4:20 pm , February 11, 2025

লাশের সাথে ব্লক বেধে
উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ প্রতিবেদক ॥ উজিরপুর থেকে ১২দিন আগে নিখোঁজ হওয়া ট্রলারচালক মাহাবুল হাওলাদারের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে সন্ধ্যা নদীর মোল্লারহাট পয়েন্ট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মাহাবুল হাওলাদার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মুন্ডপাশা গ্রামের সেকান্দার আলী হাওলাদারের ছেলে। মাহাবুল হাওলাদারকে তার ভাই শহিদুল ইসলাম ও তার ছেলে সুজনসহ ৬ জন মিলে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ইতিমধ্যে হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ৩১ জানুয়ারি ট্রলারসহ উপজেলার রাহুতকাঠি খেয়াঘাট থেকে নিখোঁজ হন উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মন্ডপাশা গ্রামের সেকান্দার আলী হাওলাদারের ছেলে ট্রলারচালক মাহাবুল হাওলাদার। তার ভাই জামাল বাদী হয়ে ১ ফেব্রুয়ারী অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করে বাবুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় ‘ওইদিন রাত ১০টার সময় রাহুতকাঠি খেয়াঘাট থেকে অজ্ঞাতনামা ৭/৮জন যাত্রীবেশে তার ভাইকে ট্রলারসহ অপহরণ করে। এরপর পুলিশ নিখোঁজের সন্ধানে অভিযান চালায়। ঘটনার ১১দিন পর গত ১০ ফেব্রুয়ারী রাতে সন্দেহভাজন হিসেবে নিখোঁজের ভাতিজা সুজনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পুলিশ জানায়, আপন চাচাকে হত্যার পর দেহের সাথে ব্লক বেধে নদীতে ফেলে দেয় ভাতিজা সুজন হাওলাদার। এরপর ১১ দিন ধরে পুলিশের সাথে থেকে চাচাকে জীবিত উদ্ধারের নাটক সাজায় সে। এমনকি ট্রলার বন্ধ রেখে ৫ ফেব্রয়ারী বুধবার সকালে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে চাচাকে জীবিত উদ্ধারের অল্টিমেটামও দিয়েছিলো ঘাতক। সন্দেহ হলে পুলিশ ১০ ফেব্রুয়ারী রাতে সুজনকে তাদের হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে আপন চাচা মাহাবুব কে হত্যার কথা স্বীকার করে সুজন। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১১ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বাবুগঞ্জ ও মুলাদী থানা পুলিশ লাশের সন্ধানে নামে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবরী দল দীর্ঘক্ষন চেষ্টার পর মাহাবুবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারে সক্ষম হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বাবুগঞ্জ থানার ওসি শেখ আমিরুল ইসলাম। হত্যাকান্ডের সাথে আরো যারা জড়িত আছে তাদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হবে বলেন সাংবাদিক সম্মেলনে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সন্ধ্যা নদীর শিকারপুর ঘাটের ইজারাদার হিসাবে ট্রলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন মাহাবুল। গত কয়েক বছর ধরে ঘাটের ইজারা ও ঘাটে ট্রলার চালানো নিয়ে মাহাবুলের আপন দুই ভাই শহিদুল ও জামাল হোসেনের সাথে মাহাবুলের বিরোধ চলছিলো। বাবা সেকান্দার আলী বাদী হয়ে মাহাবুলকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছিলো। সেই মামলায় আদালত থেকে মাহাবুল অব্যাহতি পায়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাহাবুলের ট্রলার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এক বিএনপি নেতার মধ্যস্থতায় সে আবার ট্রলার চালানোর অনুমতি পায়। আগামীতে যাতে মাহাবুল খেয়াঘাটের ইজারা না পায় এ জন্য তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ভাতিজা সুজন। পরিকল্পনা মোতাবেক ৩১ জানুয়ারী শুক্রবার রাত ১১টার দিকে শিকারপুর সন্ধ্যা নদী থেকে তাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা মরদেহ উদ্ধার করতে পেরেছি। নিহতের ভাই শহিদুল ইসলাম এর ছেলে সুজন এর নেতৃত্বে এ হত্যাকা- হয়েছে। তবে সুজন এর বাবা শহিদুল ইসলাম এর সাথে জড়িত কিনা তা এখনও আমরা তদন্ত করছি।