শতাধিক যাত্রীবাহী বাসের দৌরাত্মে ঝুঁকির মুখে বরিশালের চরকাউয়া শতাধিক যাত্রীবাহী বাসের দৌরাত্মে ঝুঁকির মুখে বরিশালের চরকাউয়া - ajkerparibartan.com
শতাধিক যাত্রীবাহী বাসের দৌরাত্মে ঝুঁকির মুখে বরিশালের চরকাউয়া

3:54 pm , January 4, 2025

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অবৈধ ও বৈধ যাত্রীবাহী বাসের দৌরাত্মে ঝুঁকির মুখে বরিশালের চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকা। যেকোনো মুহূর্তে এখানের খেয়াঘাট অংশ ডেবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসী ও নদী গবেষকদের। তাদের দাবী, বাসস্ট্যান্ডের কারণে এই এলাকা আরো বেশি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই গত ১৫ বছর ধরে ঘাট এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ড  সরিয়ে নেওয়ার দাবী জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ৪ জানুয়ারি শনিবার বরিশালের কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী চরকাউয়া খেয়াঘাটের পূর্বপাড়ে ট্রলার থেকে জেটিতে নামতেই দেখা গেলো জেটিতে রাখা যাত্রীদের বসার স্থান দখল করে মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য দান তুলছেন কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের দেখে মনে হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্র এবং খাদেম। রীতিমতো মাইক বসিয়ে তারা দানের আহবান জানাচ্ছেন এখানে। পাশেই ট্রলারে ওঠার জন্য অন্ত:সত্ত্বা সহ দুইজন নারী দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় আছেন পিছিয়ে পরা স্বজনের। ঘাটে বসার কাঠের বেঞ্চি দখল করে থাকা খাদেমদের ছবি তুলতে গেলেই তাড়া দ্রুত পালিয়ে যান।
ঘাট থেকে সোজা নাক বরাবর চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া গেল। এখানে ইতিপূর্বে সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি নিয়মিত অফিস করতেন। তিনি ছিলেন এখানকার বাস মালিক সমিতিরও সভাপতি। একটু সামনেই রয়েছে চরকাউয়া বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে কাটাদিয়া, গোমা, ডিসিরোড, নেহালগঞ্জ, চন্দ্রমোহন, বাউফল, পটুয়াখালী এবং ভোলাসহ অভ্যন্তরীণ মোট ৭/৮ টি রুটে নিয়মিত বাস চলাচল করছে। এসব বাসের বেশিরভাগই চলছে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই। এমনকি চালকদের বেশিরভাগ অংশের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স। এই বাসগুলো একেবারে খেয়াঘাটের কাছে এসে তাদের স্ট্যান্ড তৈরি করে যাত্রী ওঠানামা করছে। ফলে এই অংশে যেমন জটলা তৈরি হচ্ছে তেমনি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, প্রতিদিন বরিশাল থেকে চরকাউয়া খেয়াঘাট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের আসা-যাওয়া এ পথে। রোটেশন করে প্রতি ২০ মিনিট পর পর ৫ টি রুটে প্রায় শতাধিক বাস নিয়মিত চলাচল করে রাত আটটা পর্যন্ত। এই বাসগুলোর জন্য নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে দূরে পৃথক টার্মিনাল হওয়া খুবই জরুরী বলে জানান তারা।
যদিও নদী তীরবর্তী প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধ করা হয়েছে এবং এতে করে কিছুটা হলেও ঝুঁকিমুক্ত এই এলাকা। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী,  বাঁধের নীচ দিয়ে বেশ কয়েকটি ছিদ্র রয়েছে যা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এই ছিদ্র পথে স্রোতের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে  বলে জানালেন চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ব্যবসায়ী ইউসুফ মৃধা। তিনিসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর দাবী, এই বাস টার্মিনাল এখানে থাকলে আমাদের ঝুঁকি বেশি। স্থানীয়দের সাথে সহমত পোষণ করে নদী গবেষক ও উন্নয়ন সংস্থা রান এর পরিচালক রফিকুল আলম বলেন, চরকাউয়ার ওই অংশটি দেখে এটা স্পষ্ট যে এটি ঝুঁকিপূর্ণ এখন। মসজিদ-মাদ্রাসা ও দোকান-পাটগুলো ওখান থেকে সরিয়ে নেয়া খুবই জরুরী। আর বাস টার্মিনালটি এই ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এই অংশের তিনদিকে ভাঙনের ফলে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এখন এটি খুবই দুর্বল এবং অনেকটাই তীর আকৃতি ধারণ করে আছে। তীরের মাথায় রয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসা, খেয়াঘাট এবং বাস টার্মিনাল। ফলে মাথার উপর চাপ পড়ছে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে বেড়িবাঁধ তৈরির কারণে নদীর স্বাভাবিক ভাঙন প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে সামান্য ছিদ্র বা গর্ত পেলেই সেখানে আঘাত করছে স্রোতের তীব্রতা। ফলে এই অংশ যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন  হতে পারে বলে আশঙ্কা  রফিকুল আলমের।
এ বিষয়ে বরিশালের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নবনিযুক্ত উপ পরিচালক জাবেদ ইকবাল বলেন, আমিতো মাত্র দু-দিন  হলো দায়িত্ব পেয়েছি। তবে চরকাউয়া ঝুঁকিপূর্ণ বলেই ওখানে বেড়িবাঁধ তৈরি হয়েছে। শুনেছি ওখান থেকে বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের সুপারিশ করেছিলো পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ নিয়ে বাস মালিক সমিতির সাথে বৈঠকও হয়েছে প্রশাসনের। এখনকার অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি ঐ স্থানটি ঘুরে দেখে বিস্তারিত বলতে পারবো। আগামী কর্মদিবসেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT