পানি দিতে না পারলেও বিসিসি থেকে বলা হয় ‘ওয়াসা লাগবে না’ ! পানি দিতে না পারলেও বিসিসি থেকে বলা হয় ‘ওয়াসা লাগবে না’ ! - ajkerparibartan.com
পানি দিতে না পারলেও বিসিসি থেকে বলা হয় ‘ওয়াসা লাগবে না’ !

3:44 pm , January 26, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর পার হলেও এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি ওয়াসা। পানির বিল ও প্রভাব হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় ওয়াসা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বার বার প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিসি। এদিকে পানির সংকট মোকাবেলা যত্রতত্র সাবমারসিবল স্থাপন করায় এর প্রভাব পড়ছে ভূ-গর্ভস্থ্য পানিতে।
বরিশাল জেলা থেকে বিভাগে উন্নিত হয় ১৯৯৩ সালে। বিভাগীয় এই শহরটি সিটি কর্পোরেশনে উন্নিত হয় ২০০২ সালে। বিসিসির প্রতিষ্ঠালগ্নে এই নগরীর জনসংখ্যা ছিলো আড়াই লাখ আর এখন জনসংখ্যা ৬ লাখ। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে মাত্র ৬৮ বর্গকিলোমিটারের এই নগরীতে এতো বিশাল জনগোষ্ঠির পানির চাহিদা পূরণে ওয়াসার বিকল্প নেই। বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিকল্পনাবিদ মো: বায়জিদ বলেন, ২০০২ থেকে ২০২৫ সালে বরিশাল নগরীর জনসংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিন লাখ। এতো বিপুল জনগোষ্ঠির পানির চাহিদা পূরণে একটা ভিন্ন ডেডিকেটেট প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার। সেক্ষেত্রে ওয়াসা একটা সমাধান হতে পারে। তারা পানির সাথে পয়:নিষ্কাশন দেখবে। এছাড়া ভূ-গর্ভস্থ্য পানির বিপরীতে ওয়াসা সারফেস ওয়াটারের ব্যবহার করবে।
বরিশাল জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে পানির সংকট মোকাবেলায় সাবমারসিবল টিউবওয়েল স্থাপন করায় নগরীতে পানির স্তর গত দশ বছরে দ্বিগুনেরও বেশি নীচে নেমে গেছে। ইতিমধ্যে নগরীর জাগুয়া, কাশিপুর, চরবাড়িয়া, রায়পাশা, চরকাউয়া ইউনিয়ন এলাকায় পানির স্তর ১৫ ফুট থেকে ৪০ ফুট নীচে নেমে গেছে। এতে শঙ্কা প্রকাশ করে বেলা থেকে বলা হয়েছে অবিলম্বে সারফেস ওয়াটারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়াসার বিকল্প তারা দেখছেন না।
পরিবেশবিদ ও সামাজিক আন্দোলন নেতা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ওয়াসা এখন নগরবাসীর প্রাণের দাবী। ৬ লক্ষাধিক সিটি কর্পোরেশনবাসীর জন্য একটা স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ জরুরী। আমরা বহুদিন ধরে এবিষয়ে বলে আসলেও অজ্ঞাত কারণে রাজনীতিবিদরা এবিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। নগরবাসীর সুপীয় পানির চাহিদা মেটাতে ওয়াসার কোন বিকল্প নেই।
বেলার সমন্বয়কারী লিংকন গায়েন বলেন, বরিশাল নগরীতে ১৫ ফুটের বিপরীতে এখন ৪০ ফুটেরও নীচে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে। এখানে প্রায় ৪ হাজার সাবমারসিবল টিউবওয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। কেননা বিসিসি নগরীর শতকরা ৫৪ ভাগ এলাকায় পানি দিতে পারছে না। এ অবস্থায় ওয়াসা এখানে বড় প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের ভূÑগর্ভস্থ্য পানি আর থাকবে না। এমন হলে তা আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।
বিসিসিরি পানি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, ২০১৮ সাল থেকে বরিশাল নগরীতে ওয়াসা গঠনের চিঠি আসা শুরু হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এমন চিঠি এসেছে মোট ৬ বার। তারা বরিশালের পানির চাহিদা ও সরবরাহ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিলো। কিন্তু কোন বারই আমরা কোন তথ্য দেইনি। এমনকি ২০২২ সালে এখানে ওয়াসা প্রতিষ্ঠায় নেতিবাচক জবাব দিয়ে উত্তর পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয় ‘বরিশালে ওয়াসা গঠনের প্রয়োজন নাই।
বিসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদ, সাধারন মানুষ এমনকি বিসিসির কর্মীরাও। তাদের মতে পানির বিল বাবদ বছরে ১০ কোটি টাকার আয়কে বিসিসি বড় করে দেখছে, জনসেবা এক্ষেত্রে ছিলো উপেক্ষিত। পানি বিভাগ বিসিসির হাতছাড়া হলে তাদের ক্ষমতাও খর্ব হবে বলে তারা এটা করেনি।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, বরিশাল বিভাগের এই ৩২ বছর বয়সে ৫ জন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের দায়িত্ব ছিলো জনসেবা নিশ্চিত করা। এখন পাম্পেও পানি উঠছে না। এ অবস্থায় জনদাবি ওয়াসা প্রতিষ্ঠার কেউ উদ্যোগও নেয়নি। কারণ এটা হলে ওদের আয় কমে যাবে।
অন্যজন বলেন, বিসিসি তাদে ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক লাভের বিপক্ষে কখনোই অবস্থান নেয়নি। ওয়াসার জন্য আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। কিন্তু ওয়াসা এলে বিসিসির বিরাট আয় হাতছাড়া হয়ে যাবে, এটা তারা সহ্য করতে পারছে না। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের।
তাদের মতে বিসিসির পানি বিভাগ যদি ওয়াসার হাতে যায় তাহলে বরাদ্দ বাড়বে, পাশাপাশি জনভোগান্তি কমে যাবে। এতে আমরা এখন যারা পানি বিভাগে উন্নয়ন খাতে চাকরি করি তারা রাজস্ব খাতে অনেক সুবিধাও পেতাম। কিন্তু সিটি মেয়ররা কোনদিনই এটা চায়নি।
বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারি বলেন, বরিশালে ওয়াসা দরকার। সর্বশেষ সিলেটেও ওয়াসা হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আমাদের ভূÑগর্ভস্থ্য পানির স্তর অনেক নীচে নেমে গেছে। এটা আমাদের শহরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ওয়াসা থাকলে অনেক বড় বরাদ্দও আসে। স্থানীয় সরকার বিভাগে ইতিমধ্যে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের কাছ থেকে ওয়াসা প্রতিষ্ঠার প্রকল্প চেয়েছে, এটি দিলেই কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT