দাবীতে ঐকমত্য বরিশালের সমাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাবীতে ঐকমত্য বরিশালের সমাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ - ajkerparibartan.com
দাবীতে ঐকমত্য বরিশালের সমাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ

4:43 pm , March 11, 2025

ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শিশু আছিয়ার ঘটনায় পুরো জাতি হতবাক ও কিংকর্তব্যবিমুঢ়। কারণ শিশু আছিয়া নয়, বাবা ও ছেলে একসাথে এই পৈশাচিক কর্মকান্ড করায় মানুষ হতবাক হয়েছে। ওই পরিবার কতটা নিকৃষ্টতর তার প্রমাণ বহন করছে শিশু আছিয়া। এই মানসিক বিকারগ্রস্ত বাবা-ছেলেকে প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে ফাঁসি দেওয়া উচিত বলে মতামত দিয়েছেন বরিশালের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামি আন্দোলন সহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার দাবী অব্যাহত রেখেছে। তবে অনেকে কৌশলে মৃত্যুদন্ড শব্দ ব্যবহার না করলেও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেন, ‘কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ তো দূরের কথা যৌন হয়রানিও মেনে নেয়া হবেনা। সারাদেশে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে সেটি দু:খজনক। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক সেটাই চাই।’
একই কৌশল অবলম্বন করে বিবৃতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ বরিশালের নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে বাসদ নেত্রী মনীষা চক্রবর্তীরও স্পষ্ট দাবী, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গত সোমবার ইসলামি ছাত্র আন্দোলন নগরীর টাউনহলের সামনে রাত ১০টায় সমাবেশ করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে  ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার দাবী করেছেন। পৃথকভাবে কোনো সমাবেশ না করলেও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর দোয়া ও ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আছিয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশালের জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ । এসময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান।
জামায়াতে ইসলামী বরিশাল মহানগর আমীর জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পবিত্র কুরআনের অনুসরণ জরুরী। আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে দেখুন সমাজ থেকে এ জাতীয় অপরাধ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন, সেখানে চুরি ও ধর্ষণের ঘটনা নেই। কারণ চুরি করলে হাতের কব্জি কেটে দেয়া হয় এবং ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এটা আল্লাহর আদেশ। এটাই একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ। এ পথ তৈরি করতে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়না, আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নে বিশ্বাসী সরকারের প্রয়োজন ।
এদিকে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪৬ থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত  ছয়মাসে (আগস্ট ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫) বরিশাল অঞ্চলে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৪৯ জন এবং তার আগের ছয়মাসে (ফেব্রুয়ারী ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৪) বরিশাল বিভাগে এ সংখ্যা ১৭৩ জন।
আর সারাদেশে ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১০ বছরের ধর্ষণের যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। এই পরিসংখ্যানে শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এটি সম্পূর্ণ সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় এমনটা মনে করেন ষাটোর্ধ্ব সিটিজেন ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিজানুর রহমান। চুরি, ঘুষ, দুর্নীতির প্রমান পেলে হাতের কব্জি কেটে দেওয়া এবং ধর্ষণের শাস্তি জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তাব দেন সামাজিক আন্দোলনের এ নেতা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ধর্ষণের শিকার ৪২ জনের মধ্যে ৯ জন শিশু, ৯ জন কিশোরী রয়েছে। অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ জন কিশোরী ও ১২ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ১ জন কিশোরী ও ১ জন নারী। শুধু ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৪ নারী, যার মধ্যে আছে ২৪ কন্যাশিশু। ২০২৪ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫১৬ জন আর কন্যাশিশু ৩৬৭। তারমধ্যে ৮৬ জন কন্যাসহ ১৪২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৮ জন কন্যাসহ ২৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ৫ জন কন্যাসহ ৬ জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া ৫৮ জন কন্যাসহ ৯৪ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ২০২৩ সালে ধর্ষণের শিকার হয় প্রায় ৬৩৯ জন। যারমধ্যে ২৩৩ শিশু। এরমধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৩ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন পাঁচ জন। এছাড়াও এই সময়ে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ১২৯ জন। এরমধ্যে ধর্ষণের চেষ্টার পর হত্যা করা হয় তিনজনকে, ধর্ষণের চেষ্টার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। ২০২২ সালে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৮৭ জন। ৬৭২ জন শিশু ও ৩১৫ জন নারী। তারমধ্যে ১২১ জন কন্যাসহ ২২৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২৩ জন মেয়েসহ ৩৮ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ৭ জন মেয়েসহ ৮ জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও ৯৪ জন কন্যাসহ ১৪০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২৩৫ জন। এরমধ্যে ৬২৯ জন কন্যাশিশু। ১৭৯ জনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। ৬২ জনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। ২২ জন কন্যাশিশুসহ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩১ জন নারীকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। এ ছাড়া, ৯৩ জন কন্যাশিশুসহ ১৫৫ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয় প্রায় ১৫৪৬ জন। যারমধ্যে ৯৭৪ শিশু। ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৫১ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন।
২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৪১৩ জন নারী ও ৯৮৬ জন শিশু এবং ২০১৮ সালে ৭৩২ জন নারী ও ৪৪৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ১৭ হাজার ধর্ষণ এর ঘটনা ঘটেঠে। এরমধ্যে শিশু তিন হাজার ৫২৮জন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT