শেবাচিমে পরিচালকের কঠোর নজরদারীতে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে শেবাচিমে পরিচালকের কঠোর নজরদারীতে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে - ajkerparibartan.com
শেবাচিমে পরিচালকের কঠোর নজরদারীতে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে

3:56 pm , December 29, 2024

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশপথে সকালবেলা এখন আর কোনো হকারদের ভিড় ও যানবাহনের জটলা নেই। দুপাশের ফাঁকা মাঠে নেই কোনো ময়লা আবর্জনার স্তূপ। আবার হাসপাতালের ভিতরেও দেয়াল, ফ্লোর ও সিঁড়িতে নেই কোনো ময়লা আবর্জনা বা পান-সিগারেটের দাগ। চমৎকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বস্তির ছোঁয়া চোখে পড়ে রোগী ও স্বজনদের চোখেমুখে। যদিও বাইরের পরিবেশ তিনটার পরেই আবার আগের মতো হয়ে যায়।  আর এজন্য দায়ী বিগত সময়ের সুবিধাভোগী একটি চক্র বলে জানালেন অনেকেই ।
সরেজমিনে ২৯ ডিসেম্বর রবিবার সকালে এ চিত্র দেখা গেছে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) ঘুরে। তবে এখনো বেশকিছু অনিয়ম স্পষ্ট টিকিট কাউন্টার ও মেডিসিন, ক্যান্সার, চক্ষু সহ কয়েকটি বিভাগে। এসব বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা এখনো বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মনোনীত লোকজন। টেকনোলজিস্ট না থাকায় অনেক জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে এখানে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের সুযোগে অযোগ্য লোক দখল করে আছে বিভিন্ন বিভাগ।
বিগত ১৫ বছরে ধরে এই হাসপাতালে সব মিলিয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে। যা দূর করা পরিচালকের একার পক্ষে কঠিন।
সরেজমিনে প্রায় ঘন্টা তিনেক হাসপাতাল চত্বর ঘুরে প্রথমেই চোখে পড়ে টিকিট কাউন্টারের অনিয়ম। নারী ও পুরুষের পৃথক তিনটি করে মোট ছয়টি এবং নারীদের অংশে জরুরী প্রয়োজনে আরো একটি নিয়ে মোট সাতটি কাউন্টার থাকলেও টিকিট বিক্রি করছেন মাত্র চারজন। তাদের একজন আবার হঠাৎ উঠে চলে গেলেন। সকাল আটটা থেকেই এখানে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীদের ভিড়। চারটি দীর্ঘ সারিতে বিভক্ত দুইটি লাইনে নারী এবং দুইটি লাইনে পুরুষ। টিকিটের দাম মাত্র ১০ টাকা। তবে ভর্তি রোগীদের জন্য ১৫ টাকা লেখা আছে দেয়ালে। আউটসোর্সিং এর ২৭০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী।  ৫ আগস্টের পর অনেকে পালিয়ে যাওয়ায়, এখন তাদের স্থান দখল করেছে বিভিন্ন কর্মচারীদের আত্মীয় স্বজন। এই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কখনো বদলি বিধান না থাকায় তারাই হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি দাপটে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একটু পরপরই বাঁশি বাজিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন আনসার সদস্য রিয়াজ ও নাসির। মাঝেমধ্যেই তারা সিরিয়াল ভেঙে টিকিট নিয়ে দিচ্ছেন অন্য রোগীকে। আবার কাউন্টারে বসা টিকিট বিক্রেতা একজন হতদরিদ্র মায়ের থেকে ২০ টাকা নিয়ে আর টাকা ফেরত দিলেন না। তার অপরাধ মহিলা কাউন্টারে না যেয়ে সে পুরুষ কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছে। এমন বেশকিছু স্বজনপ্রীতি ও ছোটো-ছোটো অনিয়মের মধ্যে অন্যতম আরো একটি অনিয়ম হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের সচেতনতার অভাব। বাদাম বা পানের পিক, থুথু যত্রতত্র ফেলছেন তারা। এজন্য একজনকে হাতেনাতে ধরে প্রশ্ন করতেই ছুটে এলেন তার সাথের আরো কয়েকজন। তারা অনেকটা অভিযোগ তুলে বললেন, একটা ময়লা ফেলার ডাস্টবিন নেই এই ফ্লোরে। তাহলে কোথায় ফেলবো বলুন। আশেপাশে বেসিন বা পানির ব্যবস্থা থাকা জরুরী ছিলো।
কয়েকজন রোগী ও স্বজনদের পরামর্শ, এই টিকিট কাউন্টার হাসপাতাল ভবনের বাইরে হলে ভালো হয়। মাঠের ভিতরে সড়ক সংলগ্ন দেয়াল ঘেঁষে ১০/১৫টি টিকিট কাউন্টার হতে পারে। মাঠের দুইপাশে দুটো পাবলিক টয়লেট সুবিধা তৈরি হতে পারে। হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থা দিয়েই হাসপাতালের বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা এখানে নেই আমাদের বাইরে ছুটতে হয়। এই সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে প্রয়োজনে টিকিটের দাম আরো ১০ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করতে পারে। আমরা তাও দিতে রাজী। তাদের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করে বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিলো সেনাবাহিনী থেকে একজন পরিচালক। আমরা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের কাছ থেকে তা পেয়েছি। এখন এই পরিচালক এসেই সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত বরিশালের স্থানীয় বাসিন্দা যারা এই হাসপাতাল ও বরিশালের উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন, কাজ করেন তাদের সাথেও বসতে হবে। এখানে দাঁত, চক্ষু এর  জরুরী চিকিৎসা নেই।
হাসপাতালের পা থেকে মাথা পর্যন্ত শুদ্ধিকরণ অভিযান চালাতে হবে। এজন্য পরিচালককে কঠিন হতে হবে। প্রয়োজনে বরিশালের স্থানীয় বাসিন্দা এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নিয়ে হলেও এই অভিযান খুবই জরুরী। কেননা, স্বৈরাচারের দোসরদের স্ব-স্ব স্থানে বসিয়ে রেখে কোনো উন্নয়ন সম্ভব হবেনা বলে জানান কাজী মিজানুর রহমান।
এ বিষয়ে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীর বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও টেকনোলজি সমস্যা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে ঢাকায় যেয়ে করণীয় সবকিছু করবো আমি।
আরেকটু সময় দিন। চিকিৎসক সমস্যা দূর করার পরই আমি বরিশালের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করবো এবং এই হাসপাতালের উন্নয়নে করণীয় নিয়ে  তাদের পরামর্শ অবশ্যই নেব।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT