হত্যাকান্ডে জড়িতরা সবাই কিশোর ! হত্যাকান্ডে জড়িতরা সবাই কিশোর ! - ajkerparibartan.com
হত্যাকান্ডে জড়িতরা সবাই কিশোর !

4:46 pm , February 13, 2025

উজিরপুরে ট্রলারচালককে অপহরণের পর হত্যা

শাকিল মাহমুদ বাচ্চু, উজিরপুর প্রতিবেদক ॥ বরিশাল জেলার শিকারপুর সন্ধ্যা নদীর খোয়াঘাটের ট্রলারচালক মাহাবুল হাওলাদার অপহরণের ১১ দিন পর ১১ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার নদী থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। আপন চাচাকে হত্যার পর দেহের সাথে ব্লক বেধে নদীতে ফেলে দেয় ভাতিজা সুজন হাওলাদার। এরপর সে নিজেই চাচাকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন ধরণের নাটক মন্ত্রস্থ করে পুলিশের সামনে। এমনকি  ট্রলার বন্ধ রেখে ৫ ফেব্রয়ারী  বুধবার সকালে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া বাজারে বিক্ষেভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে চাচাকে জীবিত উদ্ধারে আল্টিমেটানও দেয়।
ঘাতক সুজন মাহাবুলের আপন ছোট ভাই শহিদুলের ছেলে। নিহত মাহাবুল হাওলাদার বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম মুন্ডপাশা গ্রামের সেকান্দার আলী হাওলাদারের ছেলে।১২ ফেব্রুয়ারী বুধবার বিকালে বরিশাল জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে মাহাবুল হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ৬ জনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়। সাংবাদিকদের পুলিশ সুপার জানান, নিখোঁজের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়ার পর পরই পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এক পর্যায় ভিকটিমের ছেলের মুঠোফোনে একটি কল আসে মুক্তিপণ চেয়ে একটি কল আসে। পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দীন এর নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলাউল হাসান, বাবুগঞ্জ থানার ওসির দিক নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিরস্ত্র) আনোয়ারুল হক সহ সঙ্গীয় ফোর্সের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম রহস্য উদঘাটনে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে ২ জনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এক পর্যায় হত্যার কথা স্বীকার করে। এবং কারা কারা এ হত্যার সাথে জড়িত তাদের নাম বলে। এরপর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বাকী চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। তারা জানান, মাহাবুব হাওলাদার কে অপহরণের পর হাতে-পায়ে ইট বেঁধে তিন নদীর মোহনায় ফেলে দেয়া হয়। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃতরা হলো : উজিরপুর উপজেলার মুন্ডপাশা গ্রামের শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে সুজন হাওলাদার (২৫), মুলাদী থানার বড়ইয়া কাজীরচর এলাকার শামসুল হক হাওলাদার এর ছেলে নাঈম হাওলাদার(২৩), উজিরপুর থারার যুগিহাটি গ্রামের নজরুল হাওলাদারের ছেলে রিয়াদ হাওলাদার(২৩), মুলাদী উপজেলার খাসেরহাট কাজীরচর এলাকার আবুল খানের এর ছেলে সাব্বির খান (১৯), মুলাদী উপজেলার খালাশির চর এলাকার জুয়েল হাওলাদারের ছেলে তাজিম হাওলাদার(১৭) ও বরগুনা জেলার লবনগোলা গ্রামের আনোয়ার এর ছেলে তাসিন হাওলাদার (১৬)। বুধবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে নিহত  মাহাবুলের লাশ ময়না তদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ী উজিরপুর উপজেলার মুন্ডপাশা গ্রামে দাফন করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- পারিবারিক বিরোধ ও শিকারপুর ট্রলারঘাটের ইজারা নিয়ে বিরোধ হত্যাকান্ডের মূল কারণ। নিহত মাহাবুল বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন। তার আপন ভাই ও ভাইয়ের ছেলেদের সাথে বিরোধ ছিলো। নিহত  মাহাবুলের  বড় ভাই জামাল হোসেন ও ছোট ভাই শহিদুল হাওলাদার এক পক্ষে থাকার কারণে মাহাবুল কেনাঠাসা হয়ে পড়েন। খেয়াঘাটের ইজারা গতবছর পেয়েছিলো মাহাবুল। কিন্তু পরেরবার তার ভাই জামাল হোসেন পায়। কিন্তু এরপরেও স্থানীয় একজন ইউপি সদস্যের মধ্যস্থতায় নিহত মাহাবুল মাসে ১০দিন খেয়া পারাপারের অনুমতি পায়। আগামীতে যে টেন্ডার হবে সেখানে তার অংশগ্রহণের কথা ছিলো। অপর দুইভাই শহিদুল ও জামাল চাইছিলেন মাহাবুল যেন খেয়াঘাটের ইজারা না পায়। এ নিয়ে প্রকাশ্যেই ভাইদের মধ্যে বিরোধ চলছিলো। তবে হত্যারকান্ডের সাথে দুই ভাইয়ের সম্পৃক্তার বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে মাহাবুলের বাবা সেকান্দার আলী বাদী হয়ে মাহাবুলকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছিলো। ওই মামলায় সম্প্রতি মাহাবুল অব্যাহতি পায়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জেলা বিএনপির এক নেতার কাছে গিয়ে মাহাবুল তার অসহায়ত্বের কথা বলেন। এরপর ওই নেতার মধ্যস্থতায় শিকারপুর ঘাটে পুনরায় ট্রলার চালাতে শুরু করেন মাহাবুল। ১৪৩২ বাংলা সনের টেন্ডারে মাহাবুল অংশ নেবে এ আশঙ্কায় শহিদুলের সুজন ৩১ জানুয়ারী  শুক্রবার রাতে মাহাবুলকে আপহরণ করে। তাকে হত্যার পর শরীরে ব্লক বেধে নদীতে ফেলে দেয়।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি শেখ আমিনুল ইসলাম বলেন, উজিরপুর-বাবুগঞ্জ উপজেলার নদী পারাপারের ট্রলারচালক মাহাবুল হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৬ কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের মূল ঘাতক নিহতের ভাতিজা সুজন। সে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জাবানবন্দি দিয়েছেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT