আওয়ামী লীগ নেতার এখনও দাপট আছে, দেখিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষককে ! আওয়ামী লীগ নেতার এখনও দাপট আছে, দেখিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষককে ! - ajkerparibartan.com
আওয়ামী লীগ নেতার এখনও দাপট আছে, দেখিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষককে !

3:54 pm , January 6, 2025

পিরোজপুর প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে হাফেজ ওমর ফারুক নামে এক প্রধান শিক্ষককে হুমকি দিয়েছিল পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক  আখতার হোসেন মাসুদ। এরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার মিরপুরে নিহত আশরাফুল ইসলাম হত্যা মামলায় চিংগুড়িয়া এনআইএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুককে গত ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত প্রধান শিক্ষকের পরিবারের দাবি তাকে হয়রানিমূলক আসামি করা হয়েছে। ঘটনার দিন ৪ আগস্ট ওমর ফারুক নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র রয়েছে।
গ্রেফতার হওয়ার পর মুঠোফোনে হুমকির অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিওতে আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান শিক্ষককে বলছেন ‘তোমারে যে তিনমাস সময় দেওয়া হইছে, তুমি যদি তিনমাসের ভিতরে ব্যবস্থা করো তাহলে তুমি ভদ্রভাবে চুপচাপ চলে যাবা। কেউ জানবে না। তিনমাস পরে যত রকমের নোংরা কেস আছে ঢাকা শহরে সব কেসে তোমার নামে কিন্তু প্রতি সপ্তাহে ওয়ারেন্ট যাবে। আমি ম্যানেজিং কমিটির….মারিনা। আমার ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশনেরও দরকার নাই। তোমার ওয়ারেন্ট যাবে, জামিন নিবা, সাসপেন্ড হবা। ওয়ারেন্ট যাবে, জামিন নিবা, সাসপেন্ড হবা। চলতেই থাকবে প্রতি সপ্তাহে। যতগুলা নোংরা নোংরা কেস আছে ঢাকা শহরে সবগুলায় তোমারে ঢুকাবো। আমার বিরুদ্ধে কথা বলা আমার বিরুদ্ধে দল করা। আমার প্রোডাকশন আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে সেই প্রোডাকশন আমি রাখবো কেন। তোমার তিনমাস সময় আছে, একুশে মে পর্যন্ত। বাইশে মে এর মধ্যে যদি তুমি গুছাইতে পারো, বাইশে মে এর পরে দেখবা আনে তোমার কি কি হয়। খলিল মীর (সাবেক সভাপতি) তো মরেগেছে ইসের চোটে, তুমি যাবা জেল খাটতে খাটতে। জামাত-শিবির কত কিছু বানাইতে পারবো আমি, দেখবা আনে কি কি পারে একটা উকিলে। সব সন্ধ্যার মধ্যে লিখিত জমা দাও চুপচাপ তিনমাসের ভেতরে চলে যাও। আর কোন কথা নাই’।
২০১৬ সালের ৩০ জুন ওমর ফারুক চিংগুড়িয়া এনআইএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তখন থেকেই বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আখতার হোসেন মাসুদ। চাকরির প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও দিন যত গড়ায় সভাপতির অনৈতিক চাহিদা এবং স্বৈরাচার আচরণ বৃদ্ধি পায়। প্রধান শিক্ষক সভাপতির অনৈতিক চাহিদা এবং স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে গেলে তিনি রোষানলে পড়েন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সাথে এ্যাডভোকেট আখতার হোসেন মাসুদের সম্পর্ক থাকায় তার নাম ভাঙ্গিয়ে নানা আপকর্ম শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সাল থেকে বিদ্যালয় থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার চাপ দিতে থাকেন সভাপতি। কথা না শোনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পিরোজপুর কোর্টে দুটি মামলা করেন। একটি মামলা থেকে প্রধান শিক্ষক অব্যাহতি পায়। অন্য মামলাটি চলমান রয়েছে। এ্যাডভোকেট আখতার হোসেন মাসুদ ঢাকা মিরপুরে বসবাস করেন। এ কারণে মিরপুরে নিহত আশরাফুল ইসলাম হত্যা মামলায় প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুককে জড়ায়।
এবিষয়ে চিংগুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক আব্দুর রহমান খান জানান, ঘটনার দিন প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তাকে ষড়যন্ত্র করে মামলায় আসামী করা হয়েছে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ৪ আগস্ট আমরা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ছিলাম। প্রধান শিক্ষকও আমাদের সাথে ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ফাতিমা খানম বলেন, ‘আমার স্বামী ওমর ফারুক একজন নিরীহ মানুষ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ভান্ডারিয়ায় ছিলেন।
এ ব্যাপারে ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমদ আনওয়ার বলেন, আশরাফুল ইসলাম হত্যা মামলায় শিক্ষক ওমর ফারুককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী আফিসার ও বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, আমার জানামতে সে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না। সে একজন কুরআনের হাফেজ। বিদ্যালয় ম্যনেজিং কমিটির সাবেক সভাপতির সাথে তার দ্বন্দ্ব থাকায় এ ঘটনা ঘটতে পারে।
পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া সার্কেল) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক মিরপুর মডেল থানায় দায়েরকৃত আশরাফুল ইসলাম হত্যা মামলার ৪০ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT