মুলাদীতে অবৈধ দখলে চার হাজার একর খাস জমি মুলাদীতে অবৈধ দখলে চার হাজার একর খাস জমি - ajkerparibartan.com
মুলাদীতে অবৈধ দখলে চার হাজার একর খাস জমি

3:51 pm , December 29, 2024

মুলাদী প্রতিবেদক ॥ মুলাদীতে কর্মকর্তাদের তদারকীর অভাবে প্রায় ৪ হাজার একর খাস জমি অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্দোবস্ত ছাড়াই এসব সরকারি জমিতে ঘর-বাড়ি, দোকান, পাকা স্থাপনা, কৃষি ফসল করে দখল করে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। কেউ কেউ ভুয়া খতিয়ান খুলে জমির মালিকানা দাবি করে ভোগদখল করছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের অবহেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকার জমি সরকারের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে মুলাদী পৌরসভার মধ্যেই প্রায় ৫০ একর খাস জমি বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। যার মূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা। গাছুয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) খাস জমি দখল হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)) কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার একর খাস জমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে গত ৪ বছরে আশ্রয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৪শ ঘর নির্মাণ করে প্রায় ১০ একর জমি ভূমিহীনদের নামে দলিল দেওয়া হয়। এছাড়া প্রায় এক হাজার একর জমি বিভিন্ন সময়ে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দিয়েছে সরকার। খাস জমির একটি বড় অংশ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই প্রভাবশালীরা দখল নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার আড়িয়ালখাঁ নদ, জয়ন্তী ও নয়াভাঙনী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা চর, বিভিন্ন হাট বাজারে সরকারের জমি, খাল-বিলসহ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। হাট-বাজারের পাশে থাকা নদী ও খাল ভরাট করে সরকারি জমি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নদীতে জেগে ওঠা চরে অনেকে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দখল করেছেন।
উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের খাসেরহাট বন্দরের ব্যবসায়ী নুরু হাওলাদার বলেন, খাসেরহাট বন্দরে প্রায় ৪ একর খাস জমি রয়েছে। এসব জমি বন্দোবস্ত ছাড়াই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দোকান-পাট নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন। প্যাদারহাট বন্দরে কয়লার খালের দুই পাড় দখল করে দেড়-দুইশ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্যাদারহাট উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক একর জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ওই বন্দরের একটি ঘাট দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন এক ব্যবসায়ী। এছাড়া সোনামদ্দিন বন্দর, নোমরহাট, কুতুবপুর বাজার, আলীমাবাদ বাজার, চরপদ্মা মাদ্রাসারহাটসহ বিভিন্ন হাটের খাস জমি দখল হয়ে গেছে।
মুলাদী পৌরসভার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, মুলাদী পৌরসভার জয়ন্তী নদীর দুই পাড়ের সরকারি জমি দখল করে তিন শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকান নির্মাণের ফলে নদী ছোট হয়ে গেছে এবং ধীরে ধীরে নদীটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মুলাদী-হিজলা সংযোগ সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৪০ একর খাস জমি রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু নেতারা যৌথভাবে একটি ভুয়া খতিয়ান খুলে প্রায় ২৬ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। ওই খতিয়ান বাতিল করার জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর গাছুয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. আলাউদ্দিন জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন। কিন্তু খতিয়ান বাতিল কিংবা সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়নি। এছাড়া মুলাদী বন্দর রক্ষা বাঁধের উপরের জমি, বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা ঘাট ও গণশৌচারগার (পাবলিক টয়লেট) দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. ফিরোজ খান বলেন, উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার একর খাস জমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে কমপক্ষে ১ হাজার একর জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার যোগ্য। এছাড়া আরও প্রায় ৩ হাজার একর খাস জমি রয়েছে, যা কিছুটা নিচু কিংবা চর আকারে রয়েছে। এসব জমি বন্দোবস্ত না দেওয়া হলেও কেউ কেউ ভোগ-দখল করছেন। কিন্তু কেন বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে না তা জানা নাই তার।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরাগ সাহা তদারকীর অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, খাস জমি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, খাস জমি দখলের বিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন চাওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সরকারি জমি উদ্ধারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT