4:38 pm , March 9, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সন্ত্রাস-দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে ইজারা প্রথা ও টেন্ডার বাণিজ্য বন্ধের বিকল্প নেই। এই ইজারা প্রথা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে। তাই সচেতন নাগরিক সমাজ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এই ইজারা প্রথা বন্ধ করে নতুন নীতিমালা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে ২০ বছরের অধিক বয়সের সেতু, ফেরিঘাট ও হাটবাজার টোলমুক্ত এবং নৌ-পথ সম্পূর্ণ টোল ফ্রি করার দাবী উঠেছে।
গত ৫ মার্চ বুধবার বরিশাল সিটি করপোরেশনে টেন্ডার নিয়ে মারামারি এর অন্যতম উদাহরণ বলে জানান নগরবাসী। বরিশাল সিটি করপোরেশনের হাট-বাজার ইজারা নিয়ে বুধবার দিনভর নগরভবনে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। নগরীর ১৫টি হাটবাজার, ২টি বাসস্ট্যান্ড, ৩টি পাবলিক টয়লেট এবং একটি জবাইখানার ইজারার শিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল বুধবার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে নগরভবনে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের নেতা-কর্মীদের সরগরম উপস্থিতি ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
ইতিপূর্বে একতলা লঞ্চঘাট এবং পোর্ট রোডের ইজারা নিয়েও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাছাড়া হাজার টাকার ইজারা লাখ ছাড়িয়ে এখন কোটির ঘরে পৌঁছে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। অর্থনৈতিকভাবে সরকারি কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হতে গিয়ে সাধারণ মানুষের মাথায় দরের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন বলে জানান জাতীয় নাগরিক কমিটি বরিশালের সংগঠক তরুণ আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান শাকিল মৃধা। তিনি বলেন, গত বুধবার টেন্ডার ড্রপ করতে এসে সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের কার্যালয়ে যে মব সৃষ্টি হয়েছে এটাতো এই ইজারা প্রথার ফলাফল। এটির কারণেই যে সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে তা কি বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এদিকে কয়েকদিন আগেই ইজারা প্রথা বাতিলের দাবীতে সড়কে আন্দোলন করেছেন চৌমাথা বাজারের ব্যবসায়ীরা। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মার্কেটে দোকান বরাদ্দের টেন্ডার বাণিজ্য বন্ধের দাবীতে সড়ক অবরোধ করেন তারা। এসময় ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা ১৯৮৬ সালে এই বাজারে প্রথম ব্যবসা শুরু করি। ১/২ টাকা খাজনা দিতাম পৌরসভাকে। আর এখন আমাদের তুলে দিয়ে ভবন বানিয়ে তা ধনীদের কাছে লিজ দেয় প্রশাসন।
এদিকে বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ষাটোর্ধ্ব সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, দশ বছর আগেও যে বাজার মাত্র ১৪/১৫ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে, এখন তা ৪০/৫০ লাখ টাকা। এই টাকা কীভাবে উপার্জন হবে যে ঠিকাদার এতো টাকা খরচ করে ইজারা নেবেন, তারাতো জনসেবা করতে এটা নেননি। বাজারে টোল বাড়িয়ে দেবে তারা। ফলে সবজির দাম বেশি হবে, মাছ-মাংসের দাম বেশি হবে। ঘুরেফিরে সাধারণ মানুষের উপরই এসে চাপে এসব দর বৃদ্ধির বোঝা।
সরকারিভাবেই সব ধরনের ইজারা বাতিল ও বন্ধ করে শুধুমাত্র নতুন নির্মিত ব্রীজের ইজারা বহাল রাখার দাবী বাসদ নেত্রী মনিষা চক্রবর্তীর।
জাতীয় নাগরিক পার্টি বরিশালের মুখ্য সংগঠক মাহমুদা মিতু বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এজাতীয় বড় বড় মেগা প্রকল্পের ইজারা বহাল রেখে বাকী সব ইজারা বাতিল করা উচিৎ।