4:08 pm , February 28, 2025

দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন ১৭ লাখ টন ছাড়াবে
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বাজার এবার শীতকালীন সবজিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় সাধারন মানুষ সাম্প্রতিক বছরগুলোর চেয়ে সর্বনি¤œ দরে এসব কৃষিপণ্য কিনতে পারছেন। গত মাসখানেক ধরেই বরিশালে পাইকারী থেকে খুচরা বাজারেও ফুলকপি, বেগুন, বাঁধাকপি, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, শিম, শশা, শালগম, গাজর, বারোমাসি লাউ, লালশাক, পালংশাক ও লাউশাক সহ সব শীতকালীন সবজিই অনেকটা পানি দরে বিক্রী হচ্ছে। তবে এবারো পাইকারী ও খুচরা বাজারের ব্যবধান ব্যাপক। নগরীর সিটি মার্কেটের পাইকারী আড়তে ৫ টাকা কেজি দরের ফুলকপি ও বাঁধাকপি খুচরা বাজার সহ ভ্যানে উঠলেই ২০ টাকা কেজি হয়ে যায়। এমনকি এবার বরিশালে আশাতীত টমেটোর উৎপাদনের ফলে এর কেজি পাইকারি বাজারে ৭-৮ টাকায় নেমে এসেছে। অথচ মৌসুমের শুরুতে এসব সবজি ১শ টাকা কেজি দরেও বিক্রী হয়েছে। এখন তা খুচরা পর্যায়েই ২০ টাকা কেজি। ফলে ভোক্তারা মহাখুশি।
প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার প্রায় ৮০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদের ফলে মৌসুমের শেষে উৎপাদন এযাবতকালের সর্বোচ্চ ১৭ লাখ টন অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র মাঠ পর্যাযের কৃষিবীদরা। চলতি রবি মৌসুমে দেশে ৬ লাখ ৩১ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে শীতকালীন সবজির উৎপাদন দেড় কোটি টন অতিক্রম করবে। যারমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই আবাদ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টরে। আর উৎপাদনও ১৭ লাখ টন ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা।
বিগত খরিপ-২ মৌসুমে বিগত মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ২৪ লাখ টন আমন উৎপাদনের সাথেই কৃষিযোদ্ধারা সবজি আবাদে মাঠে নেমে পড়েছিলেন। তবে গত অক্টোবরের ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এ ভর করে বিলম্বিত অতিবর্ষণ সবজির আবাদকে কিছুটা বিলম্বিত করলেও উন্নত প্রযুক্তি ও যথাযথ সার ব্যবস্থাপনার কারণে এ অঞ্চলের মাঠে শীতকালীন সবজি সঠিক সময়েই হাসি ছড়িয়েছে।
ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে নিবিড় পর্যবেক্ষন সহ কৃষকদের কারিগরি সহায়তা প্রদানও অব্যাহত রেখেছি। আবাদ-প্রযুক্তি হস্তান্তর সহ সার্বিক সহযোগীতা সম্প্রসারণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এবার বরিশালে সবজি আবাদ ও উৎপাদনে এক নিরব বিপ্লব ঘটে গেছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন এবার ২২ থেকে ২৩ টন অতিক্রম করেছে। বরিশাল অঞ্চলের প্রধান এ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার মতে, এবার মূল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাবের পরে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের অতি বর্ষণে আমন আবাদ বিলম্বিত হওয়া সহ কর্তনও কিছুটা পিছিয়ে পড়ায় শীতকালীন সবজির উৎপাদন নিয়ে প্রথমে শংকা থাকলেও তা অতিক্রম করা গেছে। তবে বরিশাল অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি বাজারে উত্তরাঞ্চলের চেয়ে কিছুটা দেরীতে আসায় খুব ভাল দাম না পেলেও উৎপাদন কাঙ্খিত লক্ষ্য অতিক্রম করায় কৃষকরা লোকসানে পড়েনি। গত বছর রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের ৭৮ হাজার হেক্টরে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টনের মত শীতকালীন সবজি উৎপাদন হলেও এবার মৌসুমের শুরুতে প্রকৃতির বৈরী আচরনে পরিস্থিতি কিছুটা অনিশ্চিত ছিল। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকুলে চলে আসায় কৃষিযোদ্ধারা সময়ের সঠিক ব্যবহারে আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে সব প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে পেরেছেন। উৎপাদন ১৭ লাখ টন অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। তবে গবেষনা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মত কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ‘বারী’ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করলেও বরিশাল অঞ্চলে এখনো তার কাঙ্খিত আবাদ সম্প্রসারণ ঘটছেনা । ফলে এ অঞ্চলে কম জমিতে অধীক সবজি উৎপাদন এখনো কিছুটা পিছিয়ে। কৃষকরা কম লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি রপ্তানী বাজারেও এ অঞ্চলের অবদান থাকলেও তা কাঙ্খিত মাত্রায় বাড়ছে না। গত কয়েক দশক ধরে বরিশালের বানরীপাড়া, উজিরপুর ও নেছারাবাদ সহ কয়েকটি এলকার বিল অঞ্চলে ‘ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে সবজি সহ নানা ধরনের সবজির বীজ থেকে চারা উৎপাদন হচ্ছে। ফলে এসব বীজতলা থেকে বর্ষা বিদায়ের সাথেই দ্রুত শীতকালীন সবজির চারা উত্তোলন করে রোপন সম্ভব হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কিছুটা কম সময়ে সবজির আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। ফলে জমিতে আদ্রতা বিরাজ করার সাথে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ সহজতর হচ্ছে।