3:14 pm , January 4, 2025
মো. জসিম জনি, লালমোহন প্রতিবেদক ॥ লালমোহন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন অনিয়ম-দুর্নীতি করে কোটি টাকার বাণিজ্য করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে বরাদ্দকৃত ক্ষুদ্র মেরামত, রুটিন মেইনটেন্যান্স, স্লীপসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
বরাদ্দকৃত সকল খাতের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়ে নিতেন। কোন কোন বরাদ্দের অর্থ প্রধান শিক্ষকদের না বলেই গায়েব করে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার ২১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার এমন বাণিজ্যের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দায়ের হলে বিভাগীয় তদন্তও হয়। তবুও সকল অভিযোগ চাপা দিয়ে তিনি টানা সাড়ে ৩ বছর বহাল তবিয়তে রয়েছেন লালমোহনে। তার আত্মসাতের বড় একটা অংশ চলে যেতে বিগত সরকারের রাজনৈতিক তহবিলে। যার কারণে ওই সময় কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না।
এই অফিসার লালমোহনে যোগদানের পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫-২০ বছরের ভবনগুলো আগের দলীয় কর্মীদের গোপন নিলামে ভেঙ্গে নিতে সহায়তা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভবনগুলো ক্লাস করার উপযোগী থাকলেও সেগুলো ভেঙ্গে নেওয়ায় একাধিক স্কুলে ক্লাস করতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে এখনো। অনিয়মের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের হয়। এছাড়া ২০২২ সালে কালমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আকতার হোসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলন শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দকৃত ২০২০/২০২১ ও ২০২১/২০২২ অর্থ বছরের ক্ষুদ্র মেরামতের আওতায় প্রায় ৯২ লাখ ও রুটিন মেইনটেন্যান্স এর থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকা এবং অন্যান্য বরাদ্দ থেকে ৭ লাখ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি প্রধান শিক্ষকদেরকে ডেকে এনে ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর রেখে অর্ধেক টাকা কখনো বা তার চেয়ে কম টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার ভয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। কোন ভুক্তভোগী এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করলে তদন্তের পূর্বেই মিটিং ডেকে প্রধান শিক্ষকদের এ ব্যাপারে কেউ যেন মুখ না খোলে তা সতর্ক করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক জানান, প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন বরাদ্দ হয়। এসব বরাদ্দের বড় একটা অংশ রেখে দিতেন তিনি। অফিসের ও শিক্ষককের মধ্য থেকে তার টাকা কালেকশনের জন্য নির্ধারিত লোক ছিল। তাদেরও একটি ভাগ থাকতো এই অর্থ থেকে। এছাড়া শিক্ষকদের ঋণ ফরমে স্বাক্ষর করতে টাকা, ট্রেনিং এর নাম দেওয়ার জন্য টাকা আদায় ছিল তার নিয়মিত। বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যেয়ে শিক্ষকদের কারণে অকারণে শোকজ করে প্রতিদিন তার একটা বড় আয় ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে গত বছরও এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের হাতে তিনি অফিসেই লাঞ্ছিত হয়েছিলেন।
অভিযোগের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য পত্র দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও। কিন্তু তৎকালিন অদৃশ্য নির্দেশে এসব তদন্ত থমকে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান মিলনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সবগুলোই মিথ্যা। আমি কোন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নাই।