4:12 pm , February 17, 2025
উপার্জন হিসেবে বেছে নিয়েছেন বোম্বাই মরিচ বিক্রি
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ছয় ছেলে-মেয়েকে বড় করার পর চার ছেলে বাবাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এখন বরিশাল নগরীর মসজিদে মসজিদে দিন কাটাচ্ছেন ৯০ বছর বয়সী খালেক হাওলাদার। উপার্জন হিসেবে বেছে নিয়েছেন বোম্বাই মরিচ বিক্রি। সেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে তিনবেলা খাবার জোটে খালেকের।
খালেক বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামের বাসিন্দা। বিয়ের পর তাদের সংসার আলোকিত করে চার ছেলে এবং দুই মেয়ে আসে। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে স্বচ্ছলভাবে চলছিল তাদের সংসার। এরই মধ্যে একে একে ছয় ছেলে-মেয়ের বিয়েও দেন। তাদের ঘরে নাতী-নাতনীও আসে। ছেলে-মেয়ের প্রতি ভালোবাসা চলে যায় নাতীদের উপর। একদিকে নানা অপরদিকে দাদা। দুটি স্বাদই গ্রহণ করেছেন। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধ খালেক হাওলাদার।
কারন তিনি যে সময়ের কথা বলছেন ওই সময় তার বাড়িতে ছিল অফুরন্ত আনন্দ। চারবছর পূর্বে তার স্ত্রী মারা যায়। এরপর থেকে ছেলেরা তাকে অন্যচোখে দেখতে শুরু করে। দুই বছর পূর্বে ছয় শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয় চার ছেলে। খালি হাতে বরিশাল নগরীতে চলে আসেন। এখানে এসে বিভিন্ন মসজিদে দিন কাটে খালেকের। কিন্তু খাবার সংগ্রহে তাকে বেগ পেতে হয়। কারো কাছে চাওয়া তার কাছে ভালো লাগে না।
এরপর সিটি মার্কেটের পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকীতে বোম্বাই মরিচ এনে তা বিক্রি করে যা আয় হয় তা রেখে বাকীটা জমা দেন। কিন্তু এভাবে চলা তার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
গতকাল রবিবার খালেকের চোখ দিয়ে অশ্রু পড়তে দেখে কাছে এগিয়ে যান সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ। তিনি কাছে যেতেই চোখ মুছে ফেলেন। এরপর সাজ্জাদ পারভেজের কাছে তার ছেলেদের অন্যায়ের কথাগুলো তুলে ধরেন। তখন সাজ্জাদ পারভেজ তাদের বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলা ইভেন্ট-৮৪ এর পক্ষ থেকে খালেকের কাছে থাকা সকল বোম্বাই মরিচ কিনে নেন। এরপর ওই মরিচ তাকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়।
সহকারি পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, তার ছেলেরা যা করেছে তা অত্যান্ত জঘন্যতম কাজ করেছে। তবে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে খালেকের জন্য একটি ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরসাথে তার তিনবেলা খাবার এবং পোশাক ও ওষুধের ব্যবস্থা করা হবে ইভেন্ট-৮৪ এর পক্ষ থেকে। এছাড়া তাকে বয়স্কভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
