4:51 pm , February 1, 2025

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নদীবন্দরে অপেক্ষমান লঞ্চ, জাহাজ ছাড়াও বাজার ও বাস টার্মিনাল এলাকার পাবলিক টয়লেটের বর্জ্য সরাসরি কীর্তনখোলা নদী এবং সংযুক্ত খালগুলোর সাথে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নগরীর বেশিরভাগ ড্রেনেজ ব্যবস্থাও বরিশালের ৭টি খাল ও নদী নির্ভর। কোথাও কোথাও বাজার এলাকার পয়:নিষ্কাশন সংযোগ বেড়িবাঁধের দেয়াল বেয়ে সরাসরি গড়িয়ে পড়ছে নদীতে । এতে ভয়ানকভাবে দূষণ হচ্ছে কীর্তনখোলা নদীসহ আশেপাশের এলাকা। এ নিয়ে সচেতন নাগরিকদের একাধিক অভিযোগ থাকলেও বরিশালের পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা বা উদ্যোগ কখনো চোখে পড়েনি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একসপ্তাহের মধ্যে উম্মুক্ত পাবলিক টয়লেটগুলো বন্ধ করার নোটিশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বরিশালের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন এসেই বরিশালের খালগুলো পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরু করেছেন। বিডিক্লিনকে সাথে নিয়ে তিনি নগরীর বেশ কয়েকটি খালে এই অভিযান চালিয়েছেন, যা সত্যি প্রশংসনীয়। কিন্তু এ অভিযান উদ্বোধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যার সমাধান হবেনা। গত ১ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকালে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীরও বিডিক্লিন কর্মীদের নিয়ে হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের সড়কে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালান। এ সময় তিনি বারবার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান। অথচ এই কাজগুলো পরিবেশ দপ্তরের হওয়া উচিত। নগরীর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে পরিবেশ দপ্তরের একটি নির্দেশনা থাকবে, যা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে সিটি করপোরেশন।
সরেজমিনে শনিবার বিকালে সদর উপজেলার চরকাউয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় দেখা গেছে উম্মুক্ত একটি পাবলিক টয়লেটের হলুদ বর্জ্য সরাসরি গড়িয়ে নদীতে পড়ছে। এই অংশে নদীর পানিও রীতিমতো হলুদ রং ধারন করেছে। কেননা, চরকাউয়া খেয়াঘাটের এই বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চলাচল। বিভিন্ন রুটে ৫০টির বেশি বাস ছাড়াও শতাধিক মোটরসাইকেল ও বাজারের মানুষ নিয়মিত ব্যবহার করছে এই পাবলিক টয়লেট। আবার মসজিদ ও মাদ্রাসার পয়:নিষ্কাশন সংযোগও নদীতে। তবে মসজিদের শুধু প্রসাব এর সংযোগ রয়েছে বলে দাবী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, বাজার ও বাস টার্মিনাল এলাকায় পাবলিক টয়লেট থাকবে এটা স্বাভাবিক। প্রয়োজনে একাধিক পাবলিক টয়লেট হতে পারে। সেজন্য নিয়মনীতি রয়েছে। এখানে চরকাউয়া বাস টার্মিনালে এটি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে তৈরি হয়নি। মানুষ চলাচলের পথে এই দৃশ্য বেড়িবাঁধ এলাকায় ভ্রমণে আসা মানুষের জন্য অসহনীয়। তারউপর এই বর্জ্য নদী দূষণ করছে। এটিকে এই মুহূর্তে বন্ধ করা না গেলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এটি মারাত্মক অপরাধ বলে জানান তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, পাবলিক টয়লেট মানেইতো জনগণের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। সেই টাকায় এটি রক্ষণাবেক্ষণ হওয়ার কথা। এখানে এটিতো সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তৈরি হয়েছে।
দু:খজনক হচ্ছে নগরীতে বেশিরভাগ সুশীলের বা ভদ্র সচেতন লোকের বাড়িঘরের পয়:নিষ্কাশন সংযোগ পাইপলাইন দিয়ে ড্রেনের সাথে রয়েছে। বিশেষ করে কাউনিয়া, দরগাবাড়ি এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য দেখেছি আমরা। ড্রেন থেকে এগুলো সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। আবার নগরীর বাইরে এরকম উম্মুক্ত পাবলিক টয়লেট বানিয়ে বাণিজ্য করছে এক শ্রেণীর নেতারা। এটা সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি শুধু নদী নয়, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
বিষয়টি জেনে ও দেখে নিজেও হতাশ বরিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান। তিনি বলেন, এটিতো মারাত্মক বিপর্যয় ঘটাবে। এ ধরনের পাবলিক টয়লেট যারা তৈরি করছে তাদের কি সামান্যতম বোধবুদ্ধি নেই এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এটিতো তার নিজের জন্যও ক্ষতিকর। বরিশাল সদর উপজেলায় এরকম যতগুলো পাবলিক টয়লেট আছে সব ঠিক করে নেওয়ার আহ্বান জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অন্যথায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।