সড়কে বেহাল পোর্ট রোড ॥ হুমকীর মুখে পাইকারি কাঁচাবাজার সড়কে বেহাল পোর্ট রোড ॥ হুমকীর মুখে পাইকারি কাঁচাবাজার - ajkerparibartan.com
সড়কে বেহাল পোর্ট রোড ॥ হুমকীর মুখে পাইকারি কাঁচাবাজার

4:06 pm , February 26, 2025

তবুও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যস্ত নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা এবং সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক পোর্ট রোড। এই সড়কের ফলপট্টি মোড় থেকে ছোট লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৮০০ মিটার অংশ বরিশাল নৌ বন্দরের অধীনে। আশেপাশের সড়ক সংষ্কারসহ পিচ ঢালাই করা হলেও এই অংশ গত ১৫ বছর ধরে সংষ্কার বা মেরামত করা যায়নি নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষের বাধার কারণে। নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ যদিও বারবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে এই মুহূর্তে তারা ভীষণ ব্যস্ত নতুন জেটি ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ নিয়ে। নদী তীরবর্তী চরকাউয়া খেয়াঘাটে পাইকারি কাঁচাবাজার বন্ধ করে চলছে এই মহা কর্মযজ্ঞ। আর এ জন্য নিজেরাই নিয়মবহির্ভূত দখল করে নিয়েছেন নদীর জলসীমা। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট রোড বাজারের ৮০০ মিটার এলাকার জরাজীর্ণ দশা। গত ১৫ বছর ধরে এই সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল। এলাকাবাসীর শত অভিযোগেও এ নিয়ে উদাসীন নৌ বন্দর প্রশাসন। অথচ এখানেই নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে পোর্ট রোড বাজারের একাংশ ইজারা দিয়েছেন কোটি টাকায়। যে বাজারে আসা-যাওয়া করতে হলেও লঞ্চঘাট থেকে পোর্ট রোড বাজারের এই ৮০০ মিটার সড়ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ নিয়ে দীর্ঘদিন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বরিশালের সাংবাদিকদের সাথেও কথার মারপ্যাঁচ করেছে নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ। সিটি করপোরেশন সড়কটি সংষ্কার করতে চাইলে প্রতিবারই বাধা দিয়েছেন তারা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব বলেন, একাধিকবার এ নিয়ে নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ কে নোটিশ করা হয়েছে। তারপরও কোনো অগ্রগতিতো পাওয়া যায়নি বরং তারা ঐতিহ্যবাহী কাঁচাবাজারটি তাদের জায়গায় দাবি করে সেখানে কাটাতারের বেড়া দিয়েছিলো। এখন সেখানে জেটি বা ভবন নির্মাণের কাজ করছে। যা বাজারের  ছোটছোট নৌযান চলাচলে সমস্যা তৈরি করবে বলে জানান তিনি।
এই পোর্ট রোড নিয়ে ইতিপূর্বে বরিশাল নৌ বন্দরের সাবেক উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলছিলেন, সড়কটির টেন্ডার হয়েছে। নৌ প্রকৌশল বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
আর বর্তমান উপপরিচালক শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, চরকাউয়া খেয়াঘাট থেকে বাধের একটি অংশ যেটি আগে স্টিমারঘাট ছিলো সেখানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ওখানে নতুন জেটি তৈরি হবে। এই কাজের সাথেই পোর্ট রোড সড়কের কাজও ধরা হয়েছে। তবে বিস্তারিত নৌ প্রকৌশল বিভাগই বলতে পারবে।
নৌ প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল হোসাইন বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই কাজ চলছে। তারা ওখানেই রয়েছে, তাদের সাথে কথা বলুন।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতিনিধির সন্ধানে গত ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী পরপর দুদিন চরকাউয়া খেয়াঘাটের বেড়িবাধ অংশে ঘুরে চলমান কাজ বন্ধ পাওয়া গেছে। আশেপাশে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরও কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এসময় বরিশালের বৃহত্তর পাইকারি কাঁচাবাজার সমিতির কয়েকজন ব্যবসায়ী এগিয়ে এসে বলেন, রাত দশটা থেকে এই বাজার শুরু হয়। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে প্রায় সারারাত অসংখ্য ছোট ছোট নৌকা, ট্রলার ভর্তি কাঁচা বাজারের পণ্য আসা-যাওয়া এই স্টীমারঘাট অংশের নদীতে। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা থেকে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা এখানে। এই জেটি সরকারের কতটা উপকার করবে তা জানিনা, তবে আমাদের ক্ষতি করছে এখন থেকেই। আগে ঘাটে মালামাল উঠানামা করতে ২০ টাকা খরচ হলে এখন খরচ হচ্ছে ৫০ টাকা। কারণ এখানে আর পণ্যবাহী নৌকা ভিড়তে পারেনা। দূরে খেয়াঘাটের একাংশে ভেড়াতে হয়। সেখান থেকে মাথায় করে পণ্য আনানেওয়া করতে কুলিদের মজুরী ও পরিশ্রম দুটোই বেড়ে গেছে। যা কাঁচাবাজারের পণ্যের গায়ে যুক্ত হচ্ছে। এতে করে ক্রেতাদের গায়েও খরচের বোঝা চাপছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
নদী গবেষক ও সুশাসনের সুজন সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, নদীর জলসীমা ব্যবহার করে ভবন বা জেটি নির্মাণের অধিকার জেলা প্রশাসকেরও নেই। এজন্য অবশ্যই নদী কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকতে হবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সেই অনুমতি আছে কিনা তা জানা জরুরী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT