ববি উপাচার্যকে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ॥ পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন অব্যাহত ববি উপাচার্যকে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ॥ পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন অব্যাহত - ajkerparibartan.com
ববি উপাচার্যকে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ॥ পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন অব্যাহত

4:15 pm , February 17, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। এদিকে তার পদত্যাগের দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল মহানগর বিএনপিও ভিসির পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আয়োজিত শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ঘটনাগুলোর বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ, প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে ফ্যাসিস্ট বলে গালি দিয়েছেন। অথচ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ই বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান যেখানে বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে প্রতিহত করে প্রথম বিজয় অর্জন করেছিল। সেই অকুতোভয় শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকল রকম হয়রানি ও নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে বিবৃতি প্রদান করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
আমরা জানি উপাচার্য শুচিতা শরমিন নিজে ছিলেন ফ্যাসিস্ট শক্তির একজন চিহ্নিত দোসর। ২০২৪ সালে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষক ও পেশাজীবীরা যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তাঁদের সেই বিবৃতিপত্রে ১০৮ নং স্বাক্ষরকারী ছিলেন আজকের এই উপাচার্য। এমন ফ্যাসিস্ট বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে ফ্যাসিস্ট বলেছেন এর চেয়ে লজ্জার ও ঘৃণার কিছু হতে পারে না। আমরা তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। একইসাথে এই বক্তব্যের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর নিকট তাঁকে নি:শর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সঞ্জয় কুমার বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বিগত পাঁচমাসেও তিনি একটি সিন্ডিকেট সভা ডাকতে পারেননি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৮(২) ধারামতে প্রতি ৩ মাসে একটি সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শেষপর্যন্ত গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ মর্মে পত্র দেয়া হয় যে ‘১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় ভিসির বাসভবনে একটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য ড. মুহসিন উদ্দীন জানান উক্ত আহ্বানপত্রের সাথে কোনো আলোচ্যসূচি দেয়া হয়নি।  ফলে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় এটি ছিল একটি গোপন এজেন্ডার দূরভিসন্ধিমূলক সিন্ডিকেট সভা। শিক্ষার্থীরা এই সিন্ডিকেট সভা না হতে দেয়ার লক্ষ্যে ভিসির বাসভবনের মূল গেটের সামনে জড়ো হয়ে সদস্যদেরকে ঢুকতে বাধা দেয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য মুহসিন উদ্দীন গেটে অপেক্ষা করতে থাকেন যাতে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় হলেও তাঁরা সভায় ঢুকতে পারেন। কিন্তু আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁরা ঢুকতে পারেননি। তখন রেজিস্ট্রার তাদের একজনকে জানান যে, সভাটি একমাত্র আলোচ্য বিষয়ের বিশেষ সভায় রূপান্তর করা হয়েছে এবং তাঁরা যেন অনলাইনে সভায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তখন রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে অনলাইনে আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগই ছিল না।
স্বেচ্ছাচারী উপাচার্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সদস্যের অংশগ্রহণ ব্যতীতই উক্ত সভা অনলাইনে সম্পন্ন করেছেন এবং সেখানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ ধারার নির্দেশনা অমান্য করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য তৈরিকৃত আইন বা বিধি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। এরূপ সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে হরণ করবে বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরো বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রবিক্ষোভ বিষয়ে উপাচার্যের নির্দেশে মামলা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি এবং সেই মামলার এজাহারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের বিরুদ্ধে এমন মামলার এজাহারে অভিযোগের ঘটনা অত্যন্ত নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক।
একইসাথে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সকল মামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও উক্ত মামলা অতিদ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাই। শিক্ষার্থীদের সকল ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির প্রতিও আমরা সুদৃঢ? সহমত পোষণ করছি। আমাদের এই প্রতিবাদ বিবেচনায় নিয়ে সকল দাবি অবিলম্বে পূরণপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য উপাচার্য এর প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেট সদস্য ড. মুহসিন উদ্দীনসহ শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT