বরিশালের ৮০% ইভিএম মেশিন অচল ! বরিশালের ৮০% ইভিএম মেশিন অচল ! - ajkerparibartan.com
বরিশালের ৮০% ইভিএম মেশিন অচল !

4:37 pm , March 10, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ রক্ষনাবেক্ষনের  অভাবে বরিশালের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি ইভিএম বিভিন্ন গুদামে অচল হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে যা অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও খারাপ। কর্তৃপক্ষ বলছে এগুলো রক্ষার বিধিমালা ও আর্থিক খরচ না পেলে এর একটিও রক্ষা করা সম্ভব নয়।
স্বয়ংক্রীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য ২০১৯ সালের ২৫ মে বরিশাল নির্বাচন অফিসে ২২৬৮টি ইভিএম মেশিন সরবরাহ করা হয়। পর্যায়ক্রমে পটুয়াখালী, ভোলা পিরোজপুর ও ঝালকাটিতে সরবরাহ করা হয় আরো ২৮১৯ টি মেশিন। প্রায় ১৫৫ কোটি টাকার এসব মেশিন প্রথম থেকেই খুব একটা ভালো কাজ দেয়নি। মেশিনগুলো দিয়ে হাতেগোনা কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আংশিক সম্পন্ন করা হয়। পরে নিয়ম মাফিক পরীক্ষা নীরিক্ষা না করায় এবং সহায়ক পরিবেশে না রাখায় এগুলোতে একের পর এক ত্রুটি দেখা দিতে শুরু করে এবং অচল হয়ে যায়।
বরিশাল নির্বাচন অফিসের প্রোগ্রামার আসিফুর রহমান জানান, সর্বশেষ চেকিং এর সময় আমরা ২২৬৮টির মধ্যে ১১ শ’র মতো ভালো পেয়েছি। এখন সচল ইভিএম মেশিন হাতেগোনা কিছু পাওয়া যেতে পারে কারণ আমাদের নিয়মিত চেকিং বন্ধ রয়েছে। এতে করে মেশিনের অনেক ইউনিট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখার কোন জনবল বা অর্থও নেই।
একটি ইভিএম মেশিন সচল রাখতে ১১টি ইউনিট সচল থাকতে হয়। ইউনিটগুলোর মধ্যে রয়েছে কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট, মনিটর, কন্ট্রোল ব্যাটারি, মনিটর ব্যাটারি, পাওয়ার ক্যাবল, পাওয়ার এডাপ্টার, শট ও লং ক্যাবল, ঐউগও ক্যাবল ও প্লাস্টিক হার্ডবক্স। প্রতিটি ইউনিট প্রতি ৪০ দিন পর পর চেকিং করার নিয়ম থাকলেও বরিশালে গত ৮ মাসে তা হয়নি। এখন এসব করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
একই অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আমিনুল ইসলাম বলেন, দক্ষ জনবলের অভাবে নিয়মিত চেকিং হচ্ছে না। এখন হলেও খুব একটা কাজে আসছে না। মেশিনগুলোতে তারিখ ও সময় সেটিং করা যাচ্ছে না। এছাড়া ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানারগুলো সবই অচল হয়ে পড়ায় ভোট গ্রহণ করা যায় না। এছাড়া মেশিন হ্যাং করলে ডিসপ্লে উলটে যাচ্ছে।
বরিশালের নির্বাচন অফিসগুলোতে রয়েছে স্থানাভাব। একারণে অফিসের বাইরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে এগুলো কোন প্রকারে গুদামবন্দী করা হয়। এজন্য বড় অংকের টাকা ভাড়া গুনতে হয়। কিন্তু মান সম্পন্নভাবে মেশিনগুলোকে সংরক্ষন করা যায়না। একটি ইভিএম মেশিনের ওজন ৩৯ কেজি, অথচ এটি বহনের জন্য কোন লোক নেই।
ইসি বরিশালের স্টোর কিপার সাজিবুর রহমান বলেন, আমাদের নিজস্ব কোন সংরক্ষনাগার নেই, ভাড়া বাড়িতে মান সম্পন্নভাবে সংরক্ষন করা যায় না। এতে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। ৩৯ কেজির ইভিএম মেশিন চার্জ দিতে নিচে নামাতে হয় কিন্তু জনবলের সংকটে ত হয়ে ওঠে না। গুদামের আবর্জনা পরিচ্ছনতার জন্যও কেউ নেই। সর্বোপরি এসব মেশিন কিভাবে রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে সে বিষয়ে আমাদের কোন প্রশিক্ষনও নেই।
জেলা নির্বাচন অফিসের মতে নিয়মিত ব্যবহারের ব্যবস্থা না থাকায় ইভিএম মেশিনগুলো সংরক্ষন করা যাচ্ছে না। এগুলো এখন পরিত্যাক্ত না হলেও কোন কাজের উপযুক্ত নেই।
বরিশাল জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা অহিদুজ্জামান মুন্সি বলেন, সর্বশেষ দেড় বছর আগে এই মেশিনগুলো ব্যবহার করেছি। আসলে নিয়মিত ব্যবহার না করলে এগুলোকে রক্ষা করা যায়না। সঠিকভাবে সংরক্ষনেরও দরকার আছে যা আমরা পারছি না। হঠাৎ ব্যবহার করতে গেলে আমরা কোন না কোন ইউনিট অচল পাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি মেশিনগুলো ভালো রাখার কিন্তু পারছি না।
এ অবস্থায় আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে সরাসরি বলা হয়েছে যে সরকারি এ সম্পদ রক্ষার জন্য নির্বাচন কমিশন যদি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও অর্থের বরাদ্দ না দেয় তাহলে এগুলো দিনে দিনে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, এসব মেশিন কার্যকর রাখতে যথাযথ সংরক্ষন ও যতœ নেয়া এবং অর্থের দরকার। কিন্তু আমাদের কাছে কিছুই নেই। পর্যাপ্ত শ্রমিক ও অপারেটর দরকার, তাও নেই। প্রকল্পের এ ব্যয় রাজস্ব খাত থেকেও করা যাচ্ছে না। তর পরেও মূল্যবান এ সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য নির্বাচন কমিশন যদি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও অর্থের বরাদ্দ দেয় তাহলে কাজ করা যাবে নতুবা এগুলো দিনে দিনে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT