শেবাচিমের মেডিসিন বিভাগের দূরাবস্থা বর্ণনার বাইরে শেবাচিমের মেডিসিন বিভাগের দূরাবস্থা বর্ণনার বাইরে - ajkerparibartan.com
শেবাচিমের মেডিসিন বিভাগের দূরাবস্থা বর্ণনার বাইরে

3:59 pm , January 18, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৪ ইউনিটেই চিকিৎসাধীন রোগীরা চরম দূরাবস্থার মধ্যে রয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০২২ সালের শেষ দিকে হাসপাতালের মূল ভবন থেকে মেডিসিন ইউনিটটি পার্শ্ববর্তী ৫ তলা ভবনে স্থানান্তর করা হয়। ইতোমধ্যে এ ভবনে একাধিকবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রী সহ হাসপাতাল কর্মীদের তরফ থেকে যৌক্তিক আপত্তিকে বিবেচনায় না নিয়ে সাবেক পরিচালক মেডিসিন ইউনিট এখানে স্থানান্তর করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।
ভবনটির নকশা ও নির্মান পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট ছাড়াও একটি বিশেষায়িত মেডিসিন ইউনিট স্থানান্তরের ফলে গত প্রায় ৩বছর ধরে রোগী ও স্বজনদের চরম ভোগান্তি এখন সব বর্ণনার বাইরে। এমনকি ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত বেডের চেয়ে মেঝেতেই রোগী পড়ে আছে বেশী। মেডিসিন ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেড সংখ্যা মাত্র পৌনে ২শ হলেও সেখানে প্রতিনিয়ত রোগী থাকছেন ৭-৮শ পর্যন্ত। এমনকি পুরো ভবনটিতে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে ওই পাঁচতলা ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ড সমূহে অনেকটাই ভুতূড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মূলত ১০তলা এ ভবনটির যে ৫ তলা পর্যন্ত নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে, নকশা অনুযায়ী তা প্রশাসনিক কাজে এবং ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত আইসিইউ, ওপারেশন থিয়েটার হিসেবে ব্যবহারের কথা। কিন্তু কতিপয় বিবেকহীন কর্তার একগুয়েমীতে মূল পরিকল্পনা থেকে সরে এসে চিকিৎসাধীন রোগীদের দুর্ভোগই শুধু বৃদ্ধি করা হয়েছে। নির্মিত ওই ভবনটিকে মেডিসিন ওয়ার্ডে রুপ দিতে ইতোমধ্যে নকশা বহির্ভূতভাবে প্রায় ৩০টি জানালা সহ আরো বেশকিছু সংষ্কার এবং পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে গিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল পরিমান অথ্য ব্যায় হয়েছে। নতুন করে ওই ভবনটির শৌচাগার থেকে কমোড অপসারণ করে সেখানে প্যান বসানোর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এদিকে ৫শ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে নির্মিত বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে বিগত সরকার কোন ধরনের অবকাঠামো বৃদ্ধি না করেই ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করে। কিন্তু এর জন্য কোন জনবল মঞ্জুরী হয়নি এখনো। এমনকি ৫শ শয্যার অনুমোদিত জনবলের মধ্যে কর্মরত আছেন সাড়ে ৩শ রোগীর জনবল। অথচ শনিবারও এ হাসপাতালটিতে ১৮শর ওপরে রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত দুর্গন্ধ আর অন্ধকারে সুস্থ মানুষেরও দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা। জায়গার অভাবে এই শীতেও অনেক মুমূর্ষু রোগীর ঠাঁই হচ্ছে মেঝেতে।
আবার মেডিসিনের পেয়িং বেড ও পেয়িং কেবিন এখনো মূল ভবনে রয়ে গেছে। ফলে এখানকার চিকিৎসকদের রোগীদের দেখভাল করা সহ চিকিৎসা দিতে দুটি ভবনেই ছুটতে হচ্ছে। এতে করে মূল ভবনে পেয়িং কেবিন ও পেয়িং বেডে চিকিৎসাধীন রোগীরা অনেক জরুরী সময় যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। নতুন ভবনের মেডিসিন ইউনিটের রোগীদের পথ্য আসছে ৩শ মিটার দূরের মূল ভবনের ৫ম তলা থেকে। ফলে খোলা আকাশের নীচে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলোÑবালুর রাস্তায় ট্রলিতে ছোট-বড় হাড়ি চাপিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। পাশাপাশি মেডিসিন ওয়ার্ডে মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রীদের ক্লাস করার মত কোন কক্ষ না থাকায় বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপাড়া নিয়ে সংকট অব্যহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আইনগত জটিলতায় জড়িয়ে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তর এ ভবনটি নির্মানে ১০ বছরেরও বেশী সময় নেয়। করোনা মহামারীর শুরুতে তড়িঘড়ি করে ভবনটির কাজ শেষ করে সেখানেই ‘কোভিড-১৯ ওয়ার্ড’ চালু করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভবনটির ৬ষ্ঠ তলার নির্মান কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে ১শ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড চালু করার কথা রয়েছে। মূল পরিকল্পনাকে এড়িয়ে নতুন ভবনটিতে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট চালু করায় সু-চিকিৎসার নামে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীর ও মনের নিত্য নতুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারন রোগী ও স্বজনদের।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ মশিউল মুনির বলেন, কেন, কিভাবে মেডিসিন ওয়ার্ডটি প্রশাসনিক ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে তা এখন বলে লাভ নেই। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি মেডিসি ওয়ার্ডটিকে পরিপূর্ণ ওয়ার্ডে রুপান্তর করে চিকিৎসাধীন রোগীদের সেবার মান বৃদ্ধি করতে। ভবিষ্যতে নতুন ভবনটিতে রোগীর সু-চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সম্ভব সবকিছু করার কথাও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT