4:41 pm , March 12, 2025

প্রচুর পরিমানে আমদানির পরেও
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রমজানে তৃপ্তিদায়ক মৌসুমি ফল তরমুজে ভরে গেছে নগরীর হাট বাজার। শুধু হাট বাজারেই নয়, প্রচুর পরিমানে আমদানি ও বেশ চাহিদা থাকায় এই ফল বিক্রী হচ্ছে এখন নগরীর সর্বত্র। পেশাদার ফল বিক্রেতাদের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তবে পর্যাপ্ত আমদানির পরেও তরমুজের খুচরা দর নিয়ে অভিযোগ করেছে সাধারন ক্রেতারা। তাদের দাবি আমদানি ভালো হলে সুলভ মূল্যে কিনতে পারার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অন্যদিকে কয়েকদিন ধরে বাজারদর ভালো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষক ও আড়তদাররা।
গতকাল বুধবার নগরীর বিভিন্ন পাইকারি, খুচরা ও এলাকাভিত্তিক মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, রমজান শুরুর পর থেকেই বাজারে আসতে শুরু করে তরমুজ। তবে গত ৫ দিন ধরে এই আমদানি বেড়ে যায় কয়েকগুন। রমজানে প্রচুর পরিমানে চাহিদা থাকায় ফলটি বিক্রিও বেশ ভালোই যাচ্ছে। বিক্রেতাদের দৃষ্টিতে দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
পোর্টরোডের আড়তদার শাকিল সিকদার বলেন, মৌসুমের শুরুর দিকের থেকে এখন তরমুজের বাজারদর ভালো যাচ্ছে, তার মানে এই নয় দাম চড়া। দাম অনেক কম রয়েছে। আকার ভেদে শত প্রতি তরমুজের দর ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তরমুজের মান যত ভালো এবং আকারে যত বড় তত দাম বেশি। আর এই তরমুজগুলো এখান থেকে পিস হিসেবে কিনে কেজি হিসেবে বিক্রি করছে খুচরো বিক্রেতারা। আর কেজি হিসেবে বিক্রির কারণেই তরমুজের দর ভোক্তা পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাইকারি বাজারে ৫-১০ টাকার দর বৃদ্ধি খুচরো বাজারে কোনো প্রভাব ফেলে না, শুধু কৃষকের ভাগ্য ফেরায়। তিনি বলেন, বাজারে বরিশাল বিভাগের সব জায়গার তরমুজ পাওয়া গেলেও এখন সব থেকে বেশি তরমুজ আসছে পটুয়াখালী ও ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। এক সময়ে উত্তরাঞ্চল থেকে আনা হলেও এখন দক্ষিণাঞ্চল তথা গোটা বরিশাল বিভাগের উৎপাদিত তরমুজ ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা দেশে।
কিন্তু আড়তদারদের সাথে কথার মিল পাওয়া যায়নি খুচরা বিক্রেতাদের। সাগরদি হাউজিং এলাকার ফল বিক্রেতা এলায়েত শেখ বলেন, আড়তদারদের কথা একেক সময় একেক রকমের হয়ে থাকে। পাইকারি দর যদি কম মেলে তাহলেই তারা ক্রেতা পর্যায়ে কম দরে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু প্রচুর পরিমানে মাল থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে তাই খুচরা মূল্যও বাড়তি কিছুটা। তবে কেজি দরে বিক্রির বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান এই বিক্রেতা।
আলাপকালে সাধারন ক্রেতা জালাল তালুকদার বলেন, যেদিকে তাকাচ্ছেন সেদিকেই তরমুজ। শুধু ফল বিক্রেতারাই নয়, অন্য ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসার পাশাপাশি তরমুজ কিনে বিক্রি করছেন। তবে যে পরিমানে তরমুজ বাজারে দেখছেন সেই তুলনায় দাম অনেকটাই বেশি। কেজি দরে সরাসরি বিক্রি না করলেও ব্যাবসায়ীরা ওজনের অনুমান করে দর হাকাচ্ছেন কেজি প্রতি ৫০/৬০ টাকা হিসেব করে। এছাড়াও কিছু কিছু বিক্রেতারা চড়া দাম রাখতে ক্রেতাদের সাথে খারাপ আচরনও করছে। এই ক্রেতা আরও বলেন, গত কয়েকদিনে যে পরিমানে তরমুজ বরিশালের বাজারে এসছে তাতে দাম আরও কম হওয়া উচিৎ। একই সাথে দাম নিয়ন্ত্রনে বাজার মনিটরিং এর কোন বিকল্প নেই বলে জানান।
উল্লেখ্য, বরিশালের উপকূলীয় জেলাগুলো তরমুজ চাষের জন্য উত্তম। উৎপাদন ভালো হওয়ায় বছরে বছরে তরমুজ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও প্রাকৃতিক বিভিন্ন বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে তরমুজ চাষ করতে হয়, তারপরও বাজারদর ভালো থাকলে চিন্তা থাকে না কৃষকদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এবারে ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমিতে। যা শতকরা হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি তিন ভাগ বেশি। আর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পটুয়াখালী জেলায় ২৭ হাজার ৪৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে এবং সব থেকে কম ঝালকাঠি জেলায় ১১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।