১৩ দফা দাবীতে কৃষক খেতমজুর সমিতির সমাবেশ ১৩ দফা দাবীতে কৃষক খেতমজুর সমিতির সমাবেশ - ajkerparibartan.com
১৩ দফা দাবীতে কৃষক খেতমজুর সমিতির সমাবেশ

4:13 pm , February 26, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ কৃষি সামগ্রীর দাম কমানো, কর ভ্যাট বাতিল, নদী ও খাল খননসহ ১৩ দফা দাবীতে বরিশালে সমাবেশ করেছে কৃষক খেতমজুর সমিতির সদস্যরা। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউনহল চত্বরে জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতি, বরিশাল ও পিরোজপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে আঞ্চলিক সমাবেশে এই দাবী তোলেন বক্তারা।  এতে প্রধান অতিথি ছিলেন  বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক  কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ। জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির বরিশাল জেলা সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অধ্যাপক জলিলুর রহমান এর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি  কমরেড অধ্যাপক আবদুস সাত্তার। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। গত জুলাই আগস্ট ‘২৪-এ ছাত্র-শ্রমিকের অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছরে ঐ সরকার লক্ষাধিক কোটি টাকা লুটপাট ও পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার বিগত ৬ মাসে উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি। নিত্যপণ্য জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সিন্ডিকেট বা অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মিল-কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়নি। বরং বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন দমন করতে গিয়ে শ্রমিকদেরকে হত্যা করা হয়েছে, লাঠিপেটা করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিক-কৃষক- মধ্যবিত্ত মানুষের পকেট কাটার জন্য ১০ থেকে ১৫% ভ্যাট আরোপ করে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও আইএমএফ’র পরামর্শে এই শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। অন্যদিকে কৃষকরা আলু ও সবজির দাম পাচ্ছে না। তারা সর্বশান্ত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সরকার নিশ্চুপ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে দাবী করে বক্তারা অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জোর দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, কৃষক, খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী জনগণ হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের খাদ্য চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে আসছে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। অথচ গ্রামীন জনপদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনো অবহেলিত। এই জনগোষ্ঠীর সংকট সমাধান না করে বৈষম্যের অবসান এবং কাঙ্খিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কৃষক তার ফসলের লাভজনক মূল্য পায়না। বিদ্যমান ব্যবস্থায় কৃষিপণ্যের বাজার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে ভোক্তাকে তা অস্বাভাবিক বেশি দামে কিনতে হয়। কৃষিজমি রক্ষায় কার্যকর কোন নীতিমালা নেই। কৃষি জমি ক্রামাগত কমছে। যার ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অগ্রগতির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বক্তারা ১৩ দফা দাবী তুলে ধরেন। এগুলো হলো : সার, বীজ, ডিজেল, বিদ্যুৎসহ সকল ধরনের কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে। কৃষিপণ্য বিপণনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বন্ধ এবং কৃষিপণ্যের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। দেশীয় বীজ রক্ষা এবং স্বল্প মূল্যে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ‘খোদ কৃষকের হাতে জমি এই নীতির ভিত্তিতে আমূল ভূমি সংস্কার করতে হবে। স্বল্পসুদে কৃষি ঋণ প্রদান এবং কৃষিবীমা চালু করতে হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি সমবায় গড়ে তুলতে হবে।
খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী জনগণের সারা বছরের কাজ ও বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বেকার ভাতা এবং গ্রাম শহরের গরীব ও মেহনতিদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
বয়ষ্ক, বিধবা ও দুঃস্থ ভাতা মাসিক ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি এবং ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করতে হবে।
কোর্ট-কাচারি, ভূমি ও রেজিস্ট্রি অফিসসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন ট্যাক্স ও গ্রামাঞ্চলের গৃহ ট্যাক্স বাতিল করতে হবে।
সেচ কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমাতে হবে। প্রয়োজনীয় জলাধার নির্মাণ করে স্বল্পমূল্যে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করতে হবে। শতাধিক পণ্যে নতুন করে ভ্যাট/করারোপ বাতিল করতে হবে।  সরকার ৪৩ লক্ষ টিসিবি কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে; বাতিল নয় বরং টিসিবির কার্ড আরো বাড়াতে হবে।
এনজিও ঋণের অস্বাভাবিক সুদহার কমাতে হবে। কিস্তি আদায়ে জুলুম বন্ধ করতে হবে। সেচ কাজের সুবিধার জন্য খাল, নদীসহ সকল মরা নদী, মরা খাল খনন করতে হবে। পিরোজপুরের কাউখালীর বাশুরির চরে ২৫/৩০ বছর ধরে বসবাসকারী ভূমিহীনদের খাস জমি প্রদান করতে হবে।
উজিরপুরের গুঠিয়ায় কমলাপুর মুখ কাকড়াদাঁড়ি পর্যন্ত কালিজিরা নদী খনন, গৌরনদীর বাটাজোর থেকে জাহাপুর পর্যন্ত খাল খনন, বাটাজোর ইউনিয়নের পশ্চিম চন্দ্রাহারের আমবাড়ির ঝোড় খালের বাদামতলা থেকে উত্তরদিকে ১.৫ কিলোমিটার খনন এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাণীরহাট থেকে কাটাদিয়া পর্যন্ত সংযোগ খাল পুন:খনন করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কমরেড রনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মাহা মির্জা, ডা. হারুন-উর-রশিদ, কমরেড নিমাই মন্ডল, কমরেড অধ্যাপক নৃপেন্দ্র নাথ বাড়ৈ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT