং জাফরের সাথে তার মাদক বিক্রয় নিয়ে প্রকাশ্যে শত্রুতা চলছিলো বলে জানায় সূত্রটি। এই শত্রুতার জের ধরে মাদকাসক্ত সুজনের সাথে বিভিন্ন সময় ঝামেলা লেগে থাকতো স্বর্না, জাফর ও তার সহযোগিদের। এছাড়া সুজনের বোন ইতিকেও তারা বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়েও একাধিকবার ঝামেলা হয় উভয় পক্ষের মধ্যে।  শনিবার দুপুরে প্রতিবেশির ৬ বছরেরও কম বয়সি শিশু কন্যাকে ধর্ষনের অভিযোগ তোলা হয় সুজনের বিরুদ্ধে। শিশুটির ভেজা পোশাক দেখে পরিবার জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সুজনের নাম উল্লেখ করে এমন অভিযোগ জানায়। এই বিষয়টি নিয়ে ওই শিশুর পরিবারকে উস্কে দেয় স্বর্না ও জাফর। প্রথমে তারা শিশুর মা শিলা বেগমকে দিয়ে কোতয়ালী থানায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন যে সুজন নামের এক যুবক তার শিশু কন্যাকে চকলেট কিনে দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষনের চেস্টা করে ব্যর্থ হয়। কোতোয়ালী থানা কর্তৃপক্ষ এফ আই আর নং-৩০, তারিখ ১৫-০৩-২০২৫। জি আর ১৫৯/২৯২৫। ধারা ৯ (১) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী ২০২০). মামলা হিসেবে দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ গেলে স্বর্না নিজে উপস্থিত থেকে শিশু কন্যাকে দিয়ে জবানবন্ধি দেয়ায় সুজনের বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুজনকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বর্না সহ অন্যান্যরা। সুজনের পরিচিত কয়েক যুবককে দিয়ে মোবাইলে কল দিয়ে ডেকে নেয় ধান গবেষনা রোডের নদী তীরবর্তী চরের বালুর মাঠে। বাসা থেকে যাওয়ার সময় কোন ধরনের বিপদের আশংকা ছাড়াই সুজন গোসল করতে যাচ্ছে বলে বের হয়। সেখানে পরিকল্পিতভাবে ওত পেতে থাকা মাদক বিক্রেতা স্বর্নার সহযোগি জাফর, সাদ্দাম, বাচ্চু, বাধন, নাঈম, রুবেল, ইমন, কাইয়ুম সহ আরো ৮/১০ জন সুজনকে ধরে বালুর মাঠের একটি গাছের সাথে বেধে নির্যাতন শুরু করে। শিশু ধর্ষক বলে তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে আধমরা করে ফেলে। দুই ঘন্টার বেশি সময় ধরে তাকে বেধরক মারধর করা হয় যা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। এই সময় সুজনের ছোট দুই ভাই রাব্বি ও সাব্বির হত্যাকারিদের পা ধরে ভাইয়ের প্রান ভিক্ষা চাইলে তারা তাদেরকেও বেধে একসঙ্গে হত্যা করার হুমকি দিয়ে নির্যাতন অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে অচেতন সুজনকে রেখে চলে যায় এবং তাকে উদ্ধার করে শেরে বাংলা মেডিকেলে নেয়া হলে রাতে মারা যায় সুজন হাওলাদার। এর পর থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে হত্যাটিকে গনধোলাই বলে চালিয়ে দেয়া চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানায় তথ্যদাতা সূত্রটি। পুরো এলাকায় ধর্ষনের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে জানায় সূত্র। তবে এটি যে পরিকল্পিত হত্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলছেনা হত্যাকারিদের ভয়ে। তারা প্রত্যেকে এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা অথবা তাদের সহযোগি। যারা যে কোন সময় যে কোন ব্যাক্তির ক্ষতি করার সক্ষমতা রাখে।
এ বিষয়ে জিয়া নগর এলাকায় গেলে এক বৃদ্ধা জানান, সুজন নেশা করতো ঠিক, তবে সে কারও কাছে কোন সময় নেশার টাকা চায়নি। এমনকি কখনও এলাকার কোন ব্যাক্তি সুজনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। সুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেন ওই বৃদ্ধা। মাদক বিক্রেতারাই তাকে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। হত্যাকারিদের সাথে সুজনের বন্ধুরাও জড়িত রয়েছে বলেও তার দাবি। এই ঘটনা এলাকার প্রতিটি ব্যক্তি জানে তবে ভয়ে কেউ কিছু শিকার করছে না।
এ বিষয়ে সুজনের ছোট ভাই মো. রুবেল হাওলাদার বলেন, তার ভাইকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোটাই ভিত্তিহীন। যদি তার ভাই অপরাধি হয়েও থাকে তবে কেন তাকে আইনের হাতে না দিয়ে হত্যা করা হলো। মাদক সংক্রান্ত বিষয় ও ছোট বোন ইতিকে উত্ত্যাক্তকারীদের বাধা হয়ে দাড়ানোয় ভাই সুজনকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও বিচারের দাবি জানায় সে।
সুজনের পিতা মো. মনির হাওলাদার বলেন, ৯ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল সুজন। তার ছেলের চলাফেরা অন্যরকম হলেও যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এলাকার মাদক বিক্রেতারা শত্রুতা করে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। লাশ নিয়ে বাউফল গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। সেখানে জানাজা এবং দাফন শেষে ফিরে হত্যাকারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ধর্ষন মামলা দায়েরের পর ঠিক যে মুহুর্তে পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারে নামছিলো তখনই এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। তিনি কোতয়ালী থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, নিহতের পরিবার হত্যা মামলা দায়ের করতে এলে যেন তা গ্রহন করা হয়। মামলা দায়েরের সাথে সাথে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান পুলিশ কমিশনার।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT