4:37 pm , February 19, 2025

নিশ্চুপ পরিবেশ অধিদপ্তর
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে অনেক ইটভাটা। এসব ভাটায় নিয়ম না মেনে কয়লার বদলে কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। বৈধ জিগজ্যাগ পদ্ধতি না মেনে পরিচালিত এসকল ইটভাটার কারণে বাতাসে বাড়ছে কার্বনের পরিমান। যা পরিবেশের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখনো শতাধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে বরিশাল জেলায়। মাঝে মধ্যে এসব ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালানো হয়, জরিমানাও হয়। তারপরেও থামে না অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০২২ সালে একটি রিট করা হয়। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের মার্চে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দেয়। ওই নির্দেশনা অনুসারে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অবৈধ ১ হাজার ৮৪টি ইটভাটা বন্ধ বা অপসারণ করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের পরিচালক এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু তার আর বাস্তবে রুপ নেয়নি। মাঝেমধ্যে ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। এরফলে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকে ঠিকই তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ম্যানেজ করে ফের চালু হয় অবৈধ এসব ইটভাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ১১১টি অবৈধ ইটভাটা ছিল। এরমধ্যে ১১টি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পূর্বে বিভিন্ন সময়ের অভিযানে। এখনো কমপক্ষে ১০০টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে হিজলায় ২০টি, বরিশাল সদরে ১১টি।
বরিশাল সদর উপজেলায় প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা এসকল ভাটা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র জিকজ্যাগ ইটভাটা ছাড়া (পরিবেশের সনদপ্রাপ্ত) অন্য সকল ভাটাই অবৈধ। তাতে যদি পরিবেশের সনদ থাকেও। কারণ ২০১৩ সালের পর ১২০ ফুট ও ড্রাম চিমনি ইটভাটা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। বরিশাল সদরের এমন কয়েকটি ভাটার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পূর্ব কর্ণকাঠি এলাকার দোলা ব্রিকস, রাণীর হাটের মোল্লা ব্রিকস, চর করমজির আরএইচবি ব্রিকস এবং কর্ণকাঠি ভূঁইয়া বাড়ি এলাকার ফাইভ স্টার ব্রিকস। এরা সবাই অবৈধভাবে ভাটা পরিচালনা করে আসছে প্রকাশ্যে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অসৎ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রতিবছর এরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অভিযানের পূর্বেই তাদের কাছে খবর চলে যায়। এছাড়া পূর্বে এই ভাটাগুলোর পাশ্ববর্তী ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও রহস্যজনকভাবে তাদের ছাড় দেয়া হয়েছে। এই ইট ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী। অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয়দের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে গাছ কেটে ভাটায় পোড়ানো হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর এই ৪ ইট ভাটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পরিবেশ আইনানুযায়ী বৈধ জিগজ্যাগ না থাকলেও দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এই চারটি ইট ভাটা আইনের বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে যাচ্ছে।
বাকেরগঞ্জের একটি ইটভাটার মালিক বলেন, কয়লায় ইট পোড়ালে দাম বেড়ে যায় প্রতি ইটে কমপক্ষে এক টাকা। কিন্তু যারা অবৈধভাবে কাঠ পোড়াচ্ছে তাদের খরচ কম। তারা কম খরচে উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করে ব্যবসায়ীক প্রতিযোগীতায় এগিয়ে যাচ্ছে। এদের কারণে যেমন ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করা মালিকরা। এদের বিরুদ্ধে প্রভাবমুক্ত হয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছে বৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা মালিকরা।
পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু সংকটের এই সময়ে এভাবে কাঠ ব্যবহার করে ভাটার চুল্লি চালু রাখলে উজার হবে বনাঞ্চল। যা ভবিষ্যতে পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলবে। সরকারি দপ্তরকে ঢিলেঢালাভাবে দায়িত্ব পালন না করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, জনবল সংকটের কারনে কিছুটা সমস্যা থাকলেও অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সময় অভিযানে অবৈধ এসব ইটভাটা ধ্বংসের পাশাপাশি জরিমানা করা হয়। কিন্তু ড্রাম চিমনি একবার ভাঙলে আবার মালিকরা নতুন করে গড়ে তোলেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত চরের ইটভাটার মালিকরা অনেকটা বে-পরোয়া। ওইসব এলাকায় ভয়ের কারণও আছে। কিন্তু সদরের মধ্যে অবৈধভাবে ভাটা পরিচালনার কোন সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদরের চারটি ভাটা সহ জেলার অবৈধ আরও শতাধিক ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।