3:15 pm , January 11, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চার মাস পর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে শুরু হয় টিসিবি’র স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রয়। এ কারনে বরিশাল নগরী থেকে শুরু করে জেলার প্রতিটি উপজেলায় লাইন ধরে পণ্য সংগ্রহ করছেন উপকারভোগীরা। তবে এ মাস থেকে টিসিবি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিতরনে বাদ যাবে ভূয়া তথ্য প্রদানকারীরা।
সে ক্ষেত্রে মোট উপকারভোগীদের চারভাগের তিন ভাগ বাদ যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বরিশাল কার্যালয় সূত্র। ভূয়া তথ্যের টিসিবি কার্ড বাতিলের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন উপকারভোগীরা। সে ক্ষেত্রে যারা দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছে তাদের নতুনভাবে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি উঠেছে।
বরিশাল নগরীতে মোট উপকারভোগী রয়েছে ৯০ হাজার। এর মধ্যে ৬০ হাজার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। জেলার ১০ উপজেলায় এর সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার ৯২১ জন। ৯১ জন ডিলারের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মাঝে তিনটি পণ্য বিতরন করা হচ্ছে। ২ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল ও ৫ কেজি চাল যার বাজার মূল্য প্রায় ৯শ’টাকা। উপকারভোগীরা তা পাচ্ছেন মাত্র ৪৭০ টাকায়।
নগরীর চাঁদমারী এলাকায় টিসিবি’র পণ্য উত্তোলন করতে আসা মো. কাসেম, বাদলসহ একাধিক উপকারভোগী বলেন, ভূয়া তথ্যের কারনে একটি পরিবারে চার থেকে পাচটি কার্ড রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যারা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল সেই পরিবার থেকে শুরু করে তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও এভাবে কার্ড বিতরন করা হয়েছে। এ কারনে যারা দারিদ্র সীমার নীচে বাস করছেন তারা টিসিবি’র পণ্য থেকে ছিটকে পড়েছেন।
বিশেষ করে ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের হাতে এ কার্ড থাকায় তারা তাদের ইচ্ছেমত কার্ড বিতরন করেছেন। তারা এ কার্ড দিয়ে ভোটার বাগিয়েছেন। একই সাথে বিভিন্ন নামে কার্ড করে তা তাদের কাছে রেখে দেন। পরবর্তীতে তারা সেই কার্ড নিকটজন অথবা অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করেন। এ কারনে যারা এ পণ্য পাওয়ার উপযোগী ছিল তারা না পেয়ে যারা তিনবেলা বাজার করে চলেন তাদের ঘরে ঢুকেছে টিসিবি’র কার্ড।
তারা আরো অভিযোগ করেন, আবার কাউন্সিলর থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকও এ কার্ড বাণিজ্যে মেতে ছিলেন। এ কারনে ভূয়া তথ্যে বেশী কার্ড বিতরন হয়েছে। বর্তমান সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে সাধারণ জনগন। তারা আরো বলেন, ওই সকল কার্ড বাদ দেয়ার সাথে সাথে যারা এতদিন কার্ড পাননি সেই ধরনের দরিদ্র পরিবারে একটি করে টিসিবি’র স্মার্টকার্ড দেয়ার দাবি তোলেন। কারন তাদের একটি কার্ড সংসারে অনেক উপকার করবে।
চাঁদমারী এলাকার ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, তার অধীন বর্তমানে ২১শ’ উপকারভোগী কার্ডধারী রয়েছেন। এ মাসে মাত্র ৬শ’ উপকারভোগীরা স্মার্টকার্ডের অধীন পণ্য পাবেন। এর মূল কারন হচ্ছে বেশীরভাগ কার্ডে ভুল তথ্য দেয়া। আবার অনেক কার্ডের ঠিকানা ভুল, এমনকি পিতার নামও সঠিক না। এছাড়া একই পরিবারে একাধিক কার্ডের সন্ধান পেয়েছে তথ্য যাচাইকারীরা। এ কারনে ওই সকল কার্ড বাতিল করে ৬শ’কার্ড অনুমোদন পেয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিব মো. আরাফাত জানিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডে তিনশতাধিক কার্ড ছিল। যাচাই বাছাইতে বেশীরভাগ কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু কার্ড দেয়া হয়েছে। তবে তা বিতরনের তারিখ নির্ধারন করা হয়নি। কার্ড বাতিলের খবরে তার সাথে অনেকেই যোগাযোগ করছেন বাতিল হলে কিভাবে কার্ড করা যাবে। সে বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানিয়ে দেন। এ কার্ড আসার পর যারা সত্যিকার অর্থে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছে তাদের পরিবার থেকে আবেদন সংগ্রহের প্রেক্ষিতে কিছু কার্ড দেয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বরিশালের সহকারি পরিচালক প্রকৌশলী শতদল মন্ডল বলেন, এ মাস থেকে স্মার্টকার্ডে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু হবে। এতে করে তাদের কাজটি আরো স্বচ্ছতার সাথে করতে পারবে। স্মার্টকার্ড করার পূর্বে উপকারভোগীদের তথ্য-উপাত্ত পুংখানুপুংখভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে একই পরিবারে একাধিক কার্ড। নামে-বেনামে কার্ড থাকায় তিন ভাগের দুই ভাগ কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই শেষে যাদের সঠিক পাওয়া গেছে তাদের নামেই স্মার্টকার্ড তৈরী হচ্ছে। স্ব-স্ব ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সচিবদের মাধ্যমে এ কার্ড বিতরন করা হবে।