3:57 pm , January 24, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে বরিশালের বেলস পার্ক। নগরীর সবচেয়ে বড় এবং দৃষ্টিনন্দন উদ্যানটিতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর ঢল নামে। অথচ অযতœ আর অবহেলায় এটি এখন বেহাল দশায় পৌছেছে। উদ্যানের হাটার রাস্তায় অসংখ্য স্থানে টাইলস উঠে গেছে। যার কারণে প্রাতঃ এবং বৈকালীন ভ্রমণে যারা হাটাহাটি করেন তাদের জন্যে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য এখানে হাটাহাটি করা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। উদ্যানের পার্শ্ব সড়ক দখল হয়েছে ভ্রাম্যমান দোকানে। মাঠ পরিস্কার হয়না নিয়মিত, আবর্জনা ফেলা হয় ডিসি লেকে, নস্ট হয়ে গেছে একাধিক স্থানের বাতি, মাঠের পাশের বেঞ্চ সহ গ্রীল গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উঠতি বয়সি যুবক-যুবতিদের লাগামহীন চলাফেরায় নেই প্রাতঃভ্রমণকারীদের পরিবার নিয়ে চলাফেরার পরিবেশ। বারবার মাঠে মেলার হওয়ার পরিচ্ছন্ন করা হয় না। এক কথায় বরিশালের ঐতিহ্যবাহি বেলস পার্ক এখন তার পরিবেশ হারিয়েছে। এ বিষয়ে নগরীর সচেতন বাসিন্দাদের ক্ষোভের শেষ নেই। তারা বলেছে, মাঠের এমন অবস্থার জন্য দায়ী সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রসাশন উভয়ই। বরিশাল সিটির প্রয়াত জননন্দিত মেয়র শওকত হোসেন হিরন ও সাবেক মেয়র এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার এর হস্তক্ষেপে এই উদ্যানটি যে পরিবেশ পেয়েছিল তা এখন নেই। সিটি কর্পোরেশন পার্কের বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ করছে না। দ্রুত সার্বিক তত্ত্বাবধানে দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক মহল।
সূত্র মতে, এ উদ্যানে খেলার মাঠ, ওয়াকওয়ে, হেলিপ্যাড, গাছগাছালি ও লেক রয়েছে। উদ্যানের আয়তন প্রায় ৯ দশমিক ৪৭ একর। ১৮৯৬ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনডি বিটস বেল উদ্যানটি নির্মাণ করেন। তাঁর নামে নামকরণ হয়েছিল বেলস পার্ক। সেই বেলস পার্কের এখনকার অবস্থায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নগরে।
সরজমিনে দেখা গেছে, উদ্যানের পাশের হাটার রাস্তাগুলো সহ মাঠ শতাধিক দোকানে ভরে গেছে। নেই হাটাচলা সহ যানচলাচলের পর্যাপ্ত যায়গা। মাঠের চারপাশের হাটার রাস্তার টাইলগুলো ভেঙ্গে উঠে গেছে। কিছুদিন আগে এই ভাঙ্গা টাইলে হোচট খেয়ে পরে এক ব্যাক্তি স্ট্রোক করে প্রান হারিয়েছেন। পূর্বে মাঠের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা হলেও বর্তমানে তা মাঠের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে রেখে দিতে দেখা গেছে। শতাধিক দোকানের আবর্জনা ফেলতে দেখা গেছে ডিসি লেকে। ওয়াক ওয়ের বিভিন্ন স্থানের বাতি নস্ট হয়ে আছে। মাঠের পাশের ডিসি লেকের অংশের সিমানার অনেক অংশের গ্রীল কেটে চুরি করে নিয়েছে। পাবলিক টয়লেট পরিস্কার হয়না দীর্ঘদিন। নেই ব্যবহারের পানিও। একদিকে মাঠের এই অবস্থা, অন্যদিকে সকাল থেকে বেলস পার্কে স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের লাগামহীন চলাচলে বিব্রত হতে দেখা গেছে আসা দর্শনার্থীদের। বিকেল হওয়ার সাথে সাথে তাদের উৎপাতে একরকম চলাফেরা দুষ্কর হয়ে ওঠে। রাত ৮ টার পর এসকল শিক্ষার্থীদের বেলস পার্কে থাকার ওপর জেলা প্রসাশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তার বাস্তব কোন প্রয়োগ দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে বেলস পার্ক মাঠে এখন কেডিসি বস্তির বখাটেদের আড্ডা ও মাদক সেবনের দৃশ্য প্রকাশ্যে দেখা যায়। তাদের উৎপাতে ভদ্র নগরবাসী বেলস পার্কে পরিবার নিয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানায় একাধিক জনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।নিয়মিত বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রাতঃভ্রমণে আসা এক নারী অভিযোগ করেন, নানা শ্রেণির মানুষ উদ্যানের চারপাশে হাটেন। বিকেলে শত শত দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। কিন্তু এই স্থানটিতে এখন আর পরিবেশ নেই আসার মত। নানা সমস্যায় বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বেলস পার্ক তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। এ দায় সম্পূর্ন সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রসাশনের। ৫ আগস্টের পর বেলস পার্কের আশ পাশে হওয়া ক্ষতি এখনও ঠিক করা হয়নি। যা দুঃখজনক বলে জানান এই নারী। তিনি আরও বলেন, মাঠ পরিচ্ছন্নের মানসিকতা নেই বলেই বিভিন্ন কারনে মাঠ ব্যাবহার কারীরা ও দর্শনার্থীরা বেলস পার্ককে নোংরা করছে। হাটার রাস্তার টাইলস উঠেছে বিভিন্ন স্থানের যাতে প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছে। পাবলিক টয়লেটটি ব্যবহারের উপযোগি নেই। সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সীদের উৎপাতে পার্কে হাটা দুস্কর। তারা মাদক সেবন করছে প্রকাশ্যে। সব মিলিয়ে বেলস পার্ক এখন সাধারন নগরবাসীর জন্য প্রাতভ্রমনে আসার উপযোগীতা হারিয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশালের একাধিক সচেতন নাগরিক বলেন, ২০১১ সালে শহরের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন পার্কটির উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ নেন। পার্কের চারপাশে ওয়াকওয়ে, ফুলের চারা, বেঞ্চ, আলোকসজ্জা করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে। পার্কটি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এক ধরনের দায়িত্ব নিয়েই এসকল কাজ করেন শওকত হোসেন হিরন। তার পরে আর কেউ এতটা যতœশীল হয়নি পার্কের উন্নয়ন ও তদারকির বিষয়ে। বর্তমানে পার্কটি শেষ হয়ে যাচ্ছে নানা সমস্যায়। এখানে এখন কোন কিছু নস্ট হলে তা আর ঠিক হয়না। অন্যদিকে সকলেই পার্কটি ব্যাবহার করছে দায়িত্বহীনভাবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোন লাভ হয়নি বলে জানান তারা।
এর বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।