4:23 pm , February 11, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ যত দিন যাচ্ছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে নগরীর ব্যাটারিচালিত অটোচালকরা। অবৈধভাবে বৃদ্ধি পাওয়া যানবাহনটির সাথে এখন নগরীর কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। এদের মধ্যে মালিক, চালকরাও রয়েছে। ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করা, যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ, জোর করে বাড়তি ভাড়া আদায়, মাদকসেবন করে যানবাহন চালানো, ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতা হিসেবে কাজ করা সহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীদের মতে, আগে যেমন তেমন ছিল কিন্তু বর্তমানে সড়কে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা প্রায় নিস্ক্রীয় হয়ে যাওয়ায় ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এসকল অবৈধ যান চালকরা। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। নগরীতে অটোচালকদের হাতে প্রতিদিন যাত্রীরা লাঞ্চিতও হচ্ছে। কিছু বললেই আন্দোলনের নামে সড়কে তৈরি করছে বিশৃঙ্খলা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে সমস্যা প্রকট হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। অন্যদিকে কঠোর অবস্থানে না গিয়ে উল্টো তাদের বৈধতা দিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
সূত্র মতে, ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলাচল করে প্রায় ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গেল প্রায় ১০ বছরে নগরীতে এই বাহনের সংখ্যা বেড়েছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। দীর্ঘদিন ধরেই নগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় চলছে অনিয়ম। ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইকের দাপটে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তায় নামলেই নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। নগরীজুড়ে ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চললেও সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত মাত্র ৭ হাজার ৬১০টি।
৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে অবৈধ যানের চালকরা। এরা যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে প্রতিদিন। বিগত এক সপ্তাহে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অটোচালকদের হাতে যাত্রীদের লাঞ্চিত হওয়া সহ একাধিক অভিযোগ মিলেছে।
নগরীর সাগরদী এলাকায় এমন ঘটনার শিকার যাত্রী রায়হান মুন্সি বলেন, ২দিন আগে বেলসপার্ক থেকে আটোতে চেপে সাগরদী আসার পর বাড়তি ভাড়া দাবি করে চালক। ওই অটোচালক জানায় লঞ্চঘাট থেকে রুপাতলী পর্যন্ত যা ভাড়া মাঝ পথে নামলেও একই ভাড়া দিতে হবে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে অটোচালকের হামলার শিকার হন তিনি।
নারী যাত্রী রুবিনা উম্মে ইয়াসমিন বলেন, চৌমাথা এলাকা থেকে নথুল্লাবাদ যাওয়ার জন্য একটি অটোতে চড়েন তিনি ও তার শিশু কন্যা। অটোচালককে একটু সাবধানে চালানোর অনুরোধ করলে অশ্লীর ভাষায় উত্তর দেয় সে। প্রতিবাদ করলে চড়াও হয় তার ওপর এবং মাঝ পথে অটো থেকে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়।
শেবাচিমে ভর্তি রিপন নামে এক দিনমজুর জানায়, গত ৮ ফ্রেব্রুয়ারী পলাশপুর এলাকার সড়কে হাটা অবস্থায় একটি অটো পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। কিছুটা আহত হয়ে অটোচালককে ধরে ফেলেন তিনি। এরপর ইল্টো আরো দুই থেকে তিনটি অটোর চালক একত্রিত হয়ে আহত অবস্থায় তাকে মারধর করে ফেলে রেখে যায়। এর বাইরে মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রেতা হিসেবে কাজ করা সহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে অটোচালকদের বিরুদ্ধে। পূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রনে থাকলেও এখন তারা কাউকে মানছে না। বাধা দিলে উল্টো আন্দোলনের নামে নগরীতে বিশৃঙ্খলা করছে। সম্প্রতি নগরীর চৌমাথায় পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে অটোচালকরা মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সচেতন মহলের মতে, অবৈধ এই যানটি যেমন ঝুঁকিপূর্ন তেমনি নিয়ন্ত্রনহীন। বৈধর তুলনায় অবৈধ এর সংখ্যা তিনগুন। সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয় করে এর সংখ্যা কমানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত হলুদ ইজিবাইকের লাইসেন্সের নাবায়নের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এতে চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নীতিমালার আওতায় আনা যাবে বলে মনে করেন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী। তিনি বলেন, ‘তাদেরকে আমরা সিস্টেম এর মধ্যে নিয়ে আসবো। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬১০ এর মধ্যে ১২শ এর লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ও মহানগর ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক শ্রমিক কল্যান সংগঠনের সভাপতি মোশাররফ গাজীর মুঠোফোনে একাধিকবার কলা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।